—প্রতীকী চিত্র।
যাঁর সৌজন্যে বঙ্গের ভোট-রাজনীতির অভিযানে ‘নকুলদানা’, ‘গুড়বাতাসার’ মতো শব্দ জায়গা পেয়েছে, সেই অনুব্রত মণ্ডল এখন গরুপাচার মামলায় তিহাড় জেলে বন্দি। বীরভূমের জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত (কেষ্ট নামেই বেশি পরিচিত) না থাকলেও তাঁর শিষ্যরাই এ বার আউশগ্রামে ভোট পরিচালনা করবেন। সেনাপতির অনুপস্থিতিতে সেই কাজ কতটা ‘মসৃণ’ হবে তা দেখতে কৌতূহলী আউশগ্রাম। তৃণমূল কর্মীরা ইতিমধ্যেই বলতে শুরু করেছেন, সেনাপতি না থাকলেও ‘কেষ্ট-পথেই খেলা হবে’ আউশগ্রামে। পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়ে বিজেপি বলেছে, ‘খেলতে গেলে কষ্ট হবে।’ একদা আউশগ্রাম যাদের খাসতালুক ছিল, সেই সিপিএমের আশা, ‘ঘরওয়াপসি’ হবে পদ্ম-শিবিরে যাওয়া বাম ভোটারদের।
তৃণমূল শিবিরের খবর, দলে ‘দ্বন্দ্বে’ এখনও ছেদ পড়েনি। আউশগ্রাম ১ ব্লকে দলের বড় অংশ ‘বসে রয়েছে’। আউশগ্রাম ২ ব্লকের একাংশও ‘নিষ্ক্রিয়’। গুসকরা পুরসভাতেই দলের সংগঠনও ‘তথৈবচ’। আক্ষরিক অর্থে গোটা বিধানসভায় এমন কোনও নেতা নেই, যাঁর ‘হুকুম তামিল’ হবে দলের উপর থেকে তৃণমূল স্তর পর্যন্ত। তৃণমূলের এক নেতার কথায়, “কেষ্টদার দেখানো পথে নকুলদানা, গুড় বাতাসা বিলি হচ্ছে। ভোটের দিনও কেষ্টদার পথ অনুসরণ করার কথা হচ্ছে। সবাইকে এক সূত্রে বাঁধার কাজটা কেষ্টদা করতেন। তাঁর কথাই ছিল শেষ কথা। তাঁর মতো কাউকে দলে দেখা যাচ্ছে না। সে কারণে প্রতিদিন দলে নিষ্ক্রিয় কর্মীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে।”
অস্বস্তি কম নয় পদ্ম-শিবিরেরও। বিজেপির অন্দরমহলের খবর, ‘অবিশ্বাসের’ বাতাবরণ রয়েছে দলে। অনেক মণ্ডল সভাপতি কার্যত ‘নীরব’। সক্রিয় মণ্ডল সভাপতিকে সরানোর জন্য দলকে চিঠি দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। আউশগ্রামের এক বিজেপি নেতা বলেন, “আমাদের লোকজনদের প্রলোভন দেখিয়ে নিষ্ক্রিয় করে রাখা হচ্ছে। তাঁদের ব্যবহার করে দলের অন্দরের সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্টের চেষ্টা চলছে বলেও খবর মিলছে। এ সবই করা হচ্ছে কেষ্টদার ‘খেলা হবে’ ছকে।”
এক সময়ে বামেদের ‘খাসতালুক’ ছিল আউশগ্রাম। ১৯৭২ বিধানসভা নির্বাচনে আউশগ্রাম আস্থা রেখেছিল বামে। এমনকি, ২০১১ বিধানসভা ভোটেও আউশগ্রাম সিপিএমকে ছাড়েনি। সে বার ৫২ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছিল তারা। বামেদের সংগঠন আউশগ্রামে এতটাই মজবুত ছিল যে, ১৯৬৭ থেকে ২০১১ পর্যন্ত আউশগ্রামে তাদের বিজয়রথ আটকানো যায়নি। ২০১৬ বিধানসভা ভোটে প্রথম ধাক্কা খায় সিপিএম। জয়ী হন তৃণমূলের অভেদানন্দ থান্ডার। ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে সিপিএমের ‘ভোট ব্যাঙ্কে’ ধস নামে। আউশগ্রামে মাত্র ৯ শতাংশ ভোট পেয়েছিল তারা। ২০২১ বিধানসভায় যা সামান্য বেড়ে হয় ৯.৪০ শতাংশ। আউশগ্রামে মোট ভোটারের ৩২ শতাংশ তফসিলি সম্প্রদায়ভুক্ত। সেখানে ২২ শতাংশ জনজাতি ভোটার রয়েছেন। সিপিএমের পর্যবেক্ষণ, এ বার আউশগ্রামের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বেশ ঘোলাটে। সেই কারণে অন্য শিবিরে যাওয়া তাদের ভোট ফিরে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। দলের এক নেতার দাবি, “গত লোকসভায় আমাদের ভোটে বিজেপি লাভবান হয়েছিল। বিধানসভা নির্বাচনে আমাদের ভোট কমে যাওয়ায় লাভ হয়েছিল তৃণমূলের। এ বার আমাদের ভোট আমাদের বাক্সেই ফিরবে। তাতে কোন ফুলের কপালে কষ্ট আছে, তা এখনই বলা সম্ভব নয়।”
বিরোধীদের পর্যবেক্ষণ, তৃণমূলের অন্দরে ‘নিষ্ক্রিয়-সক্রিয়’ টানাপড়েন চলছে। ‘নিষ্ক্রিয়’ কর্মীরা চাইছেন, প্রতিটি ব্লকে তৃণমূলের ভোট কমানো গেলে তাঁরা দলে পুরনো জায়গা ফিরে পাবেন। তৃণমূল অবশ্য তা মানছে না। বিজেপির দাবি, গুসকরা শহরে উন্নয়ন হয়নি। তৃণমূলের সংগঠন দুর্বল। এর ফলে গেরুয়া শিবির লাভবান হবে। বিজেপির আউশগ্রাম বিধানসভার আহ্বায়ক চন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “কেষ্টর ভয় এ বার নেই। তৃণমূলের অত্যাচারের বিরুদ্ধে মানুষ আমাদের ভোট দেবেন।” পক্ষান্তরে, অভেদানন্দের বিশ্বাস, “কেষ্টদার আশীর্বাদ আমাদের সঙ্গে রয়েছে। মানুষ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে ভোট দেবেন। গত বিধানসভা ভোটের চেয়েও বেশি ভোট পাব।”