প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
উত্তরপ্রদেশে দাঁড়িয়ে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী তাঁর প্রধানমন্ত্রিত্ব এবং সম্ভাব্য আসন নিয়ে খোঁচা দেওয়ার পরই ফের ‘চারশো পারের’ স্লোগানকে সামনে নিয়ে এসেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। আজ চলতি লোকসভা ভোটের চতুর্থ দফার ভোটদানের মধ্যেই একটি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মোদীর দাবি, এনডিএ-র চারশোর বেশি আসন পাওয়া অবশ্যম্ভাবী।
সেই সঙ্গে এ বারের ভোটে সবচেয়ে বেশি আলোচিত দু’টি বিষয়— বেকারত্ব ও মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে মুখ খুলেছেন মোদী। দাবি করেছেন, তাঁর সরকার গত পাঁচ বছরে প্রায় আড়াই লাখ নতুন ছোট উদ্যোগ তৈরি করেছে, যেখানে দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ের শহরে কয়েক লাখ মানুষ কাজ পেয়েছেন। জিতে এলে নতুন কর্মসংস্থানের আরও অনেক পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর সরকারের। বেকারত্ব নিয়ে বিরোধীরা ‘মিথ্যা’ বলছে মোদীর পাল্টা অভিযোগ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের দাবি, লোকসভার ভোটভাষ্যে এখনও তেমন হাওয়া তৈরি করতে পারেননি বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব। প্রতিষ্ঠানবিরোধিতা, বাজারে আগুন দশা, পেট্রল ও ডিজ়েলের মূল্যবৃদ্ধি, কোভিড পরবর্তী পর্যায়ে আর্থিক মন্দার ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে না পারায় বেকারত্ব কিছুটা হলেও ছায়া ফেলেছে। প্রথম দু’টি দফায় ভোটদানের হার কম দেখে মোদী তাঁর পুরনো রাস্তা অর্থাৎ হিন্দু-মুসলিম মেরুকরণের দিকে চলে গিয়েছেন প্রতিটি বক্তৃতায়।
তবে আজ বেকারত্বের অভিযোগকে মোকাবিলা করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। এক প্রশ্নের উত্তরে মোদী বলেছেন, ‘‘একটি স্টার্ট আপ তৈরি করলে সেখানে গড়ে চার থেকে পাঁচ জনের চাকরি হয়। আজ দেশে টিয়ার ওয়ান এবং টিয়ার টু শহরে আড়াই লাখ স্টার্ট আপ তৈরি হয়েছে। মুদ্রা যোজনার অধীনে ২৪ লক্ষ কোটি টাকা বণ্টন করা হয়েছে। আমরা পরিকল্পনা করছি ৩ কোটি লাখপতি দিদি তৈরি করার। চার কোটি বাড়ি তৈরি করেছে আমার সরকার।’’
মোদীর দাবি, ‘‘আগের তুলনায় দ্বিগুণ হাইওয়ে এবং রেল লাইন পাতা হয়েছে। বিরোধীরা মিথ্যে রটনা করছে। আসলে ওঁদেরই বলা উচিত যে রাজনৈতিক ভাবে ওঁরাই বেকার হয়ে পড়েছেন।’’ পাশাপাশি মূল্যবৃদ্ধি সংক্রান্ত প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রীর দাবি, কংগ্রেস জমানায় তা অনেকটাই বেশি ছিল। তাঁর কথায়, ‘‘লাল কেল্লা থেকে জওহরলাল নেহরু, রাজীব গান্ধী এবং ইন্দিরা গান্ধী বলতেন, উত্তর কোরিয়া এবং দক্ষিণ কোরিয়ার যুদ্ধের কারণে মূল্যবৃদ্ধি ঘটছে। কিন্তু সে সময় বিশ্বায়ন ঘটেনি, ওই যুদ্ধের কোনও প্রভাবই ভারতের অর্থনীতিতে পড়েনি। তাঁরা কেবলই অজুহাত তৈরি করেছিলেন। আমাদের জমানায় মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’’
অন্য দিকে, কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশ আজ মোদী সরকারকে নিশানা করে বলেছেন, দেশের অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্প সংস্থাগুলি যে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে, তার জন্য দায়ী মোদীর ‘অন্যায়কাল’। তাঁর কথায়, ‘‘এটা সবাই জানেন যে মোদী গত দশ বছরে তাঁর বাছাই করা কিছু বন্ধুর জন্যই কাজ করেছেন। তার ফলে দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনে, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পসংস্থাগুলির বরাদ্দ কমছে। করের হার ভয়াবহ ভাবে বেড়েছে। মারাত্মক কর্মীসংকোচন এবং মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে।’’ নির্বাচনী বন্ডের প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি তার যে সব ধনী বন্ধুর কাছ থেকে ৮ হাজার কোটি টাকা চাঁদা তুলেছে, বিনিময়ে তাদেরই সব বরাত দিয়েছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি সংস্থাগুলি সৎ ভাবে কাজ করে, ঘুষ না দিয়ে, ক্রমশ পিছিয়ে পড়েছে।’’
‘চারশো পারের’ যে স্লোগান মোদী দিচ্ছেন, তা সংবিধানে বদলের জন্যই—এমনই অভিযোগ বিরোধীদের। বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমরা গত পাঁচ বছর ৪০০-র কাছেই ছিলাম। এনডিএ জিতে এসেছিল ৩৬০টি-র মতো আসন, বাকি বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক সমর্থন জগনের কংগ্রেস এবং বিজেডি-র কাছ থেকে পেয়েছি। ফলে এটা নতুন কিছু নয়। সংবিধান বদল করার রটনা অমূলক এবং অভিসন্ধিমূলক। জওহরলাল নেহরু সংবিধানে বদল এনে বাক্ স্বাধীনতা খর্ব করেছিলেন, ইন্দিরা গান্ধী জরুরি অবস্থা জারি করেন, রাজীব গান্ধী সংবাদমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করতে বিল আনেন।’’
মোদীর দাবি, ক্ষমতায় এলে ‘শাহজাদা’ও সংবিধানে বদল আনবেন। তাঁর কথায়, ‘‘কংগ্রেসের সবচেয়ে বড় নেতা (রাহুল গান্ধী) রায়বরেলী থেকে লড়ছেন ওয়েনাড় থেকে পালাবেন বলে।
অমেঠীতে লড়াই করার সাহস নেই তাঁদের। মানুষের নয়, পরিবারের সেবাতেই মগ্ন এঁরা।’’