বাঁ দিক থেকে উদ্ধব ঠাকরে, রাহুল গান্ধী, শরদ পওয়ার। — ফাইল চিত্র।
আসনরফা নিয়ে দীর্ঘ টানাপড়েন। শেষ পর্যন্ত মহারাষ্ট্রে আসন সমঝোতা চূড়ান্ত করল বিরোধী জোট ‘মহাবিকাশ আঘাঢ়ী’ (এমভিএ)। রাজ্যে ৪৮টি লোকসভা আসনে উদ্ধব ঠাকরের নেতৃত্বাধীন শিবসেনা লড়বে ২১টি আসনে। কংগ্রেসের জন্য বরাদ্দ ১৭টি আসন। শারদ পওয়ারের নেতৃত্বাধীন ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি (এনসিপি) লড়ছে ১০টি আসনে। প্রথম দফার ভোট শুরু হতে মাত্র ১০ দিন বাকি। বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট মহারাষ্ট্রে এখনও আসন সমঝোতা করে উঠতে পারেনি।
মুম্বইয়ে রয়েছে ছ’টি লোকসভা আসন। তার মধ্যে চারটি আসন— উত্তর-পশ্চিম, দক্ষিণ-মধ্য, দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব আসনে লড়ছে উদ্ধবের দল। মুম্বইয়ের বাকি দু’টি আসন উত্তর এবং উত্তর-মধ্যতে লড়ছে কংগ্রেস। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে জোট গড়ে লড়েছিল বিজেপি এবং অবিভক্ত শিবসেনা। তখন মাথায় ছিলেন উদ্ধবই। মুম্বইয়ে তিনটি করে আসন পেয়েছিল দুই শরিকদল। ওই বছরের শেষে বিধানসভা ভোটেই ভেঙে যায় জোট। এখন বিজেপির হাত ধরে মহারাষ্ট্রে ক্ষমতায় রয়েছে একনাথ শিন্ডের নেতৃত্বাধীন শিবসেনা।
মহারাষ্ট্রে আসন সমঝোতা নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে আলোচনা চলছিল কংগ্রেস, উদ্ধবের শিবসেনা এবং পওয়ারের এনসিপির মধ্যে। ভিওয়াণ্ডি এবং সাংলি আসন চেয়ে নাছোড় ছিল তিন দলই। শেষ পর্যন্ত এই আসন দু’টির দাবি থেকে সরে এসেছে কংগ্রেস। একটিতে পওয়ারের দল এবং দ্বিতীয়টিতে উদ্ধবের দল লড়াই করছে। কংগ্রেস নেতা নানা পাটোলে জানিয়েছেন, বিষয়টির ‘সুরাহা’ হয়ে গিয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘‘আমাদের দলের কর্মীরা এমভিএ প্রার্থীদের হয়ে লড়াই করবে। এই স্বৈরাচারী সরকার কী করে চলেছে, আমরা সকলে দেখিয়েছি। এই স্বৈরাচারী লোকজনের বিরুদ্ধে সারা দেশে লড়াই করছেন আমাদের কর্মীরা। বিজেপিকে ছুড়ে ফেলাই আমাদের লক্ষ্য।’’
আসন সমঝোতা প্রসঙ্গে উদ্ধব বলেন, ‘‘আমাদের সামনে এগিয়ে চলতেই হবে। নির্বাচনে জেতার লক্ষ্যেই এই সমঝোতা করেছি। এ বার মানুষ সিদ্ধান্ত নেবে।’’ এনসিপি প্রধান পওয়ার জানিয়েছেন, শীঘ্রই নির্ধারিত আসনে প্রার্থী দেবে তাঁর দল।
ভিওয়াণ্ডি আসনে ২০১৯ এবং ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে জিতেছিলেন বিজেপির কপিল পাটিল। এ বার সেখানে চন্দ্রহার পাটিলকে প্রার্থী করেছে উদ্ধবের দল। তিনি প্রাক্তন কুস্তিগির। একই ভাবে সাংলিতেও গত দুই লোকসভা নির্বাচনে জিতেছিলেন বিজেপির সঞ্জয়কাকা পাটিল। কপিলের মতো তাঁকেও তৃতীয় বার সাংলিতে প্রার্থী করেছে বিজেপি। অতীতে এই সাংলি লোকসভা আসন ছিল কংগ্রেসের গড়। ১৯৬২ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত সেখানে জিতেছেন কংগ্রেস।
দিন কয়েক আগেই প্রকাশ অম্বেডকরের বঞ্চিত বহুজন আঘাঢ়ী জানিয়েছে, তারা বিরোধী জোটে থাকছে না। তার পরেই তড়িঘড়ি আসনরফা সেরে ফেলল কংগ্রেস, উদ্ধব এবং পওয়ারের দল। প্রকাশের দল মহারাষ্ট্রে দলিতদের মধ্যে যথেষ্ট জনপ্রিয়। প্রথমে পাঁচটি, পরে আটটি আসন দাবি করেছিলেন বিআর অম্বেডকরের নাতি প্রকাশ, যেগুলি আবার কংগ্রেস এবং উদ্ধবের দল আগেই দাবি করে বসেছিল। তাতেই বিরোধী জোটের সঙ্গে ভেস্তে যায় আলোচনা। প্রকাশ যদিও পরে অভিযোগ করেন, তাঁর দলের জনপ্রিয়তাকে ব্যবহার করতে চাইছিল বিরোধী জোট। তবে প্রকাশের সঙ্গে জোট নিয়ে আশাবাদী ছিল বিরোধী জোট প্রবীণ কংগ্রেস নেতা পৃথ্বীরাজ চভন এও জানিয়েছিলেন, প্রকাশের দলের সঙ্গে জোট হলে আকোলা আসন থেকে প্রার্থী সরিয়ে নেবে তাঁর দল। শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি। কংগ্রেস, উদ্ধব এবং পওয়ারের দল সেরে ফেলল আসনরফা। মঙ্গলবার জানিয়েও দিল সে কথা।