পুরুলিয়া শহরের মিছিল করে মনোনয়ন পত্র জমা করলেন এসইউসিআই প্রার্থী সুস্মিতা মাহাতো। নিজস্ব চিত্র।
লোকসভা ভোটে প্রার্থী হতে জামানত দিতে হয় ২৫ হাজার টাকা। অথচ মাত্র ৭,৭৫১ টাকা ৯৯ পয়সা নিয়েই লোকসভা নির্বাচনের লড়াইয়ে নেমেছেন এসইউসি-র পুরুলিয়া কেন্দ্রের প্রার্থী সুস্মিতা মাহাতো। সোমবার মনোনয়ন জমা করেছেন সুস্মিতা। দাবি, হলফনামায় জানানো হয়েছে, তাঁর হাতে আছে ৩,৩০০ টাকা। আর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ৪,৪৫১ টাকা ৯৯ পয়সা।
সুস্মিতা অবশ্য বলছেন, ‘‘হাতে ও ব্যাঙ্কের টাকাও আমার নিজস্ব নয়। প্রার্থী হয়েছি শুনে আত্মীয়, পরিজন, বন্ধুবান্ধব ও পার্টি-দরদিরা সাধ্যমতো টাকা পাঠিয়েছেন। সেই টাকাই ব্যাঙ্কে জমা করেছি। আর কিছুটা হাতে আছে। জামানতের টাকা জনতা দিয়েছেন।’’
তবে এসইউসি-র ক্ষেত্রে এটা নতুন নয় বলেই মত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের। তাঁরা মনে করাচ্ছেন, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে এসইউসি প্রার্থী রঙ্গলাল কুমার হলফনামায় জানান, তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ছিল ৫০০ টাকা। নির্বাচনের প্রার্থী হতে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থাকা বাধ্যতামূলক। সর্বক্ষণের পার্টি কর্মী রঙ্গলালকে প্রার্থী হওয়ার জন্যই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়েছিল। এ বার রঙ্গলাল রসিকতা করে বলছেন, ‘‘সে দিক থেকে সুস্মিতা আমার চাইতে অনেকটাই ‘ধনী’!
ছাত্র সংগঠন থেকে উঠে আসা বছর ৪৪-এর সুস্মিতা দলের সর্বক্ষণের কর্মী। সাঁওতালডিহিতে বাবার বাড়ি থাকলেও পুরুলিয়া শহরের ইদগাহ মহল্লায় পার্টি সেন্টারই তাঁর বর্তমান ঠিকানা।
স্বামী সৌরভ ঘোষ এসইউসি-র ছাত্র সংগঠনের সর্বভারতীয় সম্পাদক। হলফনামায় স্বামীর বিষয়, সম্পত্তি উল্লেখ করতে হয়। সূত্রের খবর, দেখা যাচ্ছে বিষয়-সম্পত্তির দিক দিয়ে স্ত্রীর থেকে বহু পিছিয়ে স্বামী সৌরভ। তাঁর একটা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট আছে বটে, কিন্তু সেখানে টাকা নেই। আর আছে একটা মোটরবাইক। সৌরভ বলেন, ‘‘ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছিল রান্নার গ্যাসের সংযোগ নেওয়ার জন্য। আর বাইকটা দলের সমস্ত কর্মীর ব্যবহারের জন্য আমার নামে দল কিনেছিল।’’ সুস্মিতার স্কুটি আছে। সুস্মিতার দাবি, দলের কাজে ঘোরাঘুরির সুবিধার জন্য সেটা বাপের বাড়ি থেকে তাঁকে কিনে দিয়েছে। মায়ের দেওয়া শাড়ি পরেই মনোনয়ন দিতে গিয়েছিলেন।
কিন্তু মাত্র সাড়ে সাত হাজার টাকায় কী ভাবে নির্বাচন পার করবেন? সুস্মিতা বলেন, ‘‘আমাদের দল শ্রমিক, কৃষক, যুবক-সহ সাধারণ মানুষের দাবি নিয়ে আন্দোলন করে। তাঁরাই দলকে চাঁদা দিয়ে নির্বাচনের খরচ জোগাচ্ছেন।’’ দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রঙ্গলাল কুমার বলেন, ‘‘আন্দোলনের খরচ জোগায় আমজনতা। নির্বাচনেও আমজনতার কাছেই চাঁদা সংগ্রহ করতে যাই।’’