ভোট দিয়ে নাতির সঙ্গে শিশির অধিকারী। নিজস্ব চিত্র।
তাঁদের বাড়ি হল ভোটযুদ্ধে পূর্ব মেদিনীপুরে বিজেপির রণনীতি নির্ধারণ কেন্দ্র।শনিবার সকাল থেকেই তাই চূড়ান্ত ব্যস্ত অধিকারীদের ভদ্রাসন কাঁথির 'শান্তি কুঞ্জ।'
পরিবারের ছোট ছেলে সৌমেন্দু অধিকারী কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী। বড় ছেলে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী হলেন বিজেপির যুদ্ধরথের সারথী। তমলুক আর কাঁথি দু’টি লোকসভাতেই শুভেন্দুর 'ছায়ার' সঙ্গেই আসল লড়াই শাসকদলের।
শান্তিকুঞ্জের গা ঘেঁষে রয়েছে কাঁথির প্রভাত কুমার কলেজ। অধিকারী পরিবারের সকলে সেখানেই ভোট দেন। বাড়ির দু’পাশে বিজেপির দু’টি ক্যাম্প অফিস করা হয়েছিল।
শুক্রবার গভীর রাতে কাঁথির বাড়িতে ফিরেছেন শুভেন্দু। ভোর পাঁচটা থেকে বাড়িতে চালু হয়ে গিয়েছে নিজস্ব ‘কন্ট্রোল রুম’। সকাল সাতটা নাগাদ ভোট শুরু হতেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী সৌমেন্দু। ঘণ্টা তিনেক বাদে অর্থাৎ দশটা নাগাদ শান্তি কুঞ্জ থেকে নন্দীগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দেন শুভেন্দু। তখন বাড়ির নীচে অপেক্ষা করছিলেন সংবাদ মাধ্যমের কর্মীরা।
গাড়িতে ওঠার আগে বেশ ফুরফুরে মেজাজে তাঁদের শুভেন্দু জানান,"ভোট ভালই হচ্ছে। ভোর পাঁচটা থেকে খোঁজ রাখছি। বহু বুথে সিসি ক্যামেরা বন্ধ করে রেখেছিল। সেগুলো ধীরে ধীরে চালু করেছি।" তিনি পৌনে এগারোটা নাগাদ নন্দীগ্রামে পৌঁছোন। নিজের বিধায়ক কার্যালয়ে কয়েক মিনিট বিশ্রামের পর টোটোয় চেপে সোজা চলে যান নন্দীগ্রাম বাসস্ট্যান্ডের অদূরে নন্দনায়েকবাড় বুথে। সেখানে ভোট দিয়ে চলে যান নন্দীগ্রামে নিজের বিধায়ক কার্যালয়ে। বিকেল পর্যন্ত সেখানেই ছিলেন শুভেন্দু। সেখানেই খোলা হয়েছিল কন্ট্রোল রুম। দলের নেতা এবং জনপ্রতিনিধিদের প্রতি মুহূর্তে পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। সন্ধ্যায় ভিন জেলায় ছিল তাঁর কর্মসূচি।
এ দিন কাঁথি কেন্দ্র চষে বেড়ান ছোট ভাই সৌমেন্দুও। সাত সকালে পৌঁছে যান ভগবানপুরের অর্জুননগরে। অভিযোগ, নাড়ুয়াবিলায় ২০০ নম্বর বুথে বিজেপির পোলিং এজেন্টকে বসতে দেওয়া হয়নি। কেন্দ্রীয় বাহিনীর সহযোগিতায় তাঁকে বুথে বসিয়ে তিনি রওনা দেন ভগবানপুরের সাউথখন্ডে। সেখানে একটি বুথের কাছে তৃণমূল কর্মীদের জমায়েত দেখে গাড়ি থেকে নেমে পড়ে তাঁদের তাড়া করেন। তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে বচসা হয় সৌমেন্দুর।
এর পর সৌমেন্দু ভগবানপুরের মথুরায় যান। সেখানে বিজেপির এক মণ্ডল সভাপতিকে কেন্দ্রীয় বাহিনী মারধর করেছে বলে অভিযোগ। কেন্দ্রীয় বাহিনীর এক আধিকারিকের সঙ্গে এ ব্যাপারে তাঁর বচসা শুরু হয়। ঘটনাস্থল থেকেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর ডিআইজির কাছে ওই আধিকারিকের বিরুদ্ধে সৌমেন্দু নালিশ জানান।
দুপুরে বাড়ির পাশের বুথে ভোট দেন তমলুকের বিদায়ী সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী ও তাঁর স্ত্রী সুতপা অধিকারী। পরে সাড়ে চারটা নাগাদ নাতি দেবদীপকে নিয়ে ভোট দিতে যান শিশির অধিকারী। সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিদের দেখে তিনি বলেন,"ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গিয়েছে তৃণমূল। লুট, দুর্নীতি আর চুরির বিরুদ্ধে মানুষ নিঃশব্দে বিপ্লব ঘটিয়েছেন। কাঁথি আর তমলুক আসনে বিজেপি প্রার্থীরা যে ব্যবধানে জিতবেন তা অভাবনীয়।"
এর কিছু পড়ে কাঁথিতে পৌঁছে ভোট দেন সৌমেন্দু। কাঁথি পুরসভার অদূরে রাইপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় দলের এক পোলিং এজেন্টের আক্রান্ত হওয়ার খবর পেয়ে সেখানে যান সৌমেন্দু। সেই সময় তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান তৃণমূল কর্মীরা। কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং পুলিশ বিক্ষোভকারীদের হটিয়ে দেয়।
শেষবেলায় সৌমেন্দু যান কাঁথি পুরসভা এলাকার ৮২ নম্বর বুথে। সেখানে দুপুর থেকে তৃণমূলের লোকজন বুথ জ্যাম করে রেখেছিলেন বলে অভিযোগ। সৌমেন্দু যেতেই বিক্ষোভ দেখান তৃণমূলের কর্মীরা। আটকে দেন বিজেপি প্রার্থীর কনভয়। টায়ার জ্বালিয়ে পথ অবরোধ করেন তাঁরা। সৌমেন্দুকে গ্রেফতারের দাবিও জানান। যদিও কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং পুলিশের তৎপরতায় দ্রুত সেখান থেকে সৌমেন্দুকে বের করে নিয়ে যান তাঁর নিরাপত্তা রক্ষীরা।