Mamata Banerjee on his visit to Sandeshkhali

কবে যাবেন সন্দেশখালি? বসিরহাটে ভোটের প্রচারে গিয়ে আগাম জানিয়ে দিয়ে এলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা

জানুয়ারি থেকে উত্তপ্ত হতে শুরু করেছে সন্দেশখালি। ইডির উপরে হামলার পরে একে একে শাহজাহান শেখ এবং তাঁর শাগরেদদের বিরুদ্ধে জমিদখল, ধর্ষণের অভিযোগ গড়িয়েছে সন্দেশখালি আন্দোলনে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ মে ২০২৪ ১৮:৫৩
Share:

গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।

তাঁর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়াকে সব বিরোধী দলই সমঝে চলে। প্রকাশ্যে না-বললেও, ঘনিষ্ঠ বৃত্তে রাজ্যের অনেক বিরোধী নেতাই স্বীকার করেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে শুরু করে ঘটনা-দুর্ঘটনার অভিঘাতের আঁচ পেলে, যে তৎপরতায় ছুটে যান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তার সঙ্গে পাল্লা দেওয়া শক্ত। শুধু এখন নয়, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বা বাংলার বিরোধী নেত্রী থাকার সময় থেকেই তিনি এ রকম। সেই মমতাই সন্দেশখালি পর্বের সাড়ে চার মাস পেরিয়ে যাওয়ার পরও সেখানে যাননি। মঙ্গলবার গেলেন সন্দেশখালির লোকসভা কেন্দ্র বসিরহাটের অন্য প্রান্তে, সংগ্রামপুরে। তৃণমূল প্রার্থী হাজি শেখ নুরুল ইসলামের সমর্থনে প্রচার সভা করলেন। এবং সেখান থেকেই জানিয়ে দিলেন, কবে তিনি পা রাখবেন সন্দেশখালির মাটিতে।

Advertisement

জানুয়ারি মাস থেকে একটু একটু করে উত্তপ্ত হয়েছে সন্দেশখালি। ইডির উপরে হামলা দিয়ে শুরু। তার পরে একে একে শাহজাহান শেখ এবং তাঁর শাগরেদদের বিরুদ্ধে জমিদখল, ধর্ষণের অভিযোগ, সন্দেশখালির বাসিন্দাদের নিয়ে বিরোধীদের আন্দোলন, পরে শাহজাহানের গ্রেফতারি এবং শেষে গঙ্গাধর কয়ালের স্টিং ভিডিয়ো প্রকাশ (ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন)। গত সাড়ে চার মাসের এই পর্বে মমতা নিজে সন্দেশখালিতে না গেলেও তাঁর মন্ত্রীদের পাঠিয়েছেন। পাঠিয়েছেন প্রশাসনিক কর্তাদের। তাঁর পুলিশই গ্রেফতার করেছে শাহজাহানকে। কিন্তু মমতা দূরে থেকে অসত্য অভিযোগের তোপ দাগলেও সন্দেশখালিতে যাননি। যাননি বসিরহাটেও। যদিও মমতা জানতেন, লোকসভা ভোটের প্রচারে তাঁকে বসিরহাটে কখনও না কখনও যেতেই হবে।

ফেব্রুয়ারির শেষ থেকেই লোকসভা ভোটের দামামা বেজে গিয়েছিল রাজ্যে। ২৯ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতার হন শাহজাহান। মমতা তখন বিভিন্ন জেলায় সভা করতে শুরু করেছেন। ঘনিষ্ঠ মহলে সেই সময়ে সন্দেশখালিতেও যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন মমতা। এ ব্যাপারে প্রস্তুতি নেওয়ার কথাও বলেছিলেন। কিন্তু প্রশাসনের তরফেই তাঁকে সেখানে না-যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। তৃণমূল সূত্রে খবর, প্রশাসনের তরফে মমতাকে বলা হয়েছিল, সন্দেশখালির পরিস্থিতি ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণে আসছে। এই সময়ে মমতার না-যাওয়াই ভাল।

