Mamata Banerjee on INDIA

সরকার গড়বে ‘ইন্ডিয়া’ই, সময়ের অপেক্ষা, ২৯ জয়ী প্রার্থীকে সঙ্গে নিয়ে ‘ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ’ নীতি মমতার

রবিবার প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নরেন্দ্র মোদী তৃতীয় বারের জন্য শপথ নিতে চলেছেন। তার আগে কালীঘাটে ২৯ জন জয়ী প্রার্থীকে নিয়ে বৈঠক করলেন মমতা। জানালেন, কেন্দ্রে সরকার গড়বে ‘ইন্ডিয়া’।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০২৪ ২০:১৪
Share:

জয়ী সাংসদদের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।

কেন্দ্রে সরকার গড়তে চলেছে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ই। বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার খুব বেশি দিন টিকবে না। দলের জয়ী প্রার্থীদের নিয়ে বৈঠকের পর শনিবার এমনই জানালেন তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা জানান, শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রে সরকার গড়বে ‘ইন্ডিয়া’। তাঁর কথায়, ‘‘ইন্ডিয়াই আগামী দিনে সরকার গড়বে। সেটা শুধু সময়ের অপেক্ষা। এখন আমরা শুধু পরিস্থিতির দিকে নজর রেখে চলছি।’’

Advertisement

উল্লেখ্য, ভোটের ফল ঘোষণার পর দিল্লিতে ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠক হয়েছে। তাতে যোগ দিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। অখিলেশ যাদব, রাঘব চড্ডা, উদ্ধব ঠাকরেদের সঙ্গে আলাদা করে বৈঠকও করেছেন তিনি। প্রথম দু’জনের সঙ্গে অভিষেকের বৈঠক হয়েছে দিল্লিতে। তৃতীয়জনের সঙ্গে মুম্বইয়ে গিয়ে বৈঠক করেছেন তিনি।

শনিবার মমতা জানান, আপাতত তাঁর এবং ‘ইন্ডিয়া’র শরিকদের রণনীতি ‘ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ’। অর্থাৎ, পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা এবং সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করা। পাঁচ বছর মোদী এই সরকার টেকাতে পারবেন না বলেই মনে করেন তিনি। মমতা বলেন, ‘‘এটা আপনারা কেউ ভাববেন না যে, ‘ইন্ডিয়া’ এখন কিছু করেনি বলে আগামী দিনে করবে না। আমরা অপেক্ষা করছি। কারণ, মোদীকে কেউ চায় না। এই দেশ পরিবর্তন চায়।’’ লোকসভা ভোটের ফলাফল দেখে মোদীর প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেওয়া উচিত ছিল বলেও জানান মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘এত বড় হারের পর ওঁর উচিত ছিল পদত্যাগ করা। আমি যদি সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেতাম, পদে থাকতাম না।’’ বিরোধ জোট ‘ইন্ডিয়া’ এবং এনডিএ-র শরিক নেতাদের মধ্যে তুলনাও টেনেছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘এনডিএ-তে যাঁরা আছেন, তাঁদের চাহিদা অনেক বেশি। আমরা কিছু চাই না। আমরা শুধু মানুষের ভাল চাই।’’

Advertisement

উল্লেখ্য, লোকসভায় ২৯২টি আসনে জয় পেয়েছে এনডিএ। ‘ইন্ডিয়া’ পেয়েছে ২৩৩টি আসন। এনডিএ সরকার গড়লেও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি বিজেপি। বারাণসী কেন্দ্র থেকে নরেন্দ্র মোদীর জয়ের ব্যবধানও এখনও পর্যন্ত তাঁর রাজনৈতিক জীবনে সর্বনিম্ন। এই পরিস্থিতিতে শরিক দলগুলির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে বিজেপি। তাদের সমর্থনেই রবিবার প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মোদী তৃতীয় বারের জন্য শপথ নিতে চলেছেন। মমতা জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত সেই শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে তিনি ডাক পাননি। পেলেও যেতেন না। নতুন সরকারকে শুভেচ্ছাও জানাবেন না বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে শুভেচ্ছা জানাবেন দেশের মানুষকে।

