—প্রতীকী চিত্র।
বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্রে প্রায় দ্বিগুন ভোটে জিতেছে তৃণমূল। তার মধ্যেও কাঁটা কালনা শহরের বেশির ভাগ ওয়ার্ডে পিছিয়ে থাকা।
পুরভোটে ১৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৭টিতে জিতেছিল তৃণমূল। এ বারের লোকসভার ভোটে ১২টি ওয়ার্ডে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। তার মধ্যে রয়েছে পুরপ্রধান, উপ-পুরপ্রধানদের ওয়ার্ড। তৃণমূলের শহর সভাপতি, বিধায়কের ওয়ার্ডেও ছবিটা একই। তৃণমূলের দাবি, দল আগেভাগে সাবধান হলে বিজেপি প্রচার না করেও এগিয়ে যেত না।
২০২১ সালের বিধানসভায় বিজেপি ২৬৫৬ ভোটে এগিয়েছিল। পুর নির্বাচনে ছবিটা বদলে যায়। জয়ের ব্যবধান পৌঁছয় প্রায় ২৭ হাজারে। সিপিএম একটা ওয়ার্ডে জেতে। এ বারে কালনা শহরে বিজেপি এগিয়ে গিয়েছে ৩০৭৪ ভোটে। ৫, ৭, ১২, ১৩, ১৫ নম্বর ওয়ার্ড থেকে বড় ব্যবধানে জয় পেয়েছে গেরুয়া শিবির। ৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ৯০৭ এবং ১৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ৯০৪ ভোটে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। পুরপ্রধান আনন্দ দত্তের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে ৬৭ ভোটে, উপ-পুরপ্রধান তপন পোড়েলের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে ১২০ ভোটে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। শহর সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে ৬২৯ ভোটে এবং বিধায়ক দেবপ্রসাদ বাগের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে ৮৬ ভোটে পিছিয়ে রয়েছে তৃণমূল।
তৃণমূল নেতাদের একাংশের দাবি, পুরভোটে প্রার্থী বাছাই থেকে যে ক্ষোভ শুরু হয়, তা চলে ভোটের পরেও। বুথে গিয়ে ভোট দিতে না পারার ক্ষোভ রয়ে যায়। বোর্ড গঠনের দিন সামনে আসে দলের অন্তর্কলহ। পরেও পুরসভার কাজকর্ম নিয়ে পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দেন পুর প্রতিনিধিরা। অনাস্থা এনে চিঠি পাঠানো হয়। দলীয় কোন্দলে পুরবোর্ডের বৈঠক ভেস্তেও যায় কয়েক বার। পুরবোর্ডের বয়স আড়াই বছর হয়ে গেলেও সরকারি বড় প্রকল্প না হওয়া, মিউটেশনের নামে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। শহরের এক তৃণমূল নেতার কথায়, ‘‘পুরসভা নিয়ে দলের ঊর্ধ্বতন নেতাদের বার বার জানিয়েও লাভ হয়নি। তাঁরা বিষয়টি ধামাচাপা দিয়েছেন। দল কড়া ভূমিকা নিলে প্রচার না করেও ১২টি ওয়ার্ডে এগিয়ে যেত না বিজেপি।’’ পুরসভার কাজকর্মে দলের কর্মীদের একাংশও বিরক্ত হয়ে ঠিক ভাবে লড়াইয়ে নামেননি দাবি তাঁদের। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিক বৈঠক করেছেন কালনা নিয়ে। তার পরে দ্বন্দ্ব যে স্তিমিত হয়নি, তার প্রমাণ এই ভোট।
তৃণমূলের কালনা শহর সভাপতি বলেন, ‘‘মানুষ যে আমাদের প্রতি শহরে বিরক্ত, তা বুঝিয়ে দিয়েছেন। নেতাদের আলাদা করে শহর নিয়ে ভাবা উচিত।’’ তৃণমূলের রাজ্যের অন্যতম মুখপাত্র দেবপ্রসাদ বাগ বলেন, ‘‘বিধানসভায় কালনা শহরে ২৬০০ বেশি ভোটে পিছিয়ে ছিলাম। পুর নির্বাচনে ২৭ হাজার ভোটে জয়লাভ করি। ওই হিসাব এ বার লোকসভা নির্বাচনে আমরা ৩০ হাজারের বেশি ভোটে পিছিয়ে পড়েছি। কেন এমন ফল হল বিষয়টি নিয়ে দ্রুত পর্যালোচনা জরুরি।’’
বিজেপির কালনা নগরের সভাপতি সৌরভ রায় বলেন, ‘‘ভোটের দিন কর্মীরা বুথ আগলে পড়েছিলেন। মানুষ বুঝিয়ে দিয়েছেন ঠিকঠাক ভোট হলে ফল কী হতে পারে।’’ যদিও বিজেপির অনেকেরই দাবি, শহর থেকে লিড আরও বাড়তে পারত। তাতে বাঁধ দিয়েছে লক্ষ্মীর ভান্ডার।