মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফেসবুক।
সর্বভারতীয় স্তরে বিজেপি-বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ সরকার গড়লে তৃণমূলের অবস্থান কী হবে, তা নিয়ে বুধবার হুগলির চুঁচুড়ার সভায় মন্তব্য করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সেই মন্তব্যের ‘ব্যাখ্যা’ দিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার তমলুকের সভা থেকে তৃণমূলনেত্রী বলেছেন, তাঁর কথার ‘ভুল ব্যাখ্যা’ করা হচ্ছে। ফলে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।
দেবাংশু ভট্টাচার্যের সমর্থনে তমলুকের সভায় মমতা বলেন ‘‘অল ইন্ডিয়া লেভেলে (সর্বভারতীয় স্তরে) আমরা বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ তৈরি করেছিলাম। আমরা জোটে থাকব। অনেকে আমাকে ভুল বুঝেছে। আমি জোটে আছি। আমি ওই জোট তৈরি করেছি। আমি জোটে থাকবও। এখানকার সিপিএম নেই। এখানকার কংগ্রেস নেই। কিন্তু সর্বভারতীয় স্তরে আমরা জোটে থাকব। ভুল বোঝাবুঝির কোনও জায়গা নেই। ভুল খবর ছড়িয়েছে। এতে বিভ্রান্তি হচ্ছে। ’’
বুধবার মমতা বলেছিলেন, “ইন্ডিয়াকে নেতৃত্ব দিয়ে, বাইরে থেকে সব রকম সাহায্য করে আমরা সরকার গঠন করে দেব। যাতে বাংলায় আমার মা-বোনেদের কোনও দিন অসুবিধা না হয়। ১০০ দিনের কাজে কোনও দিন অসুবিধা না হয়।’’ অর্থাৎ, কেন্দ্রে ‘ইন্ডিয়া’ সরকার গঠন করলে তৃণমূল সেই সরকারে যাবে না। তারা বাইরেই থাকবে। বাইরে থেকে সরকারকে সমর্থন দেবে। দলের সর্বোচ্চ নেত্রীর ওই বক্তব্যের ব্যাখ্যা তৃণমূলের অনেকেই দিতে পারছিলেন না। একাধিক প্রথম সারির নেতা মমতার ওই বক্তব্য নিয়ে বুধবার বিকাল থেকে গবেষণা শুরু করেছিলেন। বৃহস্পতিবার সেই ‘বিভ্রান্তি’ নিজেই দূর করতে চেয়েছেন মমতা।
তৃণমূলনেত্রীর ওই বক্তব্য নিয়ে স্বভাবতই ময়দানে নেমেছে কংগ্রেস, সিপিএম। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেছেন, ‘‘উনি জোট থেকে পালিয়ে গিয়েছেন! ওঁর কোনও কথায় আমি ভরসা করি না। এখন দেখছেন হাওয়া বদলাচ্ছে, তাই এ দিকে ভিড়তে চাইছেন। বিজেপির দিকে পাল্লাভারী দেখলে ও দিকে যাবেন।’’ সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘আমরা তো গোড়া থেকেই বলছি, বিজেপি-বিরোধী লড়াইয়ে মমতার কোনও বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। এই দোদুল্যমানতা স্পষ্ট করে দিয়েছে, আসলে উনি বিজেপিকে বার্তা দিয়েছেন, ভাইপো যেন ভিতরে না যায়। দু’নৌকোয় পা দিয়ে চলতে চাইছেন।’’ বাম-কংগ্রেসের বক্তব্য ছিল যে, মমতা দু’দিকই খোলা রাখতে চাইছেন। মমতার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী পাল্টা মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘ওঁর (মমতার) সহায়তা আর স্যান্ডো গেঞ্জির বুকপকেট একই ব্যাপার!’’
মিলিজুলি সরকারকে বাইরে থেকে সমর্থনের রেওয়াজ দেশে নতুন নয়। ১৯৯৮ সালে অটলবিহারী বাজপেয়ীর ১৩ মাসের সরকারকে বাইরে থেকে সমর্থন করেছিলেন মমতা। আবার ১৯৯৯ সালের ভোটে বাজপেয়ী সরকারেই মন্ত্রী হয়েছিলেন মমতা। মনমোহন সিংহের নেতৃত্বাধীন প্রথম ইউপিএ সরকারকে বাইরে থেকে সমর্থন দিয়েছিল বামেরা। ফলে মমতার বুধবারের মন্তব্য নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছিল। তৃণমূলের মধ্যে কৌতূহলও তৈরি হয়েছিল দলের অবস্থান নিয়ে। বৃহস্পতিবার মমতা জানিয়েছেন, তৃণমূল ‘ইন্ডিয়া’য় আছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে তারা সিপিএম এবং কংগ্রেসের সঙ্গে নেই।
অনেকের মতে, ভোটের দফা যত গড়াচ্ছে, তত বেশি করে ফলাফল নিয়ে আগাম দাবি করা এবং অবস্থান জানানো শুরু হয়েছে। কেউ কেউ এমনও বলছেন যে, কিছু নির্বাচন বিশেষজ্ঞের অনুমান রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের ‘প্রভাবিত’ করছে। প্রশান্ত কিশোর যেমন ভোটের আগেই ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, দিল্লিতে তো নরেন্দ্র মোদী বিপুল গরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ফিরছেনই, বাংলাতেও পদ্মশিবির তৃণমূলের থেকে বেশি আসন পাবে। আবার সম্প্রতি যোগেন্দ্র যাদব বলেছেন, বিজেপি একা খুব বেশি হলে ২৩৩টি আসন জিততে পারে। এনডিএ শরিকদের আসন ধরলেও ম্যাজিক সংখ্যা (২৭২) ছুঁতে পারবেন না মোদী-অমিত শাহেরা। যোগেন্দ্র দীর্ঘ দিন নির্বাচনী সমীক্ষা করেছেন। তার পর তিনি আপ এবং তার পরে আপ ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন। অধুনা তিনি নিজের একটি দল গড়েছেন। তৃণমূলের সঙ্গেও তাঁর সখ্য রয়েছে। যোগেন্দ্র ওই কথা বলার পরেই মমতা ‘ইন্ডিয়া’র সরকারকে বাইরে থেকে সমর্থন দেওয়ার কথা বলায় জল্পনা আরও জোরালো হয়েছিল তৃণমূলের অন্দরে।