প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।
আসন্ন লোকসভা ভোটের আগে বিপুল অর্থের সরকারি প্রকল্পের শিলান্যাসের পাশাপাশি জাত এবং হিন্দুত্বকে যৌথ অস্ত্র করেছে বিজেপি। আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নিজের কেন্দ্র বারাণসী সফরে তা আবারও প্রকট হয়ে উঠল।
এ দিন বারাণসীতে ১৩ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। যার অধীনে স্বাস্থ্য, বস্ত্র, পর্যটন-সহ একাধিক প্রকল্পের সূচনা করা হল। স্থাপিত হয়েছে বারাণসী-রাঁচী-কলকাতা এক্সপ্রেসওয়ের ভিত্তিপ্রস্তরও। পাশাপাশি সমান গুরুত্ব দিয়ে সন্ত রবিদাসের মূর্তিও উন্মোচন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী এ দিন সন্ত গুরু রবিদাসের মূর্তিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেছেন।
কবি এবং গীতিকার হিসেবে ভক্তি আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল রবিদাসের। দলিত পরিচয়ের রাজনীতিতে তিনি এক প্রতীকও বটে। লোকসভা ভোটের আগে তাঁর মূর্তি উন্মোচন করে মোদী দলিত এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির কাছে বার্তা দিতে চাইলেন বলেই মনে করছেন রাজনীতিকদের একাংশ। এই উপলক্ষে আজ বারণসীতে জনসভার আয়োজন করে শাসক দল। মোদী বলেন, “জাতগত পক্ষপাতিত্ব মানবতাকে ধ্বংস করছে। রবিদাসজি আমাকে বারবার তাঁর জন্মভূমিতে ডেকেছেন। আমি তাঁর সংকল্পগুলিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ও তাঁর লক্ষ লক্ষ ভক্তদের সেবা করার সুযোগ পেয়েছি। গুরুর জন্মতীর্থে, তাঁর সমস্ত অনুগামীদের সেবা করতে পারাটা কোনও সামান্য ব্যাপার নয়। আমি ভাগ্যবান।” তাঁর কথায়, “বারাণসীর জনপ্রতিনিধি হিসেবে আপনাদের সুযোগ-সুবিধের বিশেষ যত্ন নেওয়া আমার কর্তব্য। আমি খুশি যে দায়িত্ব পালনের সুযোগ পেয়েছি। আজ একটি পবিত্র দিন। বারাণসীর উন্নয়নের জন্য, কয়েকশো কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হল।”
শুধু উত্তরপ্রদেশই নয়, পঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র এবং মধ্যপ্রদেশ-সহ একাধিক রাজ্যে রবিদাসের অনুগামী রয়েছেন। দলিতদের মধ্যে আজও তিনি পূজিত। গুরু গ্রন্থ সাহিবেও তাঁর প্রচারিত বার্তা রয়েছে। গত বছর মধ্যপ্রদেশের বিধানসভা ভোটের আগে সাগর জেলায় রবিদাস মন্দিরের শিলান্যাস করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রায় ১০০ কোটি টাকা খরচ করে শুরু হয়েছে সন্ত রবিদাস মন্দির-নির্মাণের কাজ। ‘নাগারা’ স্থাপত্যরীতি মেনে প্রায় ১০ হাজার বর্গমিটার জমিতে গড়া হচ্ছে ওই মন্দির।
গুজরাতে যাবতীয় কর্মসূচি সেরে বৃহস্পতিবার রাতেই বারাণসীতে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী। রাতেই তিনি আবার শিবপুর-ফুলওয়ারিয়া-লাহারতারা মার্গ পরিদর্শনে যান। সঙ্গে ছিলেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী। আজ প্রথমেই বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে সংসদ সংস্কৃত প্রতিযোগিতা, কাশী সংসদ জ্ঞান প্রতিযোগিতা ও কাশী সংসদ ফোটোগ্রাফি প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে অংশ নেন তিনি। উদ্বোধন করেন অ্যাগ্রো পার্কে তৈরি আমূলের সবচেয়ে বড় ডেয়ারি প্ল্যান্টের। এখান থেকে ১৩ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেন। এই প্রকল্পের অধীনে ২৩৩ নম্বর জাতীয় সড়কের উপরে ঘাগরা ব্রিজ-বারাণসীতে চার লেনের সড়ক, এনএইচ ৫৬ এ সুলতানপুর-বারাণসী শাখায় চার লেনের রাস্তা তৈরি করা হবে। ১৯ নম্বর জাতীয় সড়কের উপরে বারাণসী-ঔরঙ্গাবাদ শাখায় তৈরি হবে ছয় লেনের রাস্তা।