Advertisement

এর মধ্যেই ভোট ঘোষণা এবং প্রচারে তৃণমূল নেত্রীর ব্যস্ত হয়ে পড়া। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এসে যখন সন্দেশখালির অভিযোগকারিণীদের সঙ্গে কথা বলেছেন বারাসতে, তখনও দূরে থেকেছেন মমতা। তবে তাঁর প্রতিটি প্রচারেই ঘুরে ফিরে আসত সন্দেশখালি প্রসঙ্গ। মমতা কখনও বলতেন, ‘‘ওখানে জমি সংক্রান্ত কয়েকটা সমস্যা ছিল। আমরা কথা বলিয়ে মিটিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি।’’ কখনও বলেছেন, ‘‘এ রাজ্যে মহিলাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করলে কাউকে রেয়াত করা হবে না।’’ কিন্তু সন্দেশখালির এই পরিস্থিতিই আচমকাই ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে যায় গোপন ক্যামেরায় তোলা ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসার পর। গত ৩ মে ওই ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসে। তাতে দেখা যায় সন্দেশখালি-২-এর বিজেপি মণ্ডল সভাপতি গঙ্গাধর কয়াল বলছেন, সন্দেশখালির আন্দোলন গোটাটাই সাজানো। সেখানে কারও ধর্ষণ হয়নি। ২০০০ টাকার বিনিময়ে রেখা পাত্র এবং আরও অনেকেই ধর্ষণের অসত্য অভিযোগ লিখিয়েছেন। তাঁদের দিয়ে সাদা কাগজে সই করিয়ে বিজেপিই এই আন্দোলন চালিয়েছে বলেও দাবি করেন গঙ্গাধর। বলেন, রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী টাকা এবং ফোন দিয়ে আন্দোলনে সহায়তা করেছেন। আনন্দবাজার অনলাইন ওই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি তবে এই ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসার পর নতুন মোড় নেয় সন্দেশখালির পরিস্থিতি।

নতুন মোড় নেয় মমতার আক্রমণও। তবে সেই দূর থেকেই। বাংলার মহিলাদের সম্মানহানি করা হয়েছে, তাঁদের বুঝতেও দেওয়া হয়নি তাঁদের দিয়ে সাদা কাগজে কী লিখিয়ে নেওয়া হয়েছে— এমন অনেক কথাই প্রচার সভা থেকে বলতে থাকেন মমতা। তবে তার পরেও সন্দেশখালির সঙ্গে ‘দূরত্ব’ ঘোচেনি তাঁর।

অবশেষে মঙ্গলবার সন্দেশখালির লোকসভা ক্ষেত্র বসিরহাটে গেলেন মমতা। বক্তৃতার শুরুতেই বললেন সন্দেশখালির নাম। বললেন, ‘‘সন্দেশখালির মা-বোনেদের সঙ্গে যা ঘটেছে, তার জন্য হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে দুঃখিত। মা-বোনেদের নিয়ে যেন অসম্মানের খেলা কেউ না খেলে।... মনে রাখবেন ভোটের আগে বিজেপির প্ল্যান-‘এ’ ছিল সন্দেশখালি। বাতিল হয়ে গিয়েছে। মা বোনেরাই বাতিল করে দিয়েছেন। তবে প্ল্যান-‘বি’ আছে। তাই সাবধানে থাকবেন।’’

বসিরহাটের প্রচারসভায় মমতা যখন এই কথা বলছেন, তখন দর্শকাসন থেকে ক্রমাগত সাড়া আসছিল। এর পরেই বসিরহাটের তৃণমূল প্রার্থী হাজি শেখ নুরুল ইসলামের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে মমতা বলেন, ‘‘হাজি যদি জেতে, তবে ভোটের ফল প্রকাশের কয়েক দিনের মধ্যে আমি প্রথম সফর করব এই সন্দেশখালিতে। আমি আজ বলে গেলাম।’’ আগামী ৪ জুন লোকসভা ভোটের ফল ঘোষণা। মমতার সন্দেশখালি-যাত্রার ভবিষ্যৎও কি স্থির হয়ে যাবে ওই দিন?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement