নবদ্বীপে মতুয়াদের বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র।
রাজ্যসভার সাংসদ পদে শপথ নেওয়ার সময় হরিচাঁদ-গুরুচাঁদ ঠাকুরের নাম নেওয়ায় তাঁর শপথ অনুষ্ঠান বাতিল করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর। সেই ঘটনায় উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁয় আগে পথে নেমেছেন মতুয়াদের একাংশ। এ বার প্রতিবাদ, বিক্ষোভ চলল নদিয়ার নবদ্বীপে। জ্বলল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের কুশপুতুল। নবদ্বীপ রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। রানাঘাটের বিজেপি প্রার্থী জগন্নাথ সরকারের বক্তব্য, সংসদের ঘটনাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে তৃণমূল! পাল্টা ওই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী মুকুটমণি অধিকারীর বক্তব্য, সংসদে মতুয়াদের গুরুচাঁদ- হরিচাঁদ ঠাকুরকে অপমান করা হয়েছে। এই বিক্ষোভ যথাযথ।
শনিবার নবদ্বীপ বিধানসভার ভালুকা বটতলার কৃষ্ণনগর-নবদ্বীপ রাজ্য সড়কে জমায়েত হন মতুয়া সম্প্রদায়ের লোকেরা। ডঙ্কা-কাঁসর বাজিয়ে রাস্তা অবরোধ করেন তাঁরা। সেখানেই পোড়ানো হয় শাহ-শান্তনুর কুশপুতুল। বিক্ষোভ কর্মসূচিতে ছিলেন নবদ্বীপ পুরসভার চেয়ারম্যান বিমানকৃষ্ণ সাহা, নবদ্বীপ ব্লক তৃণমূল সভাপতি কল্লোল কর। এই বিক্ষোভ প্রসঙ্গে জগন্নাথ বলেন, ‘‘সংসদের কিছু রীতিনীতি আছে। শপথ সংক্রান্ত বিষয়ে সংবিধান ও চেয়ারম্যান সিদ্ধান্ত নেন। তৃণমূল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ে হট্টগোল করছে।’’ পাল্টা মুকুটমণি বলেন, ‘‘গুরুচাঁদ-হরিচাঁদ মতুয়া সম্প্রদায়ের কাছে ভগবান। তাই তাঁর নামে শপথ নিতে চাওয়া কোনও অন্যায় নয়। আজকের এই বিক্ষোভ যথাযথ এবং মতুয়া সম্প্রদায়ের মর্যাদার লড়াই।’’
মতুয়া সমাজের প্রথম নারী হিসেবে গত বুধবার রাজ্যসভায় শপথ নিয়েছেন মমতাবালা। কিন্তু শপথ নিতে গিয়ে তাঁকে ‘রাজনীতির’ মুখোমুখি হতে হয়েছে বলে অভিযোগ। তাঁর দাবি, রাজ্যসভার সাংসদ পদে তাঁর আরাধ্য দেবতা হরিচাঁদ-গুরুচাঁদ ঠাকুরের নামে শপথ নিয়েছিলেন তিনি। পরে সেই শপথ বাতিল করে নতুন করে শপথ নিতে বলা হয়। মমতাবালা বলেন, “২০১৪ সালে কপিলকৃষ্ণ ঠাকুর হরিচাঁদ-গুরুচাঁদ ঠাকুরের নামেই শপথ নিয়েছিলেন সংসদে। আমি নিজেও এর আগে লোকসভার সাংসদ হিসাবে শপথ নেওয়ার সময় ঠাকুরের নাম নিয়েছিলাম।” এই ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং শাহকে নিশানা করেছেন মমতাবালা। তাঁর দাবি, মোদী-শাহের নির্দেশেই এটা করা হয়েছে। পরে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেন, “হরিদাঁদ ঠাকুর ও গুরুচাঁদ ঠাকুরের নাম করায় রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড় শপথ অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেন। এই জন্যই আমরা বিজেপিকে বাংলা-বিরোধী বলি।”
এই ঘটনায় পরে মমতাবালাকে পাল্টা বিঁধেছেন শান্তনু। তিনি বলেন, “এক জন অশিক্ষিত মানুষকে সংসদে পাঠালে যা হয়। ভারতের সংবিধান তো মানতে হবে। ওঁর (মমতাবালা) উচিত ছিল শপথের শুরুতে বা শেষে বলা ‘জয় হরিচাঁদ, জয় গুরুচাঁদ’। আমি তা-ই বলেছিলাম। তার পরে বলেছিলাম ঈশ্বরের নামে শপথ...। এটা করলে সমস্যা হত না।”