—প্রতীকী চিত্র।
গত কয়েকটি ভোটে রাজনৈতিক দলগুলির কাছে প্রচারের অন্যতম বিষয় ছিল কাটোয়ায় বাস্তবায়িত না হওয়া তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প। ক্ষমতায় এলে তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়িত করে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি শোনা গিয়েছিল বিরোধী পক্ষের গলায়।
এ বার লোকসভা ভোটের প্রচার শুরু হলেও বিষয়টি শাসক বা বিরোধী, কোনও পক্ষই প্রচারে আনছে না। তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে শোনা যাচ্ছে না একটি কথাও। দেওয়াল হোক বা ব্যানার, কোথাও ভোটের প্রচারে আসেনি বিষয়টি। প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি প্রকল্পটি আর হবে না।
কাটোয়া মহকুমা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৬-র ৬ ফেব্রুয়ারি কাটোয়া-বর্ধমান রোডে শ্রীখণ্ড গ্রামে ৯.৯ একর জমিতে তৎকালীন বিদ্যুৎমন্ত্রী মৃণাল বন্দ্যোপাধ্যায় ও শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেনের উপস্থিতিতে তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের শিলান্যাস হয়। রাজ্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগম (পিডিসিএল) চাষিদের থেকে ৩৩৯ একর জমি কিনে প্রকল্পের কাজ শুরু করেছিল। এলাকাটি কাটোয়া থানার মধ্যে পড়লেও সেটি বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের অধীন। বলপূর্বক জমি অধিগ্রহণ ঠেকাতে ওই সময়ে গড়ে ওঠে ‘কৃষিজমি কৃষক ও ক্ষেতমজুর বাঁচাও কমিটি’। বিষয়টি নিয়ে তেতে উঠেছিল রাজ্য রাজনীতি। জমি দিতে বেঁকে বসেছিলেন কোশিগ্রাম, শ্রীখণ্ড, দেবকুণ্ডু গ্রামের চাষিরা।
বছর পাঁচেক পরে, জমির উপযুক্ত দাম পেয়ে আন্দোলন ছেড়ে অনেক চাষিই পিডিসিএল-কে জমি বিক্রি করে দেন। রাজ্যে পালা বদলের পরে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। ২০১২-র অগস্টে রাজ্য সরকার প্রকল্পটি কেন্দ্রীয় সংস্থা এনটিপিসি-কে হস্থান্তর করে। ওই সংস্থাকে রাজ্য সরকার ১০০ একর জমিও দেয়। রাজ্যের জমিনীতি মেনে এনটিপিসি চাষিদের থেকে সরাসরি উপযুক্ত দাম দিয়ে ওই জমি কিনে নেয়। পরে ৬৩০ মেগাওয়াটের দু’টি ‘সুপার ক্রিটিকাল ইউনিট’ তৈরির কাজে হাত লাগানো হবে বলে জানানো হয় এনটিপিসির তরফে।
তার পরে ভাগীরথী দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। আজও প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়নি। কোশিগ্রামের বাসিন্দা কাজল দাসের আক্ষেপ, “তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প হলে কর্মসংস্থান হবে। এই আশায় বসে থেকে আমাদের চাকরির বয়স চলে গেল। ভোট এলে রাজনৈতিক দলগুলির কাছে প্রচারের হাতিয়ার হয়ে ওঠে ওই বিষয়টি। কিন্তু, এ বার লোকসভা ভোটে কোনও দলের প্রার্থী মুখেই প্রকল্প নিয়ে একটি কথাও শোনা যাচ্ছে না। আমাদের ধারণা, প্রকল্পটি আর আমাদের এখানে হবে না।”
বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী পিয়া সাহার দাবি, “এর জন্য দায়ী সিপিএম ও তৃণমূল। ওরা রাজ্যে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থেকেও শিল্প গড়ে তুলতে পারেনি। প্রচারে গেলে মানুষই আমাদের সে কথা ক্ষোভের সঙ্গে জানাচ্ছেন।” তৃণমূল প্রার্থী অসিত মালের বক্তব্য, “শিলান্যাস করার পরে সিপিএম দীর্ঘদিন প্রকল্পটি বাস্তবায়িত করতে পারেনি। বিজেপি একের পর এক সব রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিক্রি করে দিচ্ছে। কেন্দ্রীয় সংস্থা এনটিপিসি তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরি করতে পারেনি। ভোটে মানুষ এর জবাব দেবেন। আমরা বিষয়টি মানুষকে বলছি।” ওই কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী শ্যামলী প্রধানের অভিযোগ, “কেন্দ্র বা রাজ্য, কেউই কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারছে না। তাই মানুষ আমাদের চাইছেন। আমরা ক্ষমতায় এলে তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প হবে। ভোট চাইতে গিয়ে সে কথা বলছি।”