বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং মহম্মদ সেলিম। —ফাইল ছবি।
বাংলার সিপিএম কি নেতৃত্বের সঙ্কটে ভুগছে? আনন্দবাজার অনলাইনের সাক্ষাৎকার ভিত্তিক অনুষ্ঠান ‘দিল্লিবাড়ির লড়াই: মুখোমুখি’-তে সে কথা মানতে চাইলেন না দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। বরং একঝাঁক তরুণ নেতা-নেত্রীর কথা উল্লেখ করে তাঁর দাবি, ‘‘আমি যখন সম্পাদক হয়েছিলাম, তখন বলেছিলাম ৩০ জন তেজি ঘোড়া রয়েছে। দু’বছর পর বলছি, সেই সংখ্যাটা ১০০ হয়েছে। আরও দু’বছর পর সংখ্যাটা ৩০০ হবে।’’ কিছুটা শ্লাঘা নিয়েই সেলিম বলেন, ‘‘সিপিএম ছাড়া আর কোনও দল নেই, যাদের এত তরুণ মুখ রয়েছেন।’’
তবে সিপিএম রাজ্য সম্পাদক স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, তিনি মিস্ করেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে। এবং তা প্রতিক্ষণে। কী করতে পারলে সেলিম নিজেকে সফল মনে করবেন? সিপিএম রাজ্য সম্পাদকের জবাব, ‘‘প্রথমত, বামপন্থার পুনর্জাগরণ। দ্বিতীয়ত, কামব্যাক এবং তৃতীয়ত, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের স্বপ্ন বাস্তবায়িত করা।’’ এ কথা বলতে গিয়ে খানিকটা আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন সেলিম। সাক্ষাৎকারে ক্যামেরার সামনেই গলা ধরে আসে তাঁর। ছলছল করে ওঠে চোখও। কোনও রকমে দুঃখপ্রকাশ করে সামলে নেন নিজেকে।
সেলিমের বক্তব্য, সিপিএমে নেতৃত্ব তৈরি করা হয় পরিকল্পনা করে। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, অনিল বিশ্বাসেরা ছিলেন সেই পরিকল্পনারই ফসল। তাঁর কথায়, ‘‘এই যে আজকে সীতারাম ইয়েচুরি বা প্রকাশ কারাটকে দেখছেন, তাঁদের পরিকল্পনা করেই নেতৃত্বে আনা হয়েছিল। এই যে আমি মহম্মদ সেলিম, আমি কি এক দিনে তৈরি হয়েছি?’’ একটি সাক্ষাৎকারে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, পরবর্তী প্রজন্মের নেতা হিসেবে তিনি কাদের মধ্যে সম্ভাবনা দেখতে পান? বুদ্ধদেব জবাবে বেশ কয়েকটি নাম বলেছিলেন। যেমন সেলিম, সুজন চক্রবর্তী, অধুনাপ্রয়াত মানব মুখোপাধ্যায়। সেই প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন সেলিম।
তবে সেলিম মেনে নিয়েছেন, মাঝে নতুন নেতৃত্ব তৈরি করার কাজে কিছুটা ‘ফাঁক’ পড়েছিল। সিপিএমের অনেকের মতে, অনিল বিশ্বাসের প্রয়াণের পরে বিমান বসু রাজ্য সম্পাদক হওয়ার পর তরুণদের রাজ্য কমিটিতে তুলে আনার ক্ষেত্রে ‘অনীহা’ দেখা গিয়েছিল। ওই এক দশকেই একটা বড়সড় ফাঁক তৈরি হয় বলে দাবি সেই নেতাদের। সেলিম রাজ্য সম্পাদক হওয়ার পর সেই ধারা অনেকটাই ঘুচেছে। দলে তরুণদের প্রাধান্য দেওয়ার বিষয়ে সেলিম আগ্রাসী মনোভাব নিয়েই চলেন বলে সিপিএম সূত্রে খবর। যেমন গত রাজ্য সম্মেলনেই এক তরুণ নেতাকে প্রতিনিধি পর্যন্ত করতে রাজি ছিল না আলিমুদ্দিন। তাঁকে প্রথমে পর্যবেক্ষক করা হয়েছিল। পরে চাপে পড়ে তাঁকে রাজ্য সম্মেলনে প্রতিনিধি করা হলেও অনেকেই ভাবেননি তাঁকে কমিটিতে নিয়ে নেওয়া হবে। কিন্তু সেটাই করেছিলেন সেলিম।