চন্দ্রকোনার পিয়ারডাঙা বুথের সামনে তৃণমূল প্রার্থী মিতালি বাগের আবির খেলা। নিজস্ব চিত্র।
গোলমাল বলতে এক জায়গায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর লাঠিচার্জ। ইঙ্গিতপূর্ণ ঘটনা বলতে সেই লাঠিচার্জের প্রতিবাদ সেরেই ভোটের মাঝে তৃণমূল প্রার্থী মিতালি বাগের আবির খেলায় মেতে ওঠা। সোমবার আরামবাগ লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত চন্দ্রকোনা বিধানসভা এলাকায় মোটের উপর এই ছিল ভোটের সারৎসার। বাকিটা সব সাদামাটা। রাত ৮টা পর্যন্ত খবর, চন্দ্রকোনায় ভোটের হার ৮৬ শতাংশ।
এ দিন দিনভর সক্রিয় ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনী। এলাকার ৩২৮টি বুথেই ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনী। ভোট দেওয়া নিয়ে গোলমালকে কেন্দ্র করে চন্দ্রকোনার পিয়ারডাঙায় কেন্দ্রীয় বাহিনী লাঠিচার্জও করে। খবর পেয়ে আরামবাগ থেকে পিয়াডাঙায় পৌঁছন তৃণমূল প্রার্থী। মার খাওয়া দলীয় কর্মীদের পাশে দাঁড়ান তিনি। ভোটের মাঝেই দলীয় কর্মীদের সঙ্গে আবিরও খেলেন তিনি। শাসক-বিরোধী সব পক্ষেরই দাবি, চন্দ্রকোনায় ভোট মিটেছে শান্তিতেই। বিজেপির দাবি,পঁচানব্বই শতাংশ বুথেই দলের পোলিং এজেন্ট দেওয়া হয়েছিল। মানুষ নিজের ভোট নিজে দিয়েছেন। বিজেপির চন্দ্রকোনা বিধানসভা নিবার্চনী কমিটির আহ্বায়ক সুদীপ কুশারী বলেন, “বিক্ষিপ্ত দু’একটি ঘটনা ছাড়া ভোট শান্তিতেই মিটেছে। কোথাও কোনও অশান্তি হয়নি। দলীয় কর্মীরা সতর্ক ছিলেন।” চন্দ্রকোনার তৃণমূল বিধায়ক অরূপ ধাড়া বলেন, “চন্দ্রকোনায় মানুষ দু’হাত তুলে আশীবার্দ করেছেন। ভাল ব্যবধানে দলীয় প্রার্থী জয়লাভ করবেন।” বামেদের তরফ থেকেও চন্দ্রকোনায় ভোট নিয়ে তেমন কোনও অভিযোগ নেই। ভগবন্তপুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় তাদের সমর্থকদের বিক্ষিপ্ত বাড়িতে আটকে রাখা হয়েছিল বলে তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য উত্তম মণ্ডল।
এ দিন ভোট ঘিরে চন্দ্রকোনায় ছিল উৎসবের মেজাজ। সকাল থেকেই চড়তে শুরু করে পারদ। বেলা যত বাড়ে ততই তাপমাত্রা বাড়ে। তবু গরমকে উপেক্ষা করেই উৎসবের মেজাজে চলে ভোটদান। একসময় মেঘে ছেয়ে যায় আকাশ। গুমোট কাটিয়ে ঝোড়ো হাওয়া বইতে শুরু করে। দু’এক পশলা বৃষ্টিও হয়। তারপরই আবহাওয়া অনেকটা ঠান্ডা হয়। ভোটের দিন চন্দ্রকোনার কিছু জায়গায় খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন ছিল। এমনিতেই ভোটের দুপুরে দলের কর্মীদের জন্য খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন থাকেই। এ দিন অবশ্য বহু ভোটারও ভোট দিয়ে দলীয় অফিস গুলিতে ঢুকে মধ্যাহ্নভোজ সেরেছেন।
যেহেতু জেলার প্রান্তে ভোট হচ্ছে, তাই প্রশাসনের নজর ছিল চন্দ্রকোনায়। বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ঘটেছে। তার একটি হল পিয়ারডাঙা। তৃণমূলের অভিযোগ, পিয়ারডাঙায় মোতায়েন থাকা কেন্দ্রীয় বাহিনী বিজেপিকে ভোট দেওয়ার কথা জানায়। ভোট দিতে বাধা দেয় বলে অভিযোগ। এই চাপানউতোর নিয়ে এক সময় গোলমাল শুরু হয়। কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখায় তৃণমূল। কেন্দ্রীয় বাহিনী এলাকায় পৌঁছে লাঠি চার্জ শুরু করে। ভোট বন্ধও হয়ে যায়। আধঘন্টা পর অবশ্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। ওই খবর পেয়েই পিয়ারডাঙায় পৌঁছন আরামবাগ কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী মিতালি। দলীয় কর্মী ও মহিলা কর্মীদের উপর কেন্দ্রীয় বাহিনীর লাঠিচার্জের বিরুদ্ধে সরব হন তিনি। কমিশনকে অভিযোগ জানানোর কথাও জানান। তারপর সেখানেই দলীয় কর্মীদের সঙ্গে আবির খেলেন তৃণমূল প্রার্থী। অন্যদিকে চন্দ্রকোনা শহরের জয়ন্তীপুরেও ভোট দেওয়া নিয়ে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সঙ্গে অশান্তি হয়। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যায়। তা ছাড়া বসনছাড়া পঞ্চায়েতের এক বুথে ইভিএম গন্ডগোলের জেরে কিছু সময়ের জন্য ভোটগ্রহণ বন্ধও থাকে।