Lok Sabha Election 2024

চেনা ভোট থেকে দূরে দিন কাটল কুঠুরিতেই

হল্লা, কথা কাটাকাটি, নালিশ, হাতাহাতি— আবহমান কালের ভোটচিত্রের চেনা উত্তাপ থেকে ওঁরা এখন অনেক দূরে। সংশোধনাগারের কর্মীরা বলছেন, “ওঁরা এখন শুয়ে বসেই কাটিয়ে দেন!”

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ মে ২০২৪ ০৬:৪৬
Share:

পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। —ফাইল ছবি।

লম্বাটে একটা বেঞ্চ। খান কয়েক কাঠের চেয়ার। সামনের টেবিলে আড়াআড়ি রাখা ঢাউস টিভি। তেমন আরামদায়ক না হলেও টিভি দেখার আটপৌরে ব্যবস্থা আবেদন করলেই মেলে। ‘হাইপ্রোফাইল বন্দি’ বলে কথা! প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারের কর্তারা বলছেন, ‘ওঁরা মুখ ফুটে এক বার বললেই হত। রাত-তক না হলেও সন্ধ্যা পর্যন্ত টিভিতে ভোটের খবর দেখার ব্যবস্থা করে দিতাম। কিন্তু এক বার অন্তত আবেদন করতে হবে তো!’ তবে, সে পথে হাঁটেননি ওঁরা কেউ।

Advertisement

হল্লা, কথা কাটাকাটি, নালিশ, হাতাহাতি— আবহমান কালের ভোটচিত্রের চেনা উত্তাপ থেকে ওঁরা এখন অনেক দূরে। সংশোধনাগারের কর্মীরা বলছেন, “ওঁরা এখন শুয়ে বসেই কাটিয়ে দেন!” প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারের পহেলা বাইশ সেলের আনাচকানাচে তাই ভোট-খবরের ঝাঁঝালো উত্তাপ নয়, সোমবার সকাল থেকে ছড়িয়ে ছিল নিশ্চুপ ছায়াছন্নতা। ভোটের আঁচ থেকে নিজেদের সরিয়েই রাখলেন শিক্ষক নিয়োগ, রেশন দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত রাজ্যের দুই প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। ওই সব মামলায় অভিযুক্ত বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য বা বনগাঁ পুরসভার প্রাক্তন প্রধান শঙ্কর আঢ্যও।

প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারের পহেলা বাইশ ওয়ার্ডে আছেন জ্যোতিপ্রিয়। সকালে এক বার সেল থেকে বেরিয়ে ঘোরাফেরা করেছেন বটে তবে ভোটের খবর-টবর দেখার ব্যাপারে তাঁর আগ্রহ ছিল না। বরং পায়চারির পরে সটান গিয়ে সেঁধিয়ে গিয়েছেন আপন সেল-এ। গজ কয়েক দূরত্বে ঠিকানা পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং মানিক ভট্টাচার্যের। জেল কর্মীরা জানান, তাঁরাও প্রায় একই ভাবে ভোট নিয়ে নিস্পৃহ। সারা দিন শুয়ে বসেই কাটিয়েছেন। দুপুরের পর এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয় এসেছিলেন, জেল সুপারের লাগোয় ঘরে আধ ঘণ্টা মতো বাক্যালাপ সেরে পার্থ ফিরে গিয়েছিলেন নিজের সেলে।

Advertisement

প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারের এক কর্তা জানান, বন্দিদের টিভি দেখার ব্যবস্থা রয়েছে। 'হাই প্রোফাইল' বন্দিরা চাইলে আলাদা টিভি দেখার বন্দোবস্তও করেন তাঁরা। তবে বাইরে স্বতন্ত্র জায়গায় সে ‘আয়োজন’ করা হয়। কিন্তু এ দিন পার্থরা কোনও আগ্রহ দেখাননি। শুধু সোমবার নয়, জানা গিয়েছে, লোকসভা ভোট শুরুর পর থেকেই মন্ত্রিসভার ‘প্রাক্তনী’রা সে সব থেকে দূরে। যে সব ওয়ার্ডে এক সঙ্গে অনেকের ঠিকানা, সে সব সেলে টিভি দেখা, হইহল্লা সবই হয়েছে। এ দিন সেখানে বিশেষ নজরও ছিল।

তেমনই এক ওয়ার্ডের নাম মুন্সি ওয়ার্ড। সেখানেই শঙ্কর আঢ্য জনা কুড়ি বন্দির সঙ্গে থাকেন। সেখানে টিভি খোলা থাকলেও সে দিকে শঙ্করের মন ছিল না বলে সংশোধনাগারের কর্মীদের দাবি। এ দিন, একটি মামলায় তাঁকে সিবিআই বিশেষ আদালতে পেশ করা হয়। সারা দিন কোর্টে কাটিয়ে ফিরেও টিভি থেকে দূরেই থেকেছেন শঙ্কর।উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ-সহ নানা জায়গায় ভোট হচ্ছে। বহু দিন ধরে সে সব জায়গার সব ভোটেরই ‘কারিগর’ ছিলেন জ্যোতিপ্রিয়-ঘনিষ্ঠ শঙ্কর। জেলার এক তৃণমূল নেতার কথায়, “শুধু ভোট পরিচালনা নয়। প্রার্থী নির্বাচন থেকে নির্বাচনের দিন কোথায় কোন কর্মী কোন দায়িত্ব পালন করবেন, তা-ও ঠিক করতেন জ্যোতিপ্রিয় ও শঙ্কর। সে সব এখন অতীত।”

কারারক্ষীরা জানান, কয়েক সপ্তাহ ধরে পেটের সমস্যা-সহ নানা অসুস্থতায় ভুগছেন জ্যোতিপ্রিয়। সেল থেকে বাইরে বেরোন না তিনি। সারা দিন সেলে বসে বই পড়েন মানিকও। সময় আসলে চেনা ছবির ফ্রেম থেকেই ছিটকে দিয়েছে বুঝি তাঁদের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement