—প্রতীকী চিত্র।
উন্নয়নের নিরিখে পিছিয়ে থাকলেও বিভিন্ন নির্বাচনে ভোটদানের হারে রাজ্যে প্রথম সারির জেলাগুলির মধ্যে থাকে পুরুলিয়া। এ বারও তার বিশেষ ব্যতিক্রম হয়নি। যদিও ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের তুলনায় এ বারে প্রায় চার শতাংশ কমেছে ভোটদানের হার। এর ফল কী হতে চলেছে, ইতিমধ্যে কাটাছেঁড়া শুরু করেছে যুযুধান দলগুলি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, ভোট কম পড়ার ঘটনা কেন্দ্রের শাসকদলের বিপক্ষে যেতে পারে। অন্য অংশের মতে, পরিবর্তনের লক্ষ্যেই বেশি ভোটার বুথমুখী হয়ে থাকেন। সে ক্ষেত্রে ভোটের হার কমার অর্থ সংশ্লিষ্ট আসনে বদল না ঘটারও ইঙ্গিত হতে পারে।
তবে বিশ্লেষকদের মত যাই হোক, মূল দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি ও তৃণমূল শিবিরে জোর চর্চা চলছে ভোট কম পড়ার ফায়দা পাবে কারা, তা নিয়ে। ২০১৯ সালে পুরুলিয়া আসনে ভোট পড়েছিল ৮২.৩৪ শতাংশ। এ বারে তা হয়েছে ৭৮.৩৯ শতাংশ। ওই কেন্দ্রে এ বারে মোট ভোটার ছিলেন ১৮ লক্ষ ১৯ হাজার ৯৮৯ জন। চার শতাংশের হিসাবে কম-বেশি ৭৩ হাজার ভোট কম পড়েছে।
ঘটনা হল, এ বারে পুরুলিয়া আসনে লড়াইয়ে বেশ কিছু অভিমুখ রয়েছে। তিরিশ শতাংশের কিছু বেশি মাহাতো সম্প্রদায়ের ভোট রয়েছে জেলায়, যা কোনও দলের জয়-পরাজয় নির্ধারণে ভূমিকা নিতে পারে। জাতিসত্তার দাবিতে আন্দোলন করা আদিবাসী
কুড়মি সমাজের নেতা অজিত মাহাতো এ বারে নিজেই প্রার্থী হওয়ায় ভোটের সমীকরণ অনেকটাই
বদলাতে পারে, মনে করছে রাজনৈতিক শিবির।
এর পাশাপাশি বাম-কংগ্রেস মঞ্চের প্রার্থী পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ নেপাল মাহাতোও এ বারে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। প্রচার-পর্বে দেখা গিয়েছে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে প্রচার সেরেছেন সিপিএম ও কংগ্রেস কর্মীরা। পঞ্চায়েত নির্বাচনে
অতীতের তুলনায় পুরুলিয়ায় ভোটও অনেকটা বেড়েছে সিপিএমের। সিপিএম ও কংগ্রেস নিজেদের ভোট পুনরুদ্ধারে সমর্থ হলে ভোটের অঙ্ক আরও জটিল হতে পারে ছৌ নাচের জেলায়।
এই সব সমীকরণ মাথায় রেখে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের দাবি, পুরুলিয়া কেন্দ্রে মূল দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি ও তৃণমূলের মধ্যে লড়াই যথেষ্ট কঠিনই হবে। যে-ই জিতুক, কমতে পারে ভোটের ব্যবধানও।
সেই প্রেক্ষিতে প্রায় চার শতাংশ ভোট কম পড়ার ঘটনা তাৎপর্যের বলে মানছেন অনেকে। ভোট কম পড়া নিয়ে দলগুলির নেতৃত্বের একাংশের পর্যবেক্ষণ, জেলায় এক লক্ষের মতো পরিযায়ী শ্রমিক আছেন। তাঁদের বড় অংশ ভোট দিতে আসেননি। তা ছাড়া, নির্বাচনের দিনে জেলায় তাপমাত্রা অনেকটাই বেশি ছিল বলেও ভোট পড়েছে কম।
বিজেপির রাজ্য নেতা বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘জেলার সাংসদ আমাদের। সাতের মধ্যে পাঁচ বিধায়কও বিজেপির। সংগঠনগত ভাবেই ভোটটা করিয়েছি। ভোটের হার কম হওয়ায় বোঝাই যাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে মানুষ এককাট্টা হয়ে ভোটের লাইনে
দাঁড়াননি।”
পুরুলিয়ার তৃণমূলের জেলা সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়ার পাল্টা দাবি, “ভোটের হার কম হওয়ার অর্থ বিজেপির প্রতি সমর্থন কমেছে ভোটারদের। তা ছাড়া, জেলায় বিজেপির চেয়ে দলের সংগঠন অনেক বেশি পোক্ত। সেই শক্তিকে ভোটে কাজে লাগানো হয়েছে।”
তাঁর সংযোজন, “ভোটের হার কমেছে কারণ, ভাসমান ভোটারেরা ভোট দিতে আসেনি।
এঁরা এমন যাঁরা ক্ষমতাসীনদের ভোট দেন। বিজেপিরই
ভোট কমবে।”