(বাঁ দিকে) অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। নওশাদ সিদ্দিকি (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
শেষ পর্যন্ত ডায়মন্ড হারবারে লড়ছেন না আইএসএফের নওশাদ সিদ্দিকি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ফুরফুরা শরিফে সাংবাদিক বৈঠক করে পাঁচটি লোকসভা আসনে নিজেদের দলের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করলেন আইএসএফ নেতৃত্ব। ডায়মন্ড হারবারে আইএসএফ প্রার্থী করা হয়েছে মজনু লস্করকে। গত কয়েক মাস ধরেই ডায়মন্ড হারবারে নওশাদ প্রার্থী হবেন বলে জল্পনা ছিল। যে হেতু তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ওই এলাকার সাংসদ, তাই ওই আসনে সংখ্যালঘু নেতা নওশাদের প্রার্থী হওয়া নিয়ে জোর গুঞ্জন ছিল। এর আগে অভিষেকের বিরুদ্ধে প্রার্থী হওয়া নিয়ে নওশাদ জানিয়েছিলেন, তাঁর দল তাঁকে মনোনয়ন দিলে তিনি ডায়মন্ড হারবারে প্রার্থী হবেন। কিন্তু আইএসএফ নেতৃত্ব তাঁকে প্রার্থী হওয়ার অনুমতি দেয়নি বলেই জানিয়েছেন তিনি।
তবে নওশাদ প্রার্থী না হওয়ায় কটাক্ষ করেছে তৃণমূল। তমলুক লোকসভার তৃণমূল প্রার্থী দেবাংশু ভট্টাচার্য তাঁর এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে লিখেছেন, ‘‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে চেয়ে নিজেই চ্যালেঞ্জ জানিয়ে তার পর নিজেই সেখান থেকে পালিয়ে যাওয়াকে নওশাদ সিদ্দিকি বলে। এ জন্যই আমরা বলি, পান্তা ভাত খেয়ে বিরিয়ানির ঢেঁকুর তোলা উচিত নয়।’’
নওশাদের প্রার্থী না হওয়া প্রসঙ্গে আইএসএফের একটি সূত্র জানাচ্ছে, মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে ফুরফুরা শরিফেই লোকসভা ভোটের প্রার্থী ঠিক করতে বৈঠকে বসেছিলেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। ওই বৈঠকেই নেতারা নওশাদকে ডায়মন্ড হারবারে প্রার্থী হওয়ার বদলে দলের তারকা প্রচারক হিসাবে কাজ করার কথা বলেছিলেন। তবে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের আলোচনাতে বারবরই আইএসএফ নেতৃত্ব ডায়মন্ড হারবার আসনটির দাবি জানিয়ে আসছিলেন। বাম-কংগ্রেস নেতৃত্ব জানিয়েছিলেন, নওশাদ প্রার্থী হতে চাইলে তাঁদের আপত্তি নেই। কিন্তু সেই লড়াই থেকে নওশাদ এখন সরে গিয়েছেন। নওশাদ প্রার্থী হতে পারেন, এই জল্পনা তৈরি হওয়ায় ডায়মন্ড হারবারে অভিষেককে হারানোর হুঙ্কার দিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও। শেষ পর্যন্ত নওশাদ প্রার্থী না হওয়া বিজেপির ‘কৌশল’ও ধাক্কা খেতে চলেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
ডায়মন্ড হারবারের পাশাপাশি যাদবপুরেও দলীয় প্রার্থীর নাম জানিয়েছে আইএসএফ। ফলে জোর ধাক্কা খেল বাম-কংগ্রেস জোটও। কারণ, ইতিমধ্যে বামফ্রন্টের প্রার্থী হিসাবে সিপিএমের ছাত্রনেতা সৃজন ভট্টাচার্য প্রচার শুরু করে দিয়েছেন। যে হেতু নওশাদের বিধানসভা কেন্দ্র ভাঙড় যাদবপুর লোকসভার অধীন, তাই জেলা আইএসএফ নেতৃত্বও আগাগোড়া যাদবপুর আসনের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু কোনও আলোচনা ছাড়াই সিপিএম প্রার্থীঘোষণা করে দেওয়ায় ক্ষোভ জন্মেছিল নওশাদের দলের। তবে নওশাদ জানিয়েছিলেন, ওই আসনে সিপিএম নেতা বিকাশ ভট্টাচার্য প্রার্থী হলে তারা আসনটি ছেড়ে দেবেন। কিন্তু সৃজনকে প্রার্থী করার পরেই আইএসএফ নেতৃত্ব যাদবপুরে প্রার্থী দেওয়ার বিষয়ে তোড়জোড় শুরু করেন।
এই সিদ্ধান্ত ঘোষণার ফলে তিন রাজনৈতিক পক্ষের জোট আলোচনা কার্যত ভেস্তে গিয়েছে। যদিও, মুর্শিদাবাদ আসনে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের বিরুদ্ধে প্রার্থী দিয়েছে আইএসএফ। নওশাদের দলের এমন অবস্থানে বেজায় ক্ষুব্ধ সিপিএম। তারা জানিয়েছিল, মুর্শিদাবাদের সঙ্গে শ্রীরামপুর আসনে আইএসএফ প্রার্থী প্রত্যাহার করলেই জোটের আলোচনা সম্ভব হবে। পাল্টা নওশাদের যুক্তি ছিল, আলোচনা করলেই সব সমস্যার সমাধান করা যেত। কিন্তু সিপিএমের একতরফা ভাবে প্রার্থীঘোষণাকে কোনও ভাবেই মেনে নিতে পারেনি আইএসএফ। তাই শেষ পর্যন্ত যাদবপুরেও প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে বলেই দলের দাবি।
যাদবপুরে প্রার্থী করা হয়েছে আইনজীবী নুর আলম খান, বালুরঘাটে মোজাম্মেল হক, উলুবেড়িয়ায় মফিকুল ইসলাম এবং ব্যারাকপুরে প্রার্থী করা হয়েছে আইনজীবী জামির হোসেনকে। বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রে আবার প্রার্থী বদল করেছে আইএসএফ। নতুন প্রার্থী আখতার আলি বিশ্বাস। এর আগে প্রার্থী হয়েছিলেন শহিদুল ইসলাম মোল্লা। এ ছাড়াও ভগবানগোলা বিধানসভার উপনির্বাচনেও প্রার্থীদের নাম জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে প্রার্থী করা হয়েছে মুর্শিদ আলম। এখনও পর্যন্ত মোট ১৩টি লোকসভা আসনে প্রার্থী দিয়েছে আইএসএফ।