ধুপগুড়ি জনসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে জলপাইগুড়ি লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী জয়ন্ত রায়। ছবি - সন্দীপ পাল।
দৃশ্য এক
চার লেনের হাইওয়ে। শিলিগুড়ি থেকে ফালাকাটা হয়ে কোচবিহার আসা-যাওয়ার পথ। তার দুই পাশে দুটি দৈত্যাকার মাঠ। একটা মাঠে সভা করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। অন্য মাঠে হেলিপ্যাড। মাঝের গার্ডরেল কেটে দেওয়া হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর যাতায়াতের সুবিধার জন্য। সভা শেষ করে ওই পথে ফিরতে প্রধানমন্ত্রীর সময় লাগল এক মিনিটেরও কম। তার পরেই ধীরে ধীরে মাটি থেকে উচ্চতা বাড়িয়ে নিল সেনাবাহিনীর বিশেষ হেলিকপ্টার। কাতারে কাতারে মানুষ তখন ছুটছেন ওই হেলিকপ্টারের দিকে।
দৃশ্য ২
বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বক্তব্য রাখতে গিয়ে যাঁকে ভারতের সবচেয়ে ভদ্র সাংসদ হিসেবে বিশেষিত করলেন সেই দলীয় প্রার্তী জয়ন্ত রায়কে কার্যত ধাক্কা মেরে পোডিয়াম থেকে সরিয়ে দিয়ে মাইকের দখল নিলেন বিজেপির জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি বাপি গোস্বামী এবং রাজ্যের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক দীপক বর্মণ। চড়া সুরে দিতে শুরু করলেন মোদীজির নামে
‘স্বাগতম’ স্লোগান।
দৃশ্য ৩
মঞ্চে তখন মোদী। সকলের অভিবাদন গ্রহণ করে সবে বসেছেন চেয়ারে। রীতি অনুযায়ী তাঁর সামনে বক্তব্য রাখবেন রাজ্য সভাপতি। তার পর শেষ বক্তা তিনি। ঘোষক তবু বেমালুম ভুলে গেলেন সুকান্তের কথা। বক্তৃতা দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করলেন, যা শুনে অবাক সুকান্ত। মোদীও আশপাশে তাকাচ্ছেন। সুকান্ত ইশারায় বোঝানোর চেষ্টা করছেন, তিনি এখন বক্তৃতা করবেন। মোদী চেয়ারের হাতল ধরে বসে আছেন। ঘোষণার কি পরিবর্তন হবে, না কি তাঁকেই বলতে উঠতে হবে— সেই দোনোমনায়। শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি সামাল দিলেন দীপক। ডেকে নিলেন সুকান্তকে।
চুম্বকে দৃশ্যগুলি ধরলে একটিই নির্যাস বেরোয়। তা হল, মোদীর মুখ দেখেই উৎসবে মাতল জলপাইগুড়ি। নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন সংলগ্ন স্টেশনারি দোকান, বেলাকোবার চায়ের দোকান, ধূপগুড়ির লটারির দোকান শনিবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত মিলেমিশে যাচ্ছিল মোদীর সভার আলোচনায়। সভার নির্ধারিত সময় ছিল দুপুর দুটো। প্রধানমন্ত্রী এলেন তাঁর প্রায় ৪৫ মিনিট পরে। রবিবার সকাল ৭টা থেকে ধূপগুড়ি বাসস্ট্যান্ড থেকে রেল ব্রিজ হয়ে সভাস্থল পর্যন্ত এলাকাটা প্রায় গেরুয়া হয়ে উঠেছিল। কখনও মেঘ। কখনও রোদ। তার মধ্যে নিরাপত্তার কড়াকড়ি। হাজারটা ব্যারিকেড। সে সব পেরিয়ে এক বৃদ্ধ বসেছিলেন চায়ের পাত্র নিয়ে। গলায় জোর নেই। হেঁকে যে বিক্রি করবেন, তাই সেই জো নেই। কাছে গিয়ে শুনতে হল তাঁর গভীর পর্যবেক্ষণ। তিনি বললেন, ‘‘এমন দেখেছিলাম, মমতা যখন ক্ষমতায় আসছিল।’’