—প্রতীকী চিত্র।
প্রথম দফায় কৌশল যদি হয় মাটি কামড়ে থেকে একাধিক সভা, দ্বিতীয় দফায় তা হলে এলাকা ধরে ধরে প্রচারে জোর দিয়েছে প্রায় সব দল। উত্তরবঙ্গের আরও তিন আসনে ভোটগ্রহণ ২৬ এপ্রিল। তার আগে এটাই প্রচারের নির্যাস, বলছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা।
দ্বিতীয় দফায় ভোট হবে দার্জিলিং, রায়গঞ্জ ও বালুরঘাট কেন্দ্রে। আক্ষরিক অর্থেই এক দার্জিলিঙের কিছু অংশ বাদ দিলে চড়া গরমের মধ্যে ঢুকে পড়ছে ভোট-পর্ব। প্রচারেও লেগেছে তার আঁচ। সম্প্রতি শিলিগুড়িতে মুখ্যমন্ত্রীর পদযাত্রায় ভিড় সামলানোর ফাঁকে ফুটপাথে বিক্রেতার কাছ থেকে ডাব কিনে খাচ্ছিলেন এক পুলিশকর্মী। তাঁকে ডাব বিক্রেতা বলেন, ‘‘অগ্নিদেব এখন শুধু ‘ট্রেলার’ দেখাচ্ছেন। মে-জুন মাসে পিকচার রিলিজ় করবেন।’’ পাশ থেকে আর এক ক্রেতা বললেন, ‘‘আর ৪ জুন রিলিজ় ভোটের পিকচারের। তাপ তো বাড়বেই।’’
তথ্যের দিক থেকে দেখা যাচ্ছে, এই তিন কেন্দ্রের মধ্যে দুই প্রধান যুযুধান দল তৃণমূল ও বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব সব থেকে বেশি সভা করেছেন বালুরঘাটে। আর সব থেকে কম দার্জিলিং পাহাড়ে। কার্যত শূন্য। তৃণমূল তো পুরো পাহাড়ই ছেড়ে দিয়েছে জোট সঙ্গী অনীত থাপাকে। কিছু দিন আগে অনীত এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানিয়ে যান, পাহাড় তিনি ‘সামলে নেবেন’, তৃণমূল যেন সমতলটা দেখে। বিজেপিরও কোনও শীর্ষ নেতৃত্বের পাহাড়ে যাওয়া হয়নি। একমাত্র কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সভা করার কথা ছিল দার্জিলিং শহরের কাছে লেবংয়ে। কিন্তু দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার জন্য তা সম্ভব হয়নি।
ভোট ঘোষণার আগেই অবশ্য শিলিগুড়ি কাওয়াখালিতে সভা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পাল্টা ডাবগ্রাম-ফুলবাড়িতে সভা করেন মুখ্যমন্ত্রী। শিলিগুড়িতে করেন রোড-শো। শেষে বাঘা যতীন পার্কে সভা। তবে ওয়াকিবহাল মহলের মতে, ২০১৯ সালে তিনি সব মিলিয়ে এই অঞ্চলে তিনটি সভা করেছিলেন। অর্থাৎ, এ বারের থেকে সামান্য বেশি। শেষ-প্রচারে বাগডোগরায় সভা করেন তৃণমূলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। নকশালবাড়ি, খড়িবাড়ি, চোপড়ায় সোহমের মতো অভিনেতা এবং মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস প্রচার সারেন।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের অভিমত, প্রথম পর্যায়ের ভোটে কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার আসনে লোকসভার পাশাপাশি বিধানসভাতেও ভাল ফল করেছিল বিজেপি। তাই সেখানে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব কার্যত ‘মাটি কামড়ে’ পড়েছিলেন। গত লোকসভা ভোটে দার্জিলিং, বালুরঘাট, রায়গঞ্জের মতো আসনে বিজেপি প্রভাব বাড়িয়েছে ঠিকই। কিন্তু ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটে উত্তর দিনাজপুরে পুরোটাই ছিল তৃণমূলের হাওয়া। একই ভাবে দক্ষিণ দিনাজপুরেও কিছু কেন্দ্রে তারা ভাল ফল করে। সেই জমি ধরে রাখতে এ বারে মরিয়া তৃণমূল। তার উপরে বালুরঘাট আবার বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের কেন্দ্র। ফলে সেখানে লড়াইটা হাড্ডাহাড্ডি।
এ বারের ভোট-প্রচারে তাই বালুরঘাটে দুই দলই বাড়িয়েছে ‘তারকাদের’ প্রচার-সভা, বেড়েছে পদযাত্রাও। প্রধানমন্ত্রী বালুরঘাটে সভা করেছেন। বংশীহারিতে অমিত শাহ। শুভেন্দু কুমারগঞ্জে। তপন এবং গঙ্গারামপুরে ‘রোড শো’ করেছেন মিঠুন চক্রবর্তী। পক্ষান্তরে, তপন, কুমারগঞ্জে এবং বালুরঘাটে তিনটি সভা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। গঙ্গারামপুরে সভা ছিল অভিষেকের। কুশমণ্ডিতে সভা, কুমারগঞ্জে ‘রোড শো’ করেছেন দেব। ইটাহারে ‘রোড শো’ এবং বালুরঘাটে সভা করেছেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী তথা ওই আসনের দলীয় পর্যবেক্ষক ব্রাত্য বসু।
রায়গঞ্জে বিধানসভায় ফল ভাল হয়নি বিজেপির। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনুমান, তাই প্রধানমন্ত্রী এ বার রায়গঞ্জেও সভা করলেন। সভা করেন অমিত শাহও। শুভেন্দু তিনটি সভা এবং বিজেপির ‘তারকা-প্রচারক’ মিঠুন চক্রবর্তী সভা করেন। পাল্টা, মুখ্যমন্ত্রী চারটি সভা এবং একটি পদযাত্রা করেন। অভিষেক সভা করেছেন। অভিনেতা দেব রায়গঞ্জ, কালিয়াগঞ্জে দুটি ‘রোড শো’ করেছেন।
শেষ পাতে আরও একটি তথ্য যুক্ত করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা: ২৬ তারিখ যখন এই তিন কেন্দ্র ভোট হবে, তখন লাগোয়া মালদহে সভা করবেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সভার প্রভাব কি ভোটে পড়বে না, প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা।