অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।
তখন তিনি বিচারপতির আসনে। বিচারপ্রার্থী এক মহিলা বলেছিলেন, “আপনাকে আমরা ভগবানের মতো দেখি।” শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে সেই সময় ভূরি ভূরি মামলা হচ্ছে। বঞ্চিত সেই সমস্ত চাকরিপ্রার্থীর কাছে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় তখন ছিলেন আশার আলো।
সেই অভিজিৎ বিচারপতির চাকরি ছেড়ে এ বার লোকসভা ভোটে লড়ছেন। পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী তিনি। এই ভূমিকা-বদলে কিন্তু এক সময় তাঁকে ভগবানের চোখে দেখা চাকরিপ্রার্থীদের অনেকে মোটেই খুশি নন। আর বিচারপতি অভিজিতের নির্দেশে যাঁরা চাকরি খুইয়েছিলেন, তাঁরাও ক্ষুব্ধ। দু’তরফেই অনেকে বলছেন, ‘নো ভোট টু অভিজিৎ’।
নন্দীগ্রাম, তমলুক তো বটেই, পূর্ব মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ এলাকার বহু চাকরিপ্রার্থীর কাছেই বিচারপতি অভিজিৎ ছিলেন দুর্নীতি-বিরোধী আন্দোলনে আশা-ভরসা। তাঁর সেই ভাবমূর্তি সামনে রেখেই তাঁকে ভোটে প্রার্থী করেছে বিজেপি। কিন্তু এক সময় বিচারপতি অভিজিৎকে দেখে সুবিচারের আশায় বুকবাঁধা বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীরা এখন বলছেন, উনি ন্যায়ের ধ্বজা উড়িয়েছিলেন নিজের স্বার্থে। সেই স্বার্থপূরণে এখন ভোটের রাজনীতিতে এসেছেন।
অভিজিৎ যে কেন্দ্রে লড়ছেন, সেই তমলুকের মধ্যেই পড়ে নন্দীগ্রাম। সেখানকার মনোহরপুরের বাসিন্দা গৃহহবধূ লক্ষ্মী তুঙ্গ দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পরে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে আশায় বুক বেঁধেছিলেন। একপ্রকার ধরেই নিয়েছিলেন যে, এ বার হাতে পাবেন স্কুল সার্ভিস কমিশনের গ্রুপ ডি কর্মীর নিয়োগপত্র। কিন্তু অভিজিৎ এখন আর বিচারপতি নেই। মামলাও মামলার মতো চলছে। লক্ষ্মীর স্বামী অতনু তুঙ্গ বলছেন, “চাকরিপ্রার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ওঁর সব আস্ফালনই নিষ্ফল। সেটা ভোটে দাঁড়িয়ে উনি নিজেই প্রমাণ করেছেন। এমন লোককে কী ভাবে ভরসা করা যায়!”
বিচারপতি অভিজিতের নির্দেশে শিক্ষকের চাকরি হারিয়েছিলেন, এমন অনেকেই আবার শীর্ষ আদালতের নির্দেশে পুনর্বহাল হয়েছেন। তাঁদেরই এক জন, পূর্ব মেদিনীপুরের রামনগরের বাসিন্দা কল্যাণ দাস। তিনিও বলছেন, “চাকরি ফেরত পেয়েছি ঠিকই। কিন্তু ভুয়ো শিক্ষকের তকমাটা তো এত সহজে মুছে ফেলা যাবে না। অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বিচারকের আসনে বসে একতরফা বিচার করে গিয়েছেন। এখন বোঝা যাচ্ছে, সবটাই তিনি করেছেন কাউকে খুশি করতে।” কল্যাণ স্পষ্ট বলছেন, “সমস্ত মুখোশ খুলে গিয়েছে। সকলকে বলছি, ‘নো ভোট টু অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়’।”
ভোটের ময়দানে অভিজিতের প্রতিপক্ষ, তৃণমূল প্রার্থী দেবাংশু ভট্টাচার্যের দাবি, “অনেক দিন আগে থেকেই বিজেপির সঙ্গে ওঁর যোগাযোগ ছিল। তখন যাঁরা ওঁকে ভগবানের আসনে বসিয়েছিলেন, এখন তাঁরাই টেনে নামাবেন।” অভিজিৎ অবশ্য বলছেন, “যাঁরা চাকরি পাওয়ার যোগ্য নন, আমি তাঁদেরই চাকরি খারিজের নির্দেশ দিয়েছিলাম।”
অনেকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন, বিচারপতি থাকাকালীন ‘ভগবান’ সম্বোধন শুনে অভিজিৎ বলেছিলেন, “আমি আর আগের মতো নেই। আর ভগবান-টগবান নই। আমি শয়তান হয়ে গিয়েছি।”