(বাঁ দিকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অধীর চৌধুরী (ডান দিকে)। —ফাইল ছবি।
মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের কার্তিক মহারাজের বিরুদ্ধে সরাসরি রাজনীতি করার অভিযোগ তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রকাশ্য মঞ্চ থেকে এ-ও বলেছেন, ‘‘কার্তিক মহারাজ রেজিনগরের হিংসার হোতা।’’ মমতার বিরোধিতা করতে গিয়ে সোমবার কার্তিকের পাশে দাঁড়াননি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। তবে মঙ্গলবার সাধু-সন্তদের নিয়ে মমতার বক্তব্যের প্রসঙ্গ তুলে তোপ দাগলেন মমতার বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার অধীর বলেন, ‘‘সাধুদের নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এমনি এমনি বলেননি। সাধুদের কটূক্তি করার মধ্যে দিয়ে উনি তৃণমূলে পায়ের তলা থেকে হারিয়ে যাওয়া ভোটকে দখলে রাখতে চাইছেন।’’ ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে অধীর বলেন, ‘‘উনি ভাবছেন সাধু-সন্তদের কটূক্তি করলে সংখ্যালঘু মানুষ খুশি হয়ে ভোট দেবেন। এই ধরনের নিকৃষ্ট রাজনীতি করতে উনি অভ্যস্ত।’’ অধীরের এ-ও বক্তব্য, মমতা এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মিলে ধর্মীয় মেরুকরণকে তীব্র করতে চাইছেন।
এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের তারকা প্রচারক কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী কোনও প্রতিষ্ঠানকে অসম্মান করেননি। তিনি ব্যক্তিবিশেষের ভূমিকা সম্পর্কে বলেছেন।’’
কার্তিক মহারাজ সম্পর্কে মমতার কথার প্রতিক্রিয়ায় সোমবার অধীর বলেছিলেন, ‘‘যাঁর কথা বলেছেন, তাঁর পরিচিতি নিয়ে এখানে (মুর্শিদাবাদ) বহু মানুষের প্রশ্ন রয়েছে। সাধু-সন্তের যে রকম চরিত্র হওয়া প্রয়োজন, সেই চরিত্র তাঁর নেই। উনি সরাসরি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসাবেই এখানকার মানুষের কাছে পরিচিত। উনি কখনও তৃণমূলের, কখনও বিজেপির! উনি কখন কোন দলের সমর্থক, তা নিয়ে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি রয়েছে।’’ কার্তিক মহারাজকে ‘উপদেশ’ও দিয়েছেন অধীর। তাঁর কথায়, ‘‘ধর্মের কথা অন্যকে না-বলে, নিজে শিখুন, নিজে পড়ুন। আপনি আচরি ধর্ম। নিজে আগে ধর্ম পালন করুন, তার পর লোককে শেখান।’’ পাল্টা অধীরকেও বিঁধেছেন ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের বেলডাঙা শাখার অধ্যক্ষ কার্তিক মহারাজ (স্বামী প্রদীপ্তানন্দ)। তিনি বলেন, ‘‘আমি কোনও ডন নই, আমি মস্তান বাহিনী পরিচালনা করি না। আমি হিন্দু সমাজের সন্ন্যাসী। আমি সমাজ, ধর্ম, সংস্কৃতি নিয়ে চলি। হিন্দুরা কোথাও আক্রান্ত হলে আমি চুপ থাকতে পারি না।’’
মমতার বক্তব্য নিয়ে রাজ্য রাজনীতি তোলপাড়। প্রধানমন্ত্রী প্রচারে এসেও তৃণমূলনেত্রীর বক্তৃতাকে হাতিয়ার করে আক্রমণ শানিয়েছেন। মঙ্গলবার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী আবার এক ইমামের নাম করে সমালোচনা করেছেন। এই প্রেক্ষাপটকে মেরুকরণের কৌশল বলে তোপ দেগেছেন অধীর। তাঁর কথায়, জনগণের আশু সমস্যা থেকে নজর ঘোরানোর জন্যই এই কৌশল নেওয়া হচ্ছে।