সংঘর্ষের পরে টহল বর্ধমানের কপিবাগানে। —নিজস্ব চিত্র।
কু-কথা থেকে কোলাকুলি।
তাঁরা বিরোধী, কিন্তু দেখা হতেই পরস্পরকে জড়িয়ে ধরলেন। হাত মেলালেন। শরীর-স্বাস্থ্যের খোঁজ নিলেন। তারপরে বর্ধমান-দুর্গাপুরের বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষ ও তৃণমূল প্রার্থী কীর্তি আজাদের পথ বেঁকে গেল দু’দিকে। কয়েক মিনিটের মধ্যেই সৌজন্য বদলে গেল ‘সংঘর্ষে’। মন্তেশ্বরের তুল্যা গ্রামে রক্তারক্তি, গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ উঠল দু’তরফেই। পরে বর্ধমানের কালনা গেট-কপিবাগানেও অশান্তি বাধে দু’দলে।
সোমবার দিনভর বুথে বুথে এজেন্ট বসাতে দৌড়ন দিলীপ। জেলা সভাপতি অভিজিৎ তা-কে নিয়ে সকাল ৮টা নাগাদ বর্ধমানের নারায়নদিঘির বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন। সঙ্গে ছিল সংবাদমাধ্যম, তাঁর নিরাপত্তা রক্ষী আর রাজ্য পুলিশের একটি গাড়ি। বর্ধমান শহরের কঞ্চননগরর, রথতলা-সহ একাধিক রাস্তায় ঘণ্টাখানেক চক্কর কাটেন। খবর আসে মেমারি ২ ব্লকের বোহারে তাঁদের কর্মীকে মারধর করা হয়েছে। সেখানে ছোটেন। তারপরে ভাতার যাওয়ার পথে মন্তেশ্বরে কুসুমগ্রামে দেখা হয়ে যায় কীর্তি আজাদের সঙ্গে। গাড়ি থেকে নেমে কীর্তির সঙ্গে হাত মেলান। দু’চার কথা বলার পরেই পরস্পরকে জড়িয়ে ধরেন। দিলীপ বলেন, “তৃণমূল প্রার্থী আমার পূর্ব পরিচিত। এই গরমে তাঁকে ঘুরতে দেখে গাড়ি থামিয়ে তাঁর কাছে যাই। গিয়ে বলি, এই গরমে ঘুরে বেড়ানোর দরকারটা কী?’’ আর কীর্তির দাবি, “গাড়ি থেকে নেমে আমিই ওঁকে দাঁড় করাই। তিনি নেমে আসেন। হাত মেলান, পরস্পরকে জড়িয়ে ধরি। এটা শিষ্টাচার।” তার পরেই অবশ্য বদলে যায় পরিস্থিতি।
মন্তেশ্বরের তুল্যা গ্রামের ৫৬, ৫৭ নম্বর বুথে সকাল থেকেই এজেন্ট বসতে না দেওয়ার অভিযোগ করছিল বিজেপি। শ্রীমন্ত বাগ নামে বিজেপির এজেন্ট তাঁকে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। সিজনা গ্রামের বুথেও একই অভিযোগ ওঠে। সেখানে গিয়ে তুল্যা গ্রামের কথা শোনেন দিলীপ। গ্রামে ঢুকতেই তৃণমূল কর্মীরা গাড়ি আটকে ‘জয় বাংলা’, ‘গো ব্যাক’ স্লোগান দিতে শুরু করেন। এগিয়ে যান দিলীপের নিরাপত্তরক্ষীরাও। ইট ছোড়া শুরু হয়। লাঠি হাতে কয়েক জন গাড়ির উপরে চড়াও হন। তৃণমূলের দাবি, চার কর্মী জখম হয়েছেন। দিলীপের গাড়ি বেরিয়ে যেতেই স্থানীয়রা সংবাদমাধ্যমের গাড়িতে হামলা চালায়। তাতে অনেকগুলি গাড়ি ভাঙচুর হয়।
শুশুনিয়া অঞ্চলের যুব সভাপতি হালিম খান বলেন, ‘‘দিলীপ ঘোষ এসে যা মন্তব্য করেন তাতে লোকজন খেপে যান।’’ দিলীপ চলে যাওয়ার পরেই কীর্তি, সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী যান এলাকায়। কীর্তি বলেন, ‘‘দিলীপ ঘোষ পরিকল্পিত ভাবে এই ঘটনা ঘটিয়েছেন। মানুষকে উত্ত্যক্ত করছেন।’’
আর দিলীপ বললেন, “এ তল্লাটে বিরোধীদের এজেন্ট বসানো দূরে থাক, ভোটাধিকার পর্যন্ত ছিল না। এ বার তৃণমূলের সন্ত্রাস বন্ধের জন্য আমি রাস্তায় আছি। সন্ত্রাস রুখেও দিয়েছি। সে কারণেই আমার উপর রাগ।’’
বিকালে বর্ধমানের কালনা গেট-কপি বাগানেও তৃণমূলের ‘হামলা’র মুখে পড়েন দিলীপ। তাঁর কনভয়ে থাকা একটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। ইটের আঘাতে একজন নিরাপত্তারক্ষীও জখম হন। তৃৃণমূলের পাল্টা অভিযোগ, নিরাপত্তা রক্ষীরা লাঠিচার্জ করে। প্রতিবাদ করতে গেলে সংঘর্ষ বেধে যায়। তৃণমূলের দাবি, এক মহিলা, নাবালিকা-সহ আটজন আহত হয়েছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কপিবাগান শিশু শিক্ষা কেন্দ্রে ২১৩ ও ২১৪ নম্বর বুথে দুপুরের পরে আসেন দিলীপ। ভোটকেন্দ্রে আসা ও যাওয়ার সময় তাঁর অনুগামীরা জয় শ্রীরাম স্লোগান দেন। রাস্তার ধার থেকে তৃণমূলের লোকজনও জয় বাংলা স্লোগান দেন। উত্তপ্ত হয়ে উঠে এলাকা।
তৃণমূলের অভিযোগ, তখনই দিলীপের নিরাপত্তা রক্ষীরা তৃণমূলের লোকজনের উপরে লাঠি চালান। আহত শেখ সাহামত, সাফিয়া বিবি শেখরা বলেন, ‘‘শান্তিতেই ভোট হচ্ছিল। কোনও কিছু না দেখেই দিলীপবাবুর কর্মীরা আমাদের মারধর করেন।’’ পরে সেখানে যান কীর্তিও।
তিনি বলেন, “ধমক, চমক আর সন্ত্রাস তৈরি করাটাই বিজেপির একমাত্র উদ্দেশ্য। সে জন্যই আমাদের কর্মীদের মারধর করা হয়েছে।”
আর দিলীপের দাবি, “রাজ্য পুলিশের সামনেই হামলা করা হয়েছে। পুলিশ একেবারেই নিষ্ক্রিয় ছিল।”