শুক্রবার কৃষ্ণনগর জনসভায় নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।
বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পর পর দু’দিন তৃণমূল ও বিজেপির দুই প্রধান সভা করলেন কৃষ্ণনগর লোকসভা আসনে। দু’জনের সভাই হল তেহট্ট বিধানসভা এলাকায়। মোদী এই লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে বাছাই আসনেই প্রচারে যাচ্ছেন। একই সভায় একাধিক আসনের প্রার্থীকে ডেকে নিচ্ছেন। কিন্তু এই নিয়ে দু’বার কৃষ্ণনগরে সভা করে ফেললেন। ২ মার্চের পরে ৩ এপ্রিল। সেটা কি এই আসনে তৃণমূলের প্রার্থী মহুয়া মৈত্র বলে? যাঁকে সম্প্রতি সংসদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি যাতে ফের লোকসভায় যেতে না পারেন সে কারণেই কি এত গুরুত্ব কৃষ্ণনগরকে?
বৃহস্পতিবার মমতা তেহট্টের সভায় বলেছিলেন, ‘‘কাল আবার মিথ্যা বলতে আসছেন মহুয়ার এখানে। কারণ, মহুয়াকে নিয়ে ওঁদের খুব জ্বালা। মহুয়া যে মুখের উপর কথা বলে দেয়, ভয় পায় না। মহুয়া বাঘের বাচ্চার মতো লড়াই করে। ও সবাইকে বলে দিয়েছিল দেশে কী চলছে। তাতে কী রাগ! আসলে কেঁচো খুঁড়তে গেলে তো দিল্লির নেতাদের সাপ বেরিয়ে যাবে।’’ টাকার বিনিময়ে সংসদে প্রশ্ন বিতর্ক এবং বিদেশ থেকে অন্যের মাধ্যমে সংসদের লগ-ইন আইডি ব্যবহারের অভিযোগে কাঠগড়ায় উঠেছিলেন মহুয়া। শেষে স্পিকার ওম বিড়লা তাঁকে বহিষ্কার করেন। এই সিদ্ধান্তের আগে ও পরে তৃণমূলের পক্ষে দাবি করা হয়েছে, কড়া প্রশ্ন তুলে সংসদে বিজেপিকে বিপাকে ফেলার জন্যই মহুয়ার উপরে বিজেপির রাগ। সেই দাবিকেই ফের বৃহস্পতিবার উল্লেখ করেন মমতা।
তবে মোদী সেই পথে হাঁটলেন না। একটি বারের জন্যও শুক্রবারের বক্তৃতায় মহুয়া-প্রসঙ্গ টানলেন না। এর আগে ২ মার্চের বক্তৃতাতেও মহুয়া বা তাঁকে ঘিরে বিতর্ক নিয়ে কিছু বলেননি মোদী। যদিও সেই সময়ে ভোটের ঘোষণা হয়নি এবং তৃণমূলের পক্ষে মহুয়াকে ফের প্রার্থী করার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হয়নি। মমতা অবশ্য তত দিনে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, মহুয়াতেই তিনি আবার ভরসা রাখবেন কৃষ্ণনগরে। সেটা জেনেই মার্চের সভার শুরুতেই নিজের বক্তৃতায় রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার টেনেছিলেন মহুয়ার বিদেশের মাটি থেকে সংসদের লগ-ইন আইডি ব্যবহার প্রসঙ্গ। মনে করান মা কালীকে নিয়ে মহুয়ার মন্তব্যও। তার পরেই বক্তৃতা করতে উঠে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও সেই প্রসঙ্গ ছুঁয়ে যান। কিন্তু মোদী একটি বারের জন্যও ব্যক্তি মহুয়াকে আক্রমণের পথে হাঁটেননি। বরং, একের পর এক প্রসঙ্গ টেনে তৃণমূল এবং রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করেছেন। এপ্রিলেও সেই পথই নিলেন মোদী।
শুক্রবার রাজ্যে তিনটি সভা করেন মোদী। বৃহস্পতিবার কলকাতায় রাত্রিবাসের পরে শুক্রবার সকালে প্রথমে যান বর্ধমানে। এর পরে কৃষ্ণনগর ও বোলপুরে সভা করেন মোদী। তিনটি সভাতেই তাঁর সরকারের ১০ বছরের কৃতিত্ব দাবি করার পাশাপাশি তৃণমূলকে বিভিন্ন প্রসঙ্গে আক্রমণ করেন। মোদীর বর্ধমানের বক্তৃতায় মেরুকরণের স্পষ্ট বার্তাও ছিল। তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীরের সাম্প্রতিক বক্তব্যকে টেনে আক্রমণ শানান মোদী। তবে সেই সুর সে ভাবে কৃষ্ণনগর বা বোলপুরে ছিল না। বরং, চাকরি বাতিল প্রসঙ্গে শুক্রবার অনেক বেশি আক্রমণাত্মক হতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। রাজ্যে তিনটি সভা করে বিকেলেই ঝাড়খণ্ডের সিংভূমে সমাবেশের উদ্দেশে উড়ে যান মোদী।