শনিবার দলীয় বৈঠকের পরে কালীঘাটের বাড়ির লাগোয়া দফতরের সামনে সাংবাদিক বৈঠকে আরও কয়েকটি প্রসঙ্গের অবতারণা করেছেন মমতা।

কমিশনের কারচুপি

বাংলায় এ বার ২৯টি আসনে জিতেছে তৃণমূল। কিন্তু মমতা দাবি করেছেন, ২৯ নয়, আসলে তাঁদের ৩৫টি আসন পাওয়ার কথা ছিল। নির্বাচন কমিশন কারচুপি করে বাকি ছ’টি আসনে তৃণমূলকে হারিয়ে দিয়েছে বলে জানান তিনি। মমতার অভিযোগ, লোডশেডিং করিয়ে তাঁদের প্রার্থীদের হারানো হয়েছে। মমতার কথায়, ‘‘আমরা ২৯ নয়, ৩৫টি আসন জিতেছি। কমিশন জোর করে, লোডশেডিং করে আমাদের হারিয়ে দিয়েছে। কমিশনের সাহায্যে আমাদের এক জন মহিলা প্রার্থীকেও হারানো হয়েছে।’’ কারচুপির প্রসঙ্গে আলাদা করে পূর্ব মেদিনীপুরের কথা বলেছেন মমতা। স্পষ্ট করে না বললেও তমলুক এবং কাঁথি কেন্দ্রের কথাই যে তিনি বলতে চেয়েছেন, তা স্পষ্ট। অনেকের মতে, মহিলা প্রার্থী বলতে তিনি বিষ্ণুপুরের সুজাতা মণ্ডলের কথা বলেছেন। তাঁর হারের ব্যবধান বেশ কম। সূত্রের খবর, দলের বৈঠকে সুজাতার লড়াইয়ের প্রশংসাও করেছেন মমতা।

বুথফেরত সমীক্ষার দুর্নীতি

বুথফেরত সমীক্ষার মাধ্যমে শেয়ার বাজারে দুর্নীতি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘বুথফেরত সমীক্ষার মাধ্যমে শেয়ার বাজারে দুর্নীতি করা হয়েছে। এটা খুব বড় দুর্নীতি। ভবিষ্যতে এটা নিয়ে আমরা আইনের পথে হাঁটব কি না, সেই ভাবনাচিন্তা করছি। আমরা এর তদন্ত চাই। ভুল বুথফেরত সমীক্ষা দেখানো হয়েছে।’’ উল্লেখ্য, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এর আগে এ বিষয়ে যৌথ সংসদীয় কমিটির তদন্তের দাবি তুলেছেন। যদিও বিজেপির দাবি, অষ্টাদশ লোকসভা এখনও গঠন করা হয়নি। তার আগে এই তদন্ত সম্ভব নয়।

এনআরসি, সিএএ বাতিলের আন্দোলন চলবে

লোকসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূলের প্রচারের অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠেছিল এনআরসি, সিএএ-র মতো আইনের বিরোধিতা করা। প্রথম থেকেই তা বাতিলের দাবিতে সরব হয়েছেন মমতা। শনিবারের বৈঠকেও সে প্রসঙ্গ তোলেন। জানান, তৃণমূলের সাংসদেরা লোকসভায় গিয়ে এনআরসি, সিএএ বাতিলের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। অভিন্ন দেওয়ানি বিধিও বাতিল করতে হবে।

