Lok Sabha Election 2024

হুগলিতে আর লকেটকে চান না দলের অনেকেই, ক্ষোভে পোস্ট সমাজমাধ্যমেও, দ্বন্দ্ব প্রকট

সদ্য প্রাক্তন দলের ওবিসি মোর্চার সাধারণ সম্পাদক দিলীপ দাস হুগলিরই বাসিন্দা। রবিবার তিনি নিজের ফেসবুক পেজে লকেটের ছবি দিয়ে ‘বিজেপির সোনার হুগলিকে লোহার হুগলি’ বানানোর জন্য তাঁকেই দায়ী করেছেন।

Advertisement

সুদীপ দাস

চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৮:৫৫
Share:

সাংসদ লকেট চট্ট্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।

সামনে লোকসভা নির্বাচন। ঘর গোছানোর পরিবর্তে হুগলি লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ক্রমশ প্রকট হচ্ছে। বর্তমান সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ের কাজকর্ম নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। এমনকি, সমাজমাধ্যমেও এ নিয়ে পোস্ট করতে তাঁরা ছাড়ছেন না। তাঁরা যে এই কেন্দ্রে আর লকেটকে চান না, তা-ও বলে দিচ্ছেন নির্দ্বিধায়। ফলে, অস্বস্তি বাড়ছে জেলা বিজেপিতে।

Advertisement

সদ্য প্রাক্তন দলের ওবিসি মোর্চার সাধারণ সম্পাদক দিলীপ দাস হুগলিরই বাসিন্দা। রবিবার তিনি নিজের ফেসবুক পেজে লকেটের ছবি দিয়ে ‘বিজেপির সোনার হুগলিকে লোহার হুগলি’ বানানোর জন্য তাঁকেই দায়ী করেছেন। ‘লকেট হুগলি থেকে দূর হটো’, এমন কথাও সেখানে লেখা হয়েছে। দিলীপ বলেন, ‘‘আমি সজ্ঞানেই ওই পোস্ট করেছি। আমাদের সাংসদ ব্যক্তিগত ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে দলের সর্বনাশ করেছেন।’’

আর এক কর্মীর ফেসবুক পোস্টে লেখা হয়েছে, ‘দিল্লি এ বার স্বপ্ন’। দলের ওবিসি মোর্চার স্বাস্থ্য সেলের সদস্য দীপক কর্মকার পোস্টে জানিয়েছেন, বাঁকুড়া এবং হুগলি— দুই কেন্দ্রের কপালেই এ বার গভীর দুঃখ আছে। এমনকি, ‘বেইমান’, ‘তোলাবাজ’, ‘চিটিংবাজ’ বলেও লকেটকে কটাক্ষ করেছেন কেউ কেউ।

Advertisement

কিন্তু কেন এত ক্ষোভ?

দলীয় নেতাদের অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, পাঁচ বছরে এই লোকসভা কেন্দ্রে সাংসদ উন্নয়নমূলক কাজ কতটা করেছেন, তা নিয়ে। এমনকি, তাঁর কাছে কাজের আবেদন করা সত্ত্বেও সাংসদ কর্ণপাত করেননি, এই অভিযোগও শোনা যাচ্ছে। সাংগঠনিক ভাবেও লকেটের ভূমিকা নিয়ে চর্চা চলছে। জেলা বিজেপির একটি বড় অংশের অভিযোগ, সাংসদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ তৃণমূল ছেড়ে আসা লোকজন এবং দলের নতুনরা। তিনি ফোন ধরেন না। একটি শংসাপত্রের জন্য মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হয়। নিজের ইচ্ছেমতো পদাধিকারীদের সরিয়ে দেন।

দীপক বলেন, ‘‘১৯৯৬ সাল থেকে দল করছি। কিন্তু লকেট চট্টোপাধ্যায় সাংসদ হওয়ার পর থেকেই গুরুত্ব হারিয়েছি। উনি (লকেট) পুরনো সকলকে বাদ দিয়ে নিজের মতো করে দল চালাচ্ছেন।’’ সপ্তগ্রামের এক দলীয় কর্মীর কথায়, ‘‘দলের জন্য খাটব। অথচ, সাংসদ নিজের মতো করে ‘দিদিগিরি'’ দেখাবেন, এটা হতে পারে না। তাই লকেটহীন হুগলি দেখতে চাই।’’ বলাগড়ের এক নেতা বলেন, ‘‘এ বার লকেটকে টিকিট দেওয়া হলে দলেরই একটা বড় অংশ বসে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’’

হুগলিতে লকেটকে নিয়ে দলীয় কোন্দল অবশ্য নতুন নয়। গত লোকসভা নির্বাচনের সময় তা প্রকাশ্যে এসেছিল। গত বিধানসভা নির্বাচনে হুগলি লোকসভায় সদ্য তৃণমূল ছেড়ে আসা একাধিক ব্যক্তি বিজেপির টিকিট পান। এতে বিক্ষোভ হয়। এর পিছনে বিক্ষোভকারীদের সকলেই লকেটকে দায়ী করেন।

সিঙ্গুরের এক বিজেপি কর্মীর অভিযোগ, ‘‘এমন একজন সাংসদের জন্য আখেরে দলেরই ক্ষতি হল।’’ সদ্য প্রাক্তন দলের হুগলি সাংগঠনিক জেলার আহ্বায়ক (সমাজমাধ্যম) শাশ্বত বন্দ্যোপাধ্যায়ের জায়গায় বসানো হয়েছে সাংসদের আপ্ত সহায়ক অভিষেক পালকে। শাশ্বতর দাবি, কী কারণে তাঁকে সরানো হল, তিনি জানেন না।

কী বলছেন লকেট?

লকেট উন্নয়নের কাজ না করার অভিযোগ মানেননি। তিনি বলেন, ‘‘কার কী ক্ষোভ রয়েছে, জানি না। তবে, আমার বিরুদ্ধে যাঁদের ক্ষোভ রয়েছে, তাঁদেরকে আমার সঙ্গে কথা বলার আবেদন জানাচ্ছি।’’

সব শুনে তৃণমূলের হুগলি-শ্রীরামপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অরিন্দম গুঁইনের খোঁচা, ‘‘অন্য দলে কী হচ্ছে জানি না। তবে, হুগলির সাংসদকে সাধারণ মানুষ ৫ বছর পাননি, এটা বাস্তব। এ বারের নির্বাচনে মানুষ তার জবাব দেবেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement