—প্রতীকী চিত্র।
আগের লোকসভা নির্বাচনে অল্প ব্যবধানে বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনটি জিতেছিল বিজেপি। এ বার দিলীপ ঘোষ প্রার্থী হওয়ায় দলের বড় অংশ এই আসনে জয় সম্পর্কে নিশ্চিত ছিলেন। বিজেপি সূত্রের খবর, সঙ্ঘও তার রিপোর্টে, এই আসনকে ‘এ+’ (নিশ্চিত জয়) বলে চিহ্নিত করেছিল। কিন্তু জয় তো দূরের কথা, এই কেন্দ্রে বড় ব্যবধানে হেরেছে বিজেপি।
পাশের বর্ধমান পূর্ব আসনেও তৃণমূলের জয়ের ব্যবধান গত বারের তুলনায় দ্বিগুণ হয়েছে। ওই কেন্দ্রে হেরেছেন হরিণঘাটার বিজেপি বিধায়ক অসীম সরকার। অন্তর্দ্বন্দ্ব আর সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণেই কি জোড়া বিপর্যয়, বিজেপির অন্তর্ঘাত উঠেছে সে প্রশ্ন।
বিজেপি সূত্রের দাবি, দুই প্রার্থীই সাংগঠনিক দুর্বলতাকে পরাজয়ের অন্যতম কারণ বলে মনে করেছেন। বুধবার ‘চক্রান্তের’ তত্ত্ব ভাসিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন দিলীপ। পাশাপাশি, যে মাটিতে তিনি চাষ করে ফসল ফলিয়েছিলেন, সেই মেদিনীপুর কেন্দ্র থেকে সরিয়ে তাঁকে ‘অচেনা’ বর্ধমানে পাঠানোর সিদ্ধান্ত ভুল কি না, সে প্রশ্নও উঠেছে। যদিও ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’-য়ে এর উত্তর না দিয়ে দিলীপ বলেন, “সেটা বাংলার মানুষ বলবেন, কর্মীরা বলবেন। আমাকে দল যে কাজ দিয়েছে, তা নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেছি। কখনও কোথাও ফাঁকি দিইনি। আমি অত্যন্ত পরিশ্রম করে কাজ করেছি। সেখানে আমি যা লড়াই দিয়েছি, তাতে একটা লড়াই হয়েছে। আমাদের পরিশ্রমের ফাঁক ছিল না। বাকি নেতৃত্ব, পরিবেশ, সিদ্ধান্তের উপরে নির্ভর করেছে। কেন এ রকম হল, যাঁরা পাঠিয়েছেন, তাঁরা ভাববেন। বর্ধমান খুব কঠিন আসন ছিল। দেখতে গেলে হেরে যাওয়া আসন।” এর পরেই চক্রান্তের তত্ত্ব দাঁড় করানোর চেষ্টায় সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, “রাজনীতিতে কোনওটাই অসম্ভব নয়। চক্রান্ত-কাঠিবাজি থাকবেই। এটা রাজনীতির অঙ্গ। আমি পুরো পরিশ্রম করেছি, কিন্তু সফল হতে পারিনি। রাজনীতিতে সবাই কাঠি নিয়ে ঘুরতে থাকে।”
বর্ধমান পূর্বের বিজেপি প্রার্থী অসীম সরকারের কথায়, “সাংগঠনিক দুর্বলতার জন্য হেরেছি, এটা আমি বলতে চাইছি না। তবে তৃণমূলকে হারানোর জন্যে যে শক্তি দরকার ছিল, তা আমাদের কাছে ছিল না। বর্ধমান পূর্ব লোকসভার সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রই তৃণমূলের দখলে।” তাঁর দাবি, এই লোকসভায় প্রায় ৪০০টি বুথে বিজেপির এজেন্ট ছিল না। তার পরেও লড়াই হয়েছে। বিজেপি সূত্রের খবর, প্রার্থী পছন্দ না হওয়ায় দলের একাংশের মধ্যে ক্ষোভ ছিল। প্রার্থীর বিরুদ্ধে পোস্টারও পড়েছে। অসীমের ঘনিষ্ঠদের দাবি, সঙ্ঘের রিপোর্টে বর্ধমান পূর্ব আসনটিতে বিজেপির জয়ের কোনও সম্ভাবনাই ছিল না। কিন্তু দলকে লড়াইয়ে রাখতে অসীমকে প্রার্থী করা হয়। অসীম নিজেও বলেন, “আমি প্রার্থী হয়ে তৃণমূলের ভিত নাড়িয়ে দিয়েছিলাম। তৃণমূককে ভয় পাইয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু ভোটাররা জাগ্রত না হলে কোনও শক্তিই কাজ করে না।”
বিজেপির একাংশের দাবি, দু’টি কেন্দ্রেই সংখ্যালঘু ভোটের একাংশ তৃণমূলের বাক্স থেকে সিপিএমের বাক্সে পড়বে বলে মনে হয়েছিল। কিন্তু ভোটের ফল বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, সংখ্যালঘু ভোট এককাট্টা হয়ে তৃণমূলের বাক্সে গিয়েছে। আবার বিজেপির ভোটও তৃণমূলে গিয়েছে। ভোটের এই বাক্স-বদল আটকানো গেল না কেন? অসীমের উত্তর, “একটি ক্লাসের সব ছাত্রকেই কি ভাল করে তোলা যায়? সব ছাত্রই কি শিক্ষকের সব কথা বুঝতে পারেন? উদ্বাস্তু ভোটাররা আমাদের
কথায় জাগেননি।”
সাংগঠনিক দুর্বলতার কথা অবশ্য মানতে চাননি বিজেপি জেলা নেতৃত্ব। দলের নেতা অভিজিৎ তা বলেন, “গত লোকসভা ভোটের থেকে এ বার আমাদের পোলিং এজেন্টের সংখ্যা অনেক বেশি ছিল। জেলার কার্যকর্তা, কর্মীরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। কেন্দ্রের সুবিধা পেলেও ভোটাররা তা বুঝতে পারেননি। কারণ পঞ্চায়েতের মাধ্যমেই সেই সুবিধা দেওয়া হয়। এই শিক্ষা নিয়েই এগোতে হবে।”