প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। — ফাইল চিত্র।
ঝড়ে দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানো, চা মহল্লার ‘আপনজন’ হওয়া প্রসঙ্গে জলপাইগুড়িতে গত শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন করেছিলেন, “প্রধানমন্ত্রী জলপাইগুড়ির কথা তো এক বারও বলেননি? মোদী গ্যারান্টি কোথায় গেল?” আজ, রবিবার জলপাইগুড়িরই ধূপগুড়িতে জনসভা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। ঝড় এবং চা বাগান— এই দুই নিয়েই ‘মোদী গ্যারান্টি’কে কটাক্ষ করে পাল্টা ‘মমতা গ্যারান্টি’র কথা বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। জবাবে আজ কী বলেন প্রধানমন্ত্রী, তা নিয়ে আগ্রহ রয়েছে রাজনৈতিক স্তরে।
শেষ মুহূর্তে বদল না হলে আজ ধূপগুড়ির সভাস্থলে ঝড়ে বিধ্বস্ত দশটি পরিবারের সঙ্গে কথা বলবেন প্রধানমন্ত্রী। সভামঞ্চে ওঠার আগে বা পরে মঞ্চের পিছনে তৈরি ছাউনিতে মোদী ওই পরিবারগুলির সঙ্গে কথা বলবেন। ঝড়-দুর্গতদের সাহায্যেরও কোনও আলোচনা করতে পারেন। এ নিয়ে জেলা বিজেপি সভাপতি বাপি গোস্বামী অবশ্য মন্তব্য করতে চাননি।
জলপাইগুড়ি জেলায় চা বলয়ের ‘আশীর্বাদ’ না পেলে কোনও দলের ভোটে জেতা যে সম্ভব নয়, তা বরাবর প্রমাণিত। তৃণমূল ইতিমধ্যেই চা শ্রমিকদের জমির পাট্টা বিলির সিদ্ধান্ত ফলাও করে প্রচার করছে, সভায় থেকে সভায় বলছেন মুখ্যমন্ত্রী নিজেই। মুখ্যমন্ত্রীর ‘চা সুন্দরী’-সহ চা শ্রমিকদের দেওয়া প্রতিশ্রুতির পাল্টা পাঁচ দফা প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রচারে নেমেছে বিজেপি। তাদের বক্তব্য, চা শ্রমিকদের জমির মালিকানার বদলে পাট্টা দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। এর আইনি বৈধতা কী? চা শ্রমিকদের অন্যান্য সুবিধা বন্ধ করা হয়েছে কেন? কেন তাঁদের অবসরের বয়স ৬০ বছর থেকে কমিয়ে ৫৮ করা হল? কেন ন্যূনতম মজুরি দেওয়া হচ্ছে না? পিএফ-সহ অন্যান্য সুযোগসুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে জেনেও রাজ্য কেন মালিকদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করছে না? স্থানীয় বিজেপি নেতাদের দাবি, চা শ্রমিক ও আদিবাসী-জনজাতি মানুষের স্বার্থ সুরক্ষিত হয় এমন কোনও গ্যারান্টি প্রধানমন্ত্রীর মুখে শোনা গেলে বিস্তীর্ণ চা বলয়ের ভোট বিজেপির পক্ষে আসা সময়ের অপেক্ষা। আলিপুরদুয়ারের বিজেপি প্রার্থী মনোজ টিগ্গা বলেন, ‘‘বিগত ৩৪ বছর এবং বর্তমান ১৩ বছরে উত্তরবঙ্গ, বিশেষ করে চা বলয় বঞ্চিত হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী প্রতিনিয়ত ভুল বুঝিয়ে চলেছেন। আমরা সেখানে মোদীর গ্যারান্টি চাই। মোদীর গ্যারান্টি মানে উজ্জ্বলা যোজনায় চা বাগানে রান্নার গ্যাস, প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনায় রেশনের চাল। রাজ্য সরকার অসহযোগিতা করার মেজাজে থাকলে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় কেন্দ্রের পক্ষে সবটা করা সম্ভব হবে না।’’ পাল্টা রাজগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক খগেশ্বর রায় বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই চা শ্রমিকদের অধিকার দিয়েছেন, জমির অধিকার থেকে মজুরি সবই। বিজেপি অপপ্রচার করছে। শ্রমিকদের কোটি কোটি টাকা পিএফ বাকি, সে নিয়ে মোদী কী বলবেন?”
বিজেপি সূত্রের খবর, ধূপগুড়ির ময়নাতলির মাঠের সভা থেকে যোগাযোগ ও পর্যটন নিয়ে আশ্বাসও শোনাতে পারেন মোদী। যোগাযোগের মধ্যে সড়ক পরিকাঠামো ও রেল নিয়ে বলতে পারেন তিনি। জলপাইগুড়ি জেলায় বন্দে ভারতের স্টপ-সহ নানা বিষয়ে ভোট-আশ্বাসও থাকতে পারে বলে খবর। প্রধানমন্ত্রীর সভাস্থল লাগোয়া এলাকাগুলিতে মতুয়া এবং নমঃশূদ্র সম্প্রদায়ের মানুষজনের বাস। ফলে সিএএ নিয়েও প্রধানমন্ত্রী বলতে পারেন বলে দাবি বিজেপি নেতাদের। জেলা বিজেপির এক নেতার কথায়, “মোদীর মুখে পরিকাঠামো উন্নয়ন সংক্রান্ত কিছু আশ্বাস শুনতে চাই।”