মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ সম্পর্কে তাঁর মূল্যায়নে যে ভুল হয়েছিল, কার্যত তা কবুল করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতনে দলীয় প্রার্থী জুন মালিয়ার সমর্থনে প্রচারে এসে মমতা বলেন, ‘‘আগে ভাবতাম আরএসএস মানে ত্যাগী। ওদের মধ্যে কিছু ভাল লোক ছিল। কিন্তু আজকে ভোগ করতে করতে ভোগী হয়ে গিয়েছে!’’
দিন কয়েক আগে মেদিনীপুরে আরএসএস-বিজেপির সমন্বয় বৈঠক হয়েছে। ওই রুদ্ধদ্বার বৈঠকে যে লোকসভা ভোট-প্রচারের রণকৌশল নিয়ে কথা হয়েছে, গেরুয়া শিবির সূত্রে তার স্পষ্ট ইঙ্গিত মিলেছে। তার কয়েক দিনের মধ্যেই জেলায় প্রচারে এসে মমতা সুর চড়ালেন সঙ্ঘের বিরুদ্ধে।
মার্চের গোড়ায় পশ্চিম মেদিনীপুরে এসেও কেশিয়াড়ির মতো এলাকায় কেন সঙ্ঘের প্রভাব বাড়ছে, দলের নেতাদের কাছে তা জানতে চান মমতা। কয়েক বছরে জেলায় আরএসএসের শাখা, নতুন ভর্তি বেড়েছে। তার ফলেই কি বিজেপির চেয়েও এ দিন মমতার আক্রমণের ঝাঁঝ বেশি ছিল সঙ্ঘের বিরুদ্ধে?
বছর দুয়েক আগে, এ জেলারই এক বৈঠকে পুলিশের উদ্দেশে মমতা বলেছিলেন, ‘‘কেশিয়াড়িতে আরএসএস প্রধান এসে থাকছেন। ভাল করে প্রোটেকশন দেবেন। পারলে একটু মিষ্টি, ফল পাঠিয়ে দেবেন। নজর রাখুন ভাল করে।’’ আর এ দিন তিনি বলেন, ‘‘ভোট এসেছে। কেশিয়াড়ির আরএসএসের স্কুলের লোকেরা এ বার আপনাদের টাকাপয়সা দেবে একটু একটু! একটা মানুষ মরে গেলে পাঁচ টাকা দেয় না।’’ তাঁর পরামর্শ, ‘‘টাকাটা নিয়ে বদলে ভোটটা তৃণমূলকে দিয়ে ওদের জব্দ করে দিন।’’
আরএসএসের মেদিনীপুর জেলা কার্যবাহ সমীরণ মজুমদারের অবশ্য দাবি, ‘‘আমাদের কাজ মানুষ নির্মাণ করা। এর বাইরে আমরা কিছুই করি না।’’ তবে দেশে হিন্দুত্বের হাওয়া বাড়ছে, এই দাবি করে বলেছেন, ‘‘আমাদের কাজও দিনে দিনে বাড়ছে। ওদের জন্যই এটা হয়েছে।’’ আরএসএসের মেদিনীপুর জেলা কার্যবাহের জবাব, ‘‘কেশিয়াড়ির সম্পত্তিটা আরএসএসের নয়। সরস্বতী শিশু মন্দিরের সম্পত্তি। উনি (মমতা) হয়তো সেটা জানেন না!’’
আরএসএস সম্পর্কে মমতার অবস্থান বদল নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না বামেরা। মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রের বাম প্রার্থী বিপ্লব ভট্ট বলেন, ‘‘আরএসএস ওঁকে (মমতা) বলেছিল, দুর্গা। ওঁর জন্যই আজ এখানে আরএসএসের বাড়বাড়ন্ত হয়েছে। মানুষ বুঝে গিয়েছে, তৃণমূল এবং বিজেপি এক।’’