Lok Sabha Election 2024

সংখ্যালঘু ভোট নিয়ে চিন্তা শাসকের, আসছেন ফিরহাদ

লোকসভা নির্বাচনের ফলেও সেটা স্পষ্ট। ২০১৯ সালে তৃণমূল প্রার্থী শতাব্দী রায়ের জয়ের পিছনে বড় ভূমিকা নিয়েছিল বীরভূমের সংখ্যালঘু ভোট।

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত 

সিউড়ি শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০২৪ ১০:২২
Share:

ফিরহাদ হাকিম। —ফাইল চিত্র।

সংখ্যালঘু ভোট যাতে বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থীর দিকে না-যায়, দিন কয়েক আগে রামপুরহাটে এসে দলের কর্মীদের সে বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। সেই একই লক্ষ্য নিশ্চিত করতে বীরভূমে ভোট প্রচারের শেষ বেলায় দু’দিনের জন্য আসছেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।

Advertisement

তৃণমূল সূত্রে খবর, আগামী ৭ ও ৮ মে নলহাটি ২, মুরারই ২, খয়রাশোল ও দুবরাজপুর ব্লকে একাধিক সভা রয়েছে ফিরহাদের। লক্ষ্য মূলত সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকা। পুরমন্ত্রীর কর্মসূচি বর্ধিত হতে পারে বলেও জানা গিয়েছে। ইতিমধ্যেই জেলা তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের নেতারা বিষয়টি এলাকায় গিয়ে স্থানীয়দের বুঝিয়েছেন।

বিগত বেশ কয়েকটি নির্বাচনে চোখ রাখলে এটা স্পষ্ট, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোট শাসক দল তৃণমূলের অন্যতম আস্থার জায়গা। বিশেষত বীরভূমের মতো একটি লোকসভা আসনে সংখ্যালঘুদের ভোট জেতা হারায় নির্ণায়কও বটে।

Advertisement

সেখান থেকেই চর্চা শুরু হয়েছে বীরভূমের কংগ্রেস প্রার্থী ও জেলা কংগ্রেস সভাপতি মিল্টন রশিদকে নিয়ে। তিনি কতটা সংখ্যালঘু ভোট কাটতে পারবেন বা পারবেন না, তার উপরে বীরভূম কেন্দ্রের ফলাফল অনেকটা নির্ভর করছে বলে দাবি তৃণমূল শিবিরের অনেকের।

গত লোকসভা নির্বাচনের ফলেও সেটা স্পষ্ট। ২০১৯ সালে তৃণমূল প্রার্থী শতাব্দী রায়ের জয়ের পিছনে বড় ভূমিকা নিয়েছিল বীরভূমের সংখ্যালঘু ভোট। শতাব্দী রায় ৬,৫৪,০৭৭টি ভোট পেয়েছিলেন। সেখানে বিজেপি প্রার্থী দুধকুমার মণ্ডল পেয়েছিলেন ৫,৬৫,১৫৩টি ভোট।

ঘটনা হল, বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের অধীরে সাত বিধানসভা আসনের চারটিতে পিছিয়ে থাকা সত্ত্বেও নলহাটি, মুরারই, হাঁসন— এই তিন সংখ্যালঘু অধ্যুষিত বিধানসভা এলাকার ভোটই শতাব্দীকে বড়সড় ব্যবধানে জিততে সহায়ক হয়। কিন্তু এবার সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে কি না, তা নিয়ে একটু সংশয় কাজ করছে দলের অন্দরেই।

২০১৯ সালের লোকসভা এবং ’২১ সালের বিধানসভা নির্বাচন ধরলে একক ভাবে তো নয়ই, কংগ্রেসের সঙ্গে মিলিত ভাবেও দাগ কটার জায়গায় ছিল না বামেরা। সেখানে শাসক দলের প্রধান প্রতিপক্ষ হিসাবে উঠে এসেছে বিজেপি।

তবে, গত বছরের পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে থেকেই জেলা বাম-কংগ্রেস কিছুটা দাগ কাটতে শুরু করেছে। সমঝোতার ভিত্তিতে বেশ কয়েকটি আসন পাওয়ার পাশাপাশি যৌথ ভাবে কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েতও দখল করেছে বাম-কংগ্রেস।

জেলার এক তৃণমূল নেতার কথায়, ‘‘পঞ্চায়েত আর লোকসভা ভোট এক নয় ঠিকই। এটা দেশের সরকার গঠনের ভোট। কিন্তু পঞ্চায়েত নির্বাচনের ধারা যদি বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী ধরে রাখতে পারেন, তা হলে আমাদের সমস্যা বাড়তেই পারে।’’ তিনি জানান, সে কারণেই ব্রাত্য বসু সংখ্যালঘু ভোট ভাগ না-হওয়ার বিষয়ে সকর্ক করেছেন। ফিরহাদ হাকিম এসেও হয়তো সে বিষয়ে বার্তা দেবেন বলে মনে করছেন তৃণমূল নেতারা।

বীরভূম লোকসভা আসনে ১৮ লক্ষ ৫৭ হাজার ভোটার। সরকারি হিসাবে একমাত্র রাজনগর এবং মহম্মদবাজার বাদ দিলে বাকি ব্লকগুলিতে সংখ্যালঘু ভোটারদের সংখ্যা গড়ে ৩০ শতাংশ। মুরারই, নলহাটি ও হাঁসন বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে থাকা ব্লকগুলিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটারই সংখ্যালঘুরাই।

মিল্টন রশিদ সেই হাঁসন কেন্দ্রেরই প্রাক্তন কংগ্রেস বিধায়ক। মিষ্টভাষী, শিক্ষিত এই সংখ্যালঘু প্রার্থী ভোট কাটতেই পারেন বলে মনে করেছে শাসক-বিরোধী দুই শিবিরই।

মিল্টন রশিদের আত্মবিশ্বাসী মন্তব্য, ‘‘খুব ভাল ফল হবে আমাদের পক্ষে।’’ অন্য দিকে, শতাব্দী রায় বলছেন, ‘‘মানুষ সচেতন, কোন সরকার তাঁদের পক্ষে, সকলেই জানেন। এ বার জয়ের ব্যবধান বাড়বে।’’

জেলা তৃণমূলের কোর কমিটির আহ্বায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘সংখ্যালঘু মানুষ ভাল করেই জানেন সিএএ-এনআরসি রুখতে গেলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত শক্ত করতে হবে। তাই শতাব্দী রায় থাকলে তাঁদের কতটা উপকার, এটা বুঝতে তাঁদের অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement