অন্যথায় ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি
Lok Sabha Election 2024

শহরে ‘লিড’ দিতেই হবে, বার্তা বৈঠকে

তৃণমূল সূত্রের খবর, শতাব্দী প্রশ্ন তুললেও এলাকা থেকে ‘লিড’ না-দিতে পারলে ব্যবস্থা নেওয়ার মতো হুঁশিয়ারি দেননি। ঠিক সেই কাজটাই করে দিয়ে গিয়েছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সিউড়ি ও রামপুরহাট শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০২৪ ০৬:৫৭
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

শহর থেকে ‘লিড’ চাই। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশের পরেই তৎপরতা তুঙ্গে বীরভূম জেলা তৃণমূলে। ‘লিড’ দিতে না-পারলে যে ‘ব্যবস্থা’ নেওয়া হবে সংশ্লিষ্ট এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতার বিরুদ্ধে, তা জানিয়ে দিচ্ছেন জেলার শীর্ষ নেতারা। সোমবারই রামপুুরহাটে একটি বৈঠকে দলের জেলা চেয়ারম্যান ও কোর কমিটির সদস্য আশিস বন্দ্য়োপাধ্যায় কর্মীদের বলে দিয়েছেন, নির্দেশ (অভিষেকের) অমান্য হলে, সেটা দল মেনে নেবে না। সে জন্য প্রত্যেককে সতর্ক থাকতে হবে।

Advertisement

এই গোটা পর্বের সূচনা বিদায়ী সাংসদ এবং এ বার বীরভূম কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী শতাব্দী রায়ের প্রশ্ন দিয়ে। পুরসভায় জিতেও লোকসভায় শহরের নানা ওয়ার্ডে হার কেন, তা গত জানুয়ারিতে দুবরাজপুর শহরের একটি বৈঠকে দলের পুর-প্রতিনিধিদের কাছে জানতে চেয়েছিলেন শতাব্দী। তাঁর প্রশ্ন ছিল, ‘‘আপনারা যদি জিততে পারেন, তা হলে আমার নির্বাচনে ওই ওয়ার্ডগুলো হারি কী করে?’’

লোকসভা ভোটের ফলের নিরিখে শহরে পিছিয়ে থাকার জন্য শতাব্দী রায় একই প্রশ্ন তুলেছেন সাঁইথিয়া, রামপুরহাট-সহ তাঁর এলাকার অন্য পুরশহরেও। তৃণমূল সূত্রের খবর, শতাব্দী প্রশ্ন তুললেও এলাকা থেকে ‘লিড’ না-দিতে পারলে ব্যবস্থা নেওয়ার মতো হুঁশিয়ারি দেননি। ঠিক সেই কাজটাই করে দিয়ে গিয়েছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। দিন কয়েক আগে, তারাপীঠে নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠকে অভিষেক জানিয়ে দেন, যে নেতা যে এলাকার দায়িত্বে সেখানে তাঁকে ভোটের ‘লিড’ রক্ষা করতে হবে। বিশেষ করে পুর এলাকায় পুরপ্রধান উপ পুরপ্রধান ও শহর সভাপতিদের দায়িত্বের উপর জোর দেন।

Advertisement

তারপর থেকেই দলে চোখে পড়ার মতো তৎপরতা। পুর-ভোটের মতো লোকসভা নির্বাচনেও শহর থেকে ‘লিড ‘বজায় রাখতে নেওয়া হয়েছে গুচ্ছ পরিকল্পনাও। অন্যথা হলে কী পরিণাম, সোমবার রামপুরহাট ও দুবরাজপুরে কর্মিসভায় স্পষ্ট করেছেন জেলা নেতৃত্ব। সিউড়ি, দুবরাজপুর, সাঁইথিয়া, রামপুরহাট শহরের তৃণমূল নেতাদের মতে, পুরভোট যে-ভাবে করা হয়, লোকসভা কিংবা বিধানসভার ক্ষেত্রে ‘মডেল’ এক নয়। লোকসভা ভোটে সার্বিক ভাবে মিছিল-মিটিং, পথসভা, কয়েক বার ভোটারদের বাড়ি যাওয়া থাকে বটে। কিন্তু, পুর-নির্বাচনের মতো নিবিড় হয় না তৃণমূল স্তরে। এ বারে সেই ‘খামতি’ ঢেকে নিবিড় প্রচারে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