বাংলার আন্দোলনের ঝাঁজ বাড়বে

লোকসভা ভোটের ফল ঘোষণার পর তৃণমূল সাংসদেরা যে সংসদে কেবল উপস্থিত হয়েই দায়িত্ব সারবেন না, প্রতিবাদেও সরব হবেন, শনিবার তা-ও স্পষ্ট করে দেন মমতা। তিনি জানিয়েছেন, বাংলাকে কেন্দ্রীয় সরকার যে ভাবে বঞ্চনা করেছে, তার বিরুদ্ধে তৃণমূল সাংসদেরা সংসদে সরব হবেন। রাজ্যসভা এবং লোকসভা মিলিয়ে তৃণমূলের মোট ৪২ জন সাংসদ রয়েছেন। তাঁরা এই ইস্যুতে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সংসদে আওয়াজ তুলবেন বলে জানান মমতা। বাংলার আন্দোলনের ঝাঁজ আরও বাড়বে।

২১ জুলাই বিজয়োৎসব

লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের এই সাফল্য বাংলার মানুষকেই উৎসর্গ করেছেন মমতা। তিনি জানিয়েছেন, এই জয়ের উদ্‌যাপন হবে আগামী ২১ জুলাই। ওই দিন তৃণমূল শহিদ দিবস পালন করে থাকে। লোকসভার সাফল্য উপলক্ষে সে দিনই বিজয়োৎসব পালন করবে তৃণমূল। মমতা বলেন, ‘‘২১ জুলাই আমাদের শহিদ তর্পণের দিন। এই জয় আমরা সে দিনই উদ্‌যাপন করব। ওটা আমাদের জনগণকে ধন্যবাদ জানানোর দিন।’’

হরিয়ানা যাবে তৃণমূলের প্রতিনিধি দল

শনিবার মমতা জানান, হরিয়ানায় আন্দোলনরত কৃষকদের সঙ্গে দেখা করতে যাবে তৃণমূলের চার সদস্যের প্রতিনিধিদল। তাঁরা সকলেই সাংসদ। দলে থাকবেন ডেরেক, নাদিমুল, সাগরিকা এবং দোলা সেন। শুক্রবার শিবসেনা (উদ্ধব) নেতা উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন অভিষেক। মমতাকে প্রশ্ন করা হয়, এমন সাক্ষাতের নেপথ্যে কি তাঁর কোনও রাজনৈতিক কৌশল রয়েছে? জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আমরা সকলের সঙ্গে সমন্বয় রক্ষা করে চলতে চাই। সেই জন্য ‘ইন্ডিয়া’ শরিকদের সঙ্গে আলোচনাও জরুরি। তাই অভিষেক মুম্বই গিয়েছিলেন। সেই পর্যায়েই আমাদের প্রতিনিধি দল হরিয়ানায় গিয়ে কৃষক আন্দোলনকে সমর্থন জানাবে।

দলের সংসদীয় পদ বণ্টন

তৃণমূলে সংসদীয় পদে কে কোথায় থাকবেন, শনিবার তা ঘোষণা করেছেন মমতা। সংসদীয় দলের চেয়ারপার্সন করা হয়েছে দলনেত্রী মমতাকে। লোকসভার দলনেতা করা হয়েছে উত্তর কলকাতার প্রবীণ সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। ২০০৯ সাল থেকেই তিনি ওই দায়িত্বে রয়েছেন। পাশাপাশি, লোকসভার উপদলনেতা হয়েছেন বারাসতের চার বারের সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার। প্রত্যাশিত ভাবেই লোকসভার মুখ্যসচেতক করা হয়েছে শ্রীরামপুরের চার বারের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তিনিও ২০০৯ সাল থেকেই এই দায়িত্বে রয়েছেন। অন্য দিকে, রাজ্যসভার দলনেতার পদে রেখে দেওয়া হয়েছে ডেরেক ও’ব্রায়েনকে। রাজ্যসভার উপদলনেতার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সাগরিকা ঘোষকে (প্রাক্তন সাংবাদিক সাগরিকা সম্প্রতি তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ হয়েছেন)। মুখ্য সচেতক হয়েছেন নাদিমুল হক। দীর্ঘ দিন রাজ্যসভায় তৃণমূলের হয়ে এই দায়িত্ব সামলেছেন সুখেন্দুশেখর রায়। তাঁর বদলে ওই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে নাদিমুলকে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement