মঙ্গলকোটে এই তৃণমূল কার্যালয় ঘিরে গোলমাল। নিজস্ব চিত্র
দলেরই কার্যালয় দখল ঘিরে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর দ্বন্দ্বে তপ্ত হল মঙ্গলকোট। শুক্রবার সকালে মঙ্গলকোটে থানার পাশেই তৃণমূলের ব্লক কার্যালয়টি অন্য দিনের মতো খুলে পরিষ্কার করার পরেই জনা পঞ্চাশ লোক এসে তাঁদের মারধর করে বার করে দেন বলে অভিযোগ তৃণমূল কর্মীদের। হামলাকারীরা দলেরই লোক বলে দাবি তাঁদের। খবর পেয়ে আশপাশের তৃণমূল কর্মীরা জড়ো হন। শেষে পুলিশ সবাইকে বার করে দিয়ে কার্যালয়টিতে তালা ঝুলিয়ে দেয়। মোতায়েন করা হয় কেন্দ্রীয় বাহিনী।
তৃণমূলের একাংশের দাবি, ওই কার্যালয়টি দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক চন্দন সরকার ওরফে শান্তর অনুগামীরা ব্যবহার করেন। এ দিন সেটি মঙ্গলকোটের তৃণমূল বিধায়ক অপূর্ব চৌধুরী ও তাঁর অনুগামী মঙ্গলকোট পঞ্চায়েতের উপপ্রধান রহিম মল্লিকের লোক বলে এলাকায় পরিচিত কর্মীরা দখলের চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ। বিধায়কের অনুগামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন শান্তও। তবে বিধায়ক তা মানতে চাননি। এই ঘটনা নিয়ে দিনভরই উত্তপ্ত থাকে এলাকা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নতুনহাট-নিগন রোডের উপরে থানা থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে রয়েছে দোতলা এই তৃণমূল কার্যালয়টি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাটআউট ও দলীয় পতাকায় মোড়া কার্যালয়ে লেখা রয়েছে ‘মঙ্গলকোট ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস কার্যালয়’। সেখানেই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত একটি ঘরে বসেন শান্ত। তিনি মঙ্গলকোট পঞ্চায়েতের প্রাক্তন উপপ্রধান। গত পঞ্চায়েত ভোটে তিনি ও তাঁর অনুগামীরা দলের টিকিট পাননি। পায়ের তলার জমি শক্ত করে উপপ্রধান হন রহিম। তবে এত দিন রহিম ও তাঁর অনুগামীরা ওই কার্যালয়ে ঢুকতেন না। অফিসটি শান্তর অনুগামীদের দখলেই ছিল। দলের একাংশের দাবি, কয়েক মাস ধরেই কার্যালয়টি দখলের পরিকল্পনা হচ্ছিল। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের আবার দাবি, বালি কারবারের বখরা নিয়ে তৃণমূলের দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে টানাপড়েন রয়েছে এলাকায়।
শান্ত দাবি করেন, “দলকে ভালবেসে আমাদের পারিবারিক জমিতে কার্যালয়টি কষ্ট করে গড়ে তুলেছি। এ দিন সকালে অন্য দিনের মতো কয়েক জন কর্মী অফিস খুলে পরিষ্কার করছিলেন। সেই সময়ে বিধায়ক অপূর্ব চৌধুরীর মদতে রহিম মল্লিক আচমকা প্রায় ৫০-৬০ জন লোক নিয়ে এসে অফিসটি দখল করে। অনেকের হাতে লাঠিসোটা ও অস্ত্র ছিল। আমাদের কয়েক জন কর্মীকে বেধড়ক মারধর করা হয়। পুলিশ ও দলীয় নেতৃত্বকে সব জানিয়েছি। এই অন্যায় মেনে নেব না।’’
রহিম মল্লিককে এ দিন বারবার ফোন করা হলেও কোনও উত্তর মেলেনি। তবে মঙ্গলকোটের বিধায়ক তথা জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান অপূর্ব চৌধুরীর বক্তব্য, “আমাদের কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই। সবাই তৃণমূলের। একটা ভুল বোঝাবুঝি থেকে অশান্তি হতে পারে, পুলিশের কাছে এমন খবর ছিল। তাই পুলিশ ওই কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে কেন্দ্রীয় বাহিনী রেখেছে বলে শুনেছি। বিশদে খোঁজ নিচ্ছি। তবে কোনও মারামারি হয়নি।’’
পুলিশ জানায়, ওই কার্যালয়টি আপাতত বন্ধ করে রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি নজরে রাখা হচ্ছে। লিখিত কোনও অভিযোগ এ দিন জমা পড়েনি।