Lok Sabha Election 2024

হিংসা কেন, প্রশ্ন প্রথম ভোটদাতাদের

১৯৫২ সালে প্রথম লোকসভা নির্বাচনে ভোট দিয়েছিলেন মানবাজার থানার চেপুয়া গ্রামের শতায়ু ভবানী মাহাতো। ভোট দেন তাঁর বোন ৯৮ বছরের ঊর্মিলা মাহাতোও।

Advertisement

সমীর দত্ত

মানবাজার শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০২৪ ১০:৩০
Share:

ঊর্মিলা মাহাতো, ভবানী মাহাতো(বাঁ দিক থেকে)। নিজস্ব চিত্র।

ভারতের প্রথম লোকসভা নির্বাচনের স্মৃতি এখনও অমলিন তাঁদের কাছে। তাঁদের কেউ এখন শতায়ু, কেউ বা শতবর্ষের দোরগোড়ায়। ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের আগে তাঁদের মুখে শোনা গেল দেশের প্রথম লোকসভা নির্বাচনের কথা।

Advertisement

১৯৫২ সালে প্রথম লোকসভা নির্বাচনে ভোট দিয়েছিলেন মানবাজার থানার চেপুয়া গ্রামের শতায়ু ভবানী মাহাতো। ভোট দেন তাঁর বোন ৯৮ বছরের ঊর্মিলা মাহাতোও। সে বছর ভোট দেন বান্দোয়ানের কেন্দাপাড়া গ্রামের ৯৬ বছরের শ্রীপতিলাল প্রামাণিকও।

তাঁদের মধ্যে যোগসূত্রও রয়েছে। তিন জনই লোকসেবক সঙ্ঘের সদস্য ছিলেন। তিন জনই এ বার বাড়ি থেকে ভোট দিয়েছেন।

Advertisement

পুরুলিয়া জেলার ইতিহাস গবেষক প্রদীপ মণ্ডল জানান, ১৯৫২ সালে ভজহরি মাহাতো লোকসেবক সঙ্ঘের হয়ে ‘রেল ইঞ্জিন’ প্রতীকে দক্ষিণ মানভূম-ধলভূম লোকসভা কেন্দ্র থেকে প্রথম সাংসদ নির্বাচিত হন। ১৯৫৬ সালে মানভূম জেলার অবলুপ্তি ঘটে।পুরুলিয়া পশ্চিমবঙ্গে অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৫৭ ও ১৯৬৭ সালের নির্বাচনে পুরুলিয়া লোকসভা আসনে ভজহরিবাবু ফের নির্বাচিত হন। তবে ১৯৭২ সালের পরে লোকসেবক সঙ্ঘ নির্বাচনী রাজনীতি থেকে সরে আসেন।

১০৩ বছরের ভবানীদেবী প্রথম ভোট দিয়েছিলেন শ্বশুরবাড়ি চেপুয়া গ্রামের স্কুলে। তাঁর কথায়, ‘‘তখন প্রার্থীদের প্রতীক অনুযায়ী আলাদা, আলাদা ভোট বাক্স ছিল। সেগুলো থাকত ঘেরা জায়গায়। আঙুলের টিপ ছাপ মেরে ভোটের কাগজ পছন্দের প্রতীক দেওয়া বাক্সে ফেলতে হত।’’ এখনও তাঁর মনে আছে, সে সময় বুথের বাইরে ভোটারদের লাইন ঠিক করার দায়িত্বে থাকতেন লাল টুপি পরা একজন সেপাই। তিনি একা হলেও তাঁর বিরাট দাপট ছিল। বুথেই ভোট গুণে আধিকারিকেরা ফলাফল নিয়ে যেতেন। ভবানীদেবীর ছেলে শ্যাম মাহাতো জানান, তাঁর মায়ের বর্তমান বয়স ১০৩। কিন্তু ভোট দিতে এখনও ভালবাসেন। হুইলচেয়ারে বসিয়ে নাতিরা তাঁকে ভোট কেন্দ্রে নিয়ে যান।

ভবানীদেবীর থেকে পাঁচ বছরের ছোট ঊর্মিলাদেবী যখন প্রথম ভোট দিয়েছিলেন, তখন তিনি অবিবাহিত। তাঁর বাপের বাড়ি মানবাজার থানার জনড়া গ্রাম। ঊর্মিলাদেবী জনড়া গ্রাম লাগোয়া কদমা প্রাইমারি স্কুলে ভোট দিতে গিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, ‘‘ভোটের আগে গ্রামে গ্রামে টিনের চোঙ্গার মাধ্যমে লোকসেবক সঙ্ঘের কর্মীদের প্রচার চালাতে দেখেছি।’’

বান্দোয়ানের শ্রীপতিলাল লোকসেবক সঙ্ঘের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। ১৯৫৬ সালের ২০ এপ্রিল পুঞ্চার পাকবিড়রা থেকে কলকাতা পর্যন্ত ঐতিহাসিক পদযাত্রার অন্যতম সঙ্গী ছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘দেশের প্রথম নির্বাচন নিয়ে সবার মধ্যে উন্মাদনা ছিল। ভজহরিবাবুর হয়ে সাইকেলে চড়ে টিনের চোঙায় মুখ দিয়ে গ্রামে গ্রামে প্রচার চালিয়েছি।’’

দেশের প্রথম নির্বাচনের সাক্ষী তিন প্রবীণের প্রশ্ন, ‘‘তখনও ভোটে একাধিক প্রার্থী থাকতেন। কিন্তু মারদাঙ্গা ছিল না। এখন তো ভোট মানেই হিংসা, রক্তারক্তি। মানুষ খুন হয়ে যাচ্ছে! এ সব বন্ধ হোক।
নির্বাচন শান্তিতে হোক। লড়াই থাকুক। তা হোক মতাদর্শের লড়াই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement