(বাঁ দিকে) প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
বিজেপির ইস্তাহারে ‘এক দেশ এক ভোট’ নীতি কার্যকর করার প্রতিশ্রুতিকে সোমবার আক্রমণ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানালেন, এই নীতি কার্যকর করা হলে দেশে আর কখনও ভোটই হবে না। কেউ ভোট দিয়ে নিজের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন না। তৈরি হবে স্বৈরাচারী সরকার।
সোমবার কোচবিহারের রাসমেলা ময়দানে সভা ছিল মমতার। তৃণমূল প্রার্থী জগদীশচন্দ্র বসুনিয়ার সমর্থনে প্রচারে গিয়ে বিজেপির ইস্তাহারকে আক্রমণ করেন তিনি। বলেন, ‘‘ওরা তো ইস্তাহারে বলেই দিয়েছে, ‘এক দেশ এক ভোট’ করবে। অর্থাৎ, দেশে আর নির্বাচন থাকবে না। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো থাকবে না। রাজ্যগুলো আর থাকবে না। দেশে ভোট হবে না। স্বৈরাচারী সরকার তৈরি হবে। একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে।’’
বিজেপির প্রস্তাবিত নীতিকে কটাক্ষ করে মমতার সংযোজন, ‘‘এক দেশ, এক ভোট মানে এক নেতা, এক খাবার, এক ভাষা, এক ভাবনা। সারা দেশ বুঝে গিয়েছে, এ বার আপনারাও বুঝুন। দেশকে যদি স্বাধীন রাখতে হয়, তা হলে ‘বিজেপি হটাও’। না হলে দেশের স্বাধীনতা থাকবে না। দেশের ইতিহাস, ভূগোল সব গুলিয়ে দিচ্ছে ওরা।’’
বিজেপির ইস্তাহারে ‘অভিন্ন দেওয়ানি বিধি’ চালু করার প্রতিশ্রুতি নিয়েও আক্রমণ করেছেন মমতা। জানিয়েছেন, ওই বিধি চালু করা হলে আদিবাসীরা নিজেদের অধিকার হারাবেন। মমতা বলেন, ‘‘আমি আগে বলেছি। সেটাই মিলে গেল। ওদের ইস্তাহারে ‘অভিন্ন দেওয়ানি বিধি’ চালু করার কথা বলা হয়েছে। ওটা চালু হলে তফসিলি বন্ধুরা নিজেদের পরিচয় হারাবেন। আদিবাসীদের আর কোনও অধিকার থাকবে না। আপনারা কখন কী করবেন, সব ওরা ঠিক করে দেবে। কে কী খাবেন, কখন খাবেন, ওরা ঠিক করে দেবে। কোনও স্বাধীনতা থাকবে না।’’
ইস্তাহারে রবিবার ‘মুদ্রা যোজনা’র কথা বলেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। কোচবিহারের সভায় তাকেও কটাক্ষ করেছেন মমতা। ওই প্রকল্পে দেশের উদ্যোগপতিদের ঋণের সর্বোচ্চ সীমা ১০ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ লক্ষ টাকা করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। মমতার কথায়, ‘‘ওরা নাকি ঋণের পরিমাণ বাড়িয়ে দেবে। টাকাই তো দেয় না। ঋণ বাড়াবে কী ভাবে? ৯০ লক্ষ স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে আমরা ঋণ দিই। স্কুলের পোশাক ওরাই তৈরি করে। এই গোষ্ঠীর মহিলাদের জন্য আগামী দিনে আমরা প্রতি জেলায় বড় বাজার তৈরি করে দেব। ওঁরা নিজে রোজগার করবেন।’’
বাংলায় দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে মমতা পাল্টা উত্তরপ্রদেশ, গুজরাত, রাজস্থানের মতো বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলির দৃষ্টান্ত টেনেছেন। মোদীকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে তাঁর আহ্বান, ‘‘বাংলায় কোথায় কী দুর্নীতি হয়েছে, শ্বেতপত্র প্রকাশ করুন। বিভিন্ন কমিশন কী রিপোর্ট দিয়েছে, দেখান। তবে সেই সঙ্গে উত্তরপ্রদেশ, গুজরাত, রাজস্থানের পরিসংখ্যানও প্রকাশ করতে হবে। চ্যালেঞ্জ করে বলছি, বাংলায় কোনও দুর্নীতি হয়নি। তৃণমূল নয়, চুরি করে বিজেপি।’’