প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।
দফায় দফায় আজ বিজেপি নেতৃত্বের আক্রমণের শিকার হলেন রাহুল গান্ধী। এক দিকে নাম না করে রাহুলকে ব্যর্থ রাজনৈতিক নেতা হিসাবে প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। অন্য দিকে, রাহুল গান্ধীর ‘শক্তি’-মন্তব্যে হিন্দু ধর্মাবলম্বী ও দেশের মহিলাদের ভাবাবেগ আহত হওয়ার অভিযোগে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হল বিজেপি। রাহুলকে শাস্তি দেওয়া ও দেশের মানুষের কাছে ক্ষমা চাওয়ানোর জন্য কমিশনে দাবি তুলেছে বিজেপি।
সেই সঙ্গে আজ তৃণমূলকেও খোঁচা দিয়েছেন মোদী।একটি বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমের অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় সংস্থার অপব্যবহারের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আগে লোকের মনে প্রশ্ন ছিল, কেন ইডি-সিবিআই ক্ষমতাবানদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করে না? আর এখন ক্ষমতাবানেরা প্রশ্ন করেন, কেন ইডি-সিবিআই তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে? এরা ব্যবস্থা নিচ্ছে বলেই কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেসের মন্ত্রীদের ঘর থেকে টাকার পাহাড় উদ্ধার হচ্ছে।’’
আজ সকালে ‘স্টার্ট আপ’ সংক্রান্ত একটি সরকারি অনুষ্ঠানে রাহুলের উদ্দেশে নাম না করে আক্রমণ শানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘‘বহু ব্যক্তিই স্টার্ট আপ শুরু করার চেষ্টা করেন। রাজনীতিতেও অনেকে চেষ্টা করেন। কিন্তু তাঁদের (রাজনীতিকদের) সঙ্গে আপনাদের পার্থক্য হল, আপনারা ব্যর্থ হলে নতুন উদ্যোগের প্রশ্নে পরীক্ষানিরীক্ষা করে তবে এগোন।’’ বিজেপির নেতৃত্বের ব্যাখ্যা, গত দু’দশক ধরে কংগ্রেস যে রাহুল গান্ধীকে নেতা হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে, তাই সম্ভবত বোঝাতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
অন্য দিকে, ‘শক্তি’ বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না রাহুলের। মোদীর পিছনে কপোর্রেট সংস্থা, ইডি, সিবিআইয়ের মতো শক্তির আঁতাঁত রয়েছে বলে গত রবিবার বোঝাতে চেয়েছিলেন রাহুল। কিন্তু শক্তির সঙ্গে হিন্দু ধর্ম ও দেশের নারীশক্তির সম্পর্ক নিয়ে সরব হন বিজেপি নেতৃত্ব। রাহুল ওই মন্তব্য করে হিন্দু ধর্ম ও মহিলাদের অসম্মান করেছেন—এই অভিযোগে আজ কমিশনে যান বিজেপি নেতারা। পাশাপাশি রাহুলের ‘‘রাজার আত্মা ইভিএম-এ আছে’ মন্তব্যে ইভিএমের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ভোটারদের মনে বিভ্রম সৃষ্টির চেষ্টা হয়েছে বলে সরব হয়েছে বিজেপি।
তবে শক্তি বিতর্কের রেশ থামার আগেই আজ উদ্ধব ঠাকরে গোষ্ঠীর শিবসেনা নেতা সঞ্জয় রাউত মোগল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর তুলনা করে নতুন বিতর্ক উস্কে দিয়েছেন। আজ দুপুরে মহারাষ্ট্রের ওই নেতা বলেন, ‘‘শিবাজি জন্মেছিলেন মহারাষ্ট্রে। আর গুজরাতে নরেন্দ্র মোদীর গ্রামের কাছাকাছি এলাকায় জন্মেছিলেন ঔরঙ্গজেব। সেই কারণেই ঔরঙ্গজেবের মানসিকতা আজকের মহারাষ্ট্রে প্রবল হয়ে আক্রমণ শানাচ্ছে।’’
আজ সন্ধ্যায় একটি বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমের অনুষ্ঠানে মোদীর জবাব, ‘‘আজ বিরোধীদের পক্ষ থেকে ১০৪তম গালি দেওয়া হল আমায় ঔরঙ্গজেব বলে। কেউ কেউ আমার মাথা উড়িয়ে দেওয়ারও হুমকি দিয়েছে।’’ বিজেপি নেতৃত্ব মনে করেন, অতীতে যখনই মোদীকে ব্যক্তিগত আক্রমণ শানানো হয়েছে, ভোটে ফায়দা তুলেছে বিজেপিই। সুতরাং বিরোধীরা যত এ ধরনের ব্যক্তিগত আক্রমণে যাবেন, আদপে মহিমান্বিত হবেন মোদীই।
তৃতীয় বার জিতে আসার প্রশ্নে নিশ্চিত মোদীও এ দিন বলেন, ‘‘যখন গরিব মানুষ আমায় আশীর্বাদ করেন, তখন বিরোধীরা আমার সঙ্গে গরিবদেরও গালি দেয়। তাতে কিছু এসে যায় না। কারণ, কারা সরকারে আসবে, দেশের মানুষ তা স্থির করে ফেলেছেন।’’