বগটুই গ্রামে (বাঁ দিকে) তৃণমূলের ও (ডান দিকে) বিজেপির তৈরি বেদি সাজানো হয়েছে। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম ।
লোকসভা ভোটের মুখে বগটুই কাণ্ডের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিতেও সামনে এল রাজনীতি। তবে সেই রাজনীতির লড়াইয়ে যে গত বছরের তুলনায় বিজেপির থেকে তৃণমূলের ‘নিয়ন্ত্রণ’ বেশি, তাও স্পষ্ট হয়েছে বৃহস্পতিবার। স্বজনহারা পরিবারের সদস্যদের অধিকাংশকেই দেখা গিয়েছে তৃণমূল শিবিরের আয়োজনে।
এক বছর আগে বগটুই-কাণ্ডের বর্ষপূর্তিতে মৃত ১০ জনের নামে গ্রামের শেষ প্রান্তে ৫০ মিটার ব্যবধানে দু’টি স্মৃতি ফলক বা বেদি তৈরি করেছিল তৃণমূল ও বিজেপি। দু’বছর পরে এ বারও সেই বেদি দু’টি রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু। তবে গত বছর যেমন তৃণমূল, বিজেপি ও সিপিএম একই গ্রামে তরজায় নেমেছিল, এ বারে তেমন হিড়িক দেখা গেল না।
গত বছর বগটুই কাণ্ডের বর্ষপূর্তিতে বিজেপি ও তৃণমূল আলাদা আলাদা মঞ্চ তৈরি করেছিল। বিজেপির মঞ্চে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ও তাঁর সঙ্গে বগটুই কাণ্ডের স্বজনহারা পরিবারের অধিকাংশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। পাল্টা তৃণমূলের অনুষ্ঠানে স্থানীয় বিধায়ক তথা ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কে স্বজনহারা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে বাধা দেওয়া হয়েছিল।
এ বছর অবশ্য ছবিটা বদলে গিয়েছে। স্বজনহারা পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে তৃণমূলের ভিড়ে দেখা গিয়েছে বৃহস্পতিবার। বিজেপির হয়ে একমাত্র মিহিলাল শেখ ছাড়া অন্য কোনও স্বজনহারা পরিবারকে দেখা যায়নি। এ বার দু’বছর পূর্তিতে তৃণমূল ও বিজেপি দু’দলই আলাদা আলাদা ভাবে বেদিতে মাল্যদান করলেও কোনও দলই কোনও মঞ্চ তৈরি করেনি।
বগটুই-কাণ্ডের পরে স্বজনহারাদের মধ্যে বিজেপি প্রভাব বাড়ালেও পঞ্চায়েত ভোটে ফের জমি ফেরাতে সক্ষম হয় তৃণমূল। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে বগটুই গ্রামে গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদ তিন স্তরেই বিজেপি তৃণমূলের কাছে পরাজিত হয়েছে। বিজেপির সাংগঠনিক দুর্বলতার জেরেই তা হয়েছে বলে দাবি তৃণমূলের।
পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপির পঞ্চায়েতের প্রার্থী, স্বজনহারা পরিবারের সদস্য ও ভাদু শেখ খুনে ধৃত পলাশ খানের মা মেরিনা বিবি, পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী সীমা খাতুনের স্বামী কিরণ শেখ ও স্বজনহারা পরিবারের সদস্য ফটিক শেখকে এ বছর তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে শহিদ বেদিতে প্রার্থনা করতে দেখা যায়। তৃণমূলের পক্ষে রামপুরহাট শহর সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিম্মি, রামপুরহাট ১ ব্লক সভাপতি নীহার মুখোপাধ্যায় ও তৃণমূলের স্থানীয় বড়শাল অঞ্চল সভাপতি সাকিল শেখ (আলমাস) ছাড়া অন্য কোনও নেতা মন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন না। বিজেপির পক্ষে শহিদ বেদিতে মাল্যদান করতে দেখা গিয়েছে বীরভূম সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ধ্রুব সাহা, দুধকুমার মণ্ডল ও যুবমোর্চার জেলা সভাপতি অনুপ মালকে।
স্বজনহারা পরিবারের সদস্য মিহিলাল শেখের অবশ্য দাবি, স্বজনহারা পরিবারের সব সদস্যই তাঁর সঙ্গে আছেন। বিজেপি করার জন্য তাঁর মাইনে আটকে রাখা হয়েছে বলেও অভিযোগ তাঁর। মিহিলালের দাবি, ‘‘বগটুই কাণ্ডে মৃত দশ জনের মধ্যে এখনও সাত জনের মৃত্যুর শংসাপত্র পাওয়া যায়নি। এর ফলে ব্যাঙ্ক, জীবন বিমা, গাড়ির লাইসেন্স-সহ অনেক সরকারি কাজে অনেক অসুবিধে হচ্ছে।’’ ধ্রুব বলেন, ‘‘তৃণমূল বগটুই নিয়ে রাজনীতি করছে। স্বজনহারারা বিজেপি করছে বলে বেতন আটকে রাখা হয়েছে। আমরা সব সময় স্বজনহারাদের পাশে আছি।’’
বিজেপির অভিযোগ প্রসঙ্গে তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘স্বজনহারাদের পরিবারের কেবলমাত্র দু-একজন ছাড়া সকলেই তৃণমূলে যোগদান করার জন্য অনেক দিন আগেই আবেদন জানিয়েছিলেন। তাঁদের আবেদনের ভিত্তিতে দলে আলোচনা করে সকলকেই তৃণমূলে নেওয়া হয়েছে। বগটুই গ্রামকে মুখ্যমন্ত্রী পরিকল্পনা মতো মডেল গ্রাম তৈরির কাজ চলছে।’’ মিহিলাল শেখের বেতন আটকানোর অভিযোগ প্রসঙ্গে আশিস বলেন, ‘‘এটা সরকারি নিয়মের ব্যাপার।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সঞ্জীব বর্মণ বলেন, ‘‘আমরা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এলাকার মানুষকে নিয়ে বগটুই-কাণ্ডের দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাব।’’