মেদিনীপুরের বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পাল। —ফাইল চিত্র।
বিজেপির সাংগঠনিক বৈঠক চলছিল। অভিযোগ, লুকিয়ে সেখানে ঢুকে পড়েছিলেন নির্বাচন কমিশনের ভিএসটি টিমের (ভিডিয়ো সার্ভেল্যান্স টিম) এক কর্মী। তিনি মোবাইলে বৈঠকের ভিডিয়ো তুলছিলেন। দেখতে পেয়ে ওই মোবাইল নিজের ‘হেফাজতে’ নিলেন মেদিনীপুরের বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পাল।
কেশিয়াড়ির এই ঘটনায় শোরগোল পড়েছে। বিজেপির দাবি, ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে নোটিস ধরাতে বুধবার স্থানীয় এক নেতার বাড়িতে পুলিশ গিয়েছিল। এ দিন অগ্নিমিত্রা কেশিয়াড়ি থানাতেও গিয়েছিলেন। জানতে চেয়েছেন, কেন দলের কার্যকর্তার বাড়িতে পুলিশ গিয়েছিল।
মূল ঘটনা অস্বীকার করছেন না অগ্নিমিত্রাও। বলছেন, ‘‘মোবাইলটি এখনও ফেরত দিইনি। বলেছি দেব। তবে তার আগে আমার কাছে এসে জবাবদিহি করতে হবে।’’ বিজেপি প্রার্থী আরও বলেন, ‘‘গত রবিবার কেশিয়াড়িতে দলের ওই বৈঠকে কার্যকর্তারাই ছিলেন। একজন অনুমতি না নিয়ে সেখানে ঢুকে ভিডিয়ো রেকর্ডিং করছিলেন। বলেন, বিডিও অফিস থেকে পাঠানো হয়েছে। এটা আমার ইন্ডোর বৈঠক। তাই ওঁর মোবাইলটা নিয়ে নিই।’’ ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে বিজেপি নেতার বাড়িতে পুলিশ যাওয়া নিয়েও ক্ষুব্ধ মেদিনীপুরের বিজেপি প্রার্থী। তিনি বলেন, ‘‘কেশিয়াড়ির এক কার্যকর্তার বাড়িতে আজকে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। তৃণমূলের অসভ্যতামিটা একবার লক্ষ্য করুন!’’
কেন পুলিশ গিয়েছিল? জেলার এক পুলিশ আধিকারিকের জবাব, ‘‘পুলিশ নোটিস দিতে গিয়েছিল।’’ কিন্তু পুলিশ কেন, নোটিস তো দেওয়ার কথা এআরও-র? জেলা পুলিশের ওই আধিকারিক এ বার বলেন, ‘‘এআরও-র নোটিস ওরা নিতে চাইছিল না। সেটা এআরও পুলিশকে জানিয়েছিল। তাই পুলিশ গিয়েছিল।’’ সন্তু গায়েন নামে কেশিয়াড়ির ওই বিজেপি নেতা অবশ্য জানান, তিনি নোটিস নেননি। কারণ ওই দিন তিনি মোবাইল নেননি। দলের স্থানীয় মণ্ডল সাধারণ সম্পাদক সন্তুর অনুমান, ‘‘যেহেতু আমি দলের সাংগঠনিক দায়িত্বে আছি এখানে, দলের মিটিং-মিছিলগুলোর পারমিশন আমিই করাই এখানে। মনে হচ্ছে, তাই আমার নামে নোটিস করেছে। আগেও আমাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা হয়েছে।’’
সত্যিই কি নিয়ম ভেঙে ওই কর্মী বিজেপির সাংগঠনিক বৈঠকে ঢুকেছিলেন? প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, ভোটের কমিশনের অনুমতি নিয়ে যেখানে সভা, সমাবেশ বা অন্য কোনও প্রচার কর্মসূচি হয়, তার ভিডিয়ো রেকর্ডিংকরা হয়। দলের অভ্যন্তরীণ বৈঠক এর আওতায় না পড়ারই কথা। তবে জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ ভিএসটি টিমের কারও মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়াও যায় না। এটা অন্যায়। যদি কারও মনে হয়, ওই কর্মী ভিডিয়ো রেকর্ডিং করে অন্যায় করেছেন, তিনি পুলিশ- প্রশাসনে জানাতে পারতেন। ওই মোবাইল নিজের কাছে না রেখে পুলিশ-প্রশাসনের হাতে তুলে দিতে পারতেন।’’
পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক তথা জেলা নির্বাচনী আধিকারিক খুরশিদ আলি কাদেরি বলেন, ‘‘ঠিক কী হয়েছে দেখছি। যে পদক্ষেপ করার, নিশ্চিতভাবে করা হবে।’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরার খোঁচা, ‘‘বিজেপি প্রার্থী তাঁর আসানসোলের লড়াইয়ের কথা শোনাচ্ছেন। উনি কী লড়াই করেছেন, মেদিনীপুরের মানুষ বুঝতে পারছেন!’’