তৃণমূল সূত্রের খবর, বুথ ভিত্তিক দলের পাঁচ জন কর্মীকে নিয়ে একটি করে কমিটি গঠন করে দায়িত্বে দেওয়া হচ্ছে বাড়ি বাড়ি প্রচারের। কমিটির কাজ পুর-পরিষেবা ও সরকারি প্রকল্পের সুযোগ সুবিধা তাঁরা কেমন পান, সেটা জানা। যদি না পেয়ে থাকেন, কেন পাননি। পুরপরিষেবা নিয়ে ক্ষোভ, অভিযোগ থাকলে মিটিয়ে দেওয়ার বা অগ্রগতি সম্পর্কিত সন্তোষজনক উত্তর দিয়ে মন জয় করার পদ্ধতি অবলম্বন করা হচ্ছে। জোর দেওয়া হচ্ছে পাড়া বৈঠকের উপরে। দুবরাজপুর শহর তৃণমূলের সভাপতি স্বরূপ আচার্য, সিউড়ির শহর সভাপতি মহম্মদ সফিক, সাঁইথিয়া শহর সভাপতি দেবাশিস সাহারা বলছেন, ‘‘শহরের ভোটে যাতে পিছিয়ে থাকতে না-হয়, তা দেখতে আন্তরিক ভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে।’’

প্রসঙ্গত, ১৬টি ওয়ার্ড বিশিষ্ট দুবরাজপুর পুরসভার সব ক’টি ওয়ার্ড গত পুরভোটে জিতলেও ২০১৯-এর লোকসভা এবং দু’বছর পরের বিধানসভা নির্বাচনে ১১টি ওয়ার্ডে বিজেপির চেয়ে পিছিয়ে থেকেছে তৃণমূল। কী ভাবে প্রতিটি ওয়ার্ডে লিড পাওয়া যায়, সে ব্যাপারে শহর নেতৃত্ব ও পুর-প্রতিনিধিদের সঙ্গে এ দিন বৈঠক করেন বিকাশ রায় চৌধুরী। এ দিনই রামপুরহাট ১ ব্লক ও রামপুহাট শহরের নেতা-কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করেন শতাব্দী রায় ও আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। রুদ্ধদ্বার বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ব্লকের ৯টি গ্রাম পঞ্চায়েত ও রামপুরহাট শহর মিলিয়ে ২৫২টি বুথের সভাপতি, নির্বাচিত পঞ্চায়েত সদস্য, প্রধান, পুরপ্রতিনিধি। সূত্রের খবর, বৈঠকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ স্মরণ করিয়ে আশিস বলেন, ‘‘নির্দেশ অমান্য হলে দল মেনে নেবে না। প্রত্যেককে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যা বলেন, তা করেন। কোথাও লিড না হলে সরতে হবে সংশ্লিষ্ট সভাপতিকে।’’

দল সূত্রে খবর, শহরের ভোট কেন কম পড়ে সেটা নিয়ে পর্যালোচনা করেন শতাব্দী রায়। পুরপ্রধান সৌমেন ভকতকে প্রশ্ন করেন, তাঁকে কেন সক্রিয় ভাবে দেখা যাচ্ছে না। যদিও পুরপ্রধান জানান, তিনি সক্রিয় আছেন। রামপুরহাট শহর তৃণমূলের সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিম্মিকেও সকলের সঙ্গে মিলে করতে বলা হয়েছে বলে সূত্রের খবর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement