লাভপুরে বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী অসিত মালের সমর্থনে জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার। নিজস্ব চিত্র
ফের বীরভূমে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফের মমতার মুখে জেলবন্দি জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা। সেই সঙ্গে রবিবার ভোট প্রচারে এসে অমর্ত্য সেনের সঙ্গে বিশ্বভারতীর জমি নিয়ে বিবাদের প্রসঙ্গও তুলে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
রবিরার লাভপুরের ফুল্লরা মেল্লার মাঠে বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী অসিত মালের সমর্থনে সভা ছিল মমতার। সেখানেই সভামঞ্চ থেকে মমতা অনুব্রতর (কেষ্ট) পাশে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘‘কেষ্ট আজকে জেলে থাকলেও আমি মনে করি এই ছেলেটা জেলার উন্নয়টা হাতের মুঠোয় রেখে কাজ করত।’’ ক’দিন আগেই তারাপীঠের কড়কড়িয়ায় বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী শতাব্দী রায়ের সমর্থনে সভায় এসেও মমতা অনুব্রতর পাশে থাকার বার্তা দিয়েছিলেন। বিজেপি চক্রান্ত করে ভোটে অনুব্রতর থাকা ঠেকাতেই তাঁকে গ্রেফতার করেছে বলে এ দিনও অভিযোগ তোলেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি সাজিয়ে গুছিয়ে কেস করেছে। কেষ্টকে ধরে রেখেছে কেন? ইচ্ছে করে রেখে দিয়েছে, যাতে সে তৃণমূল করতে না পারে, ভোটে বেরোতে না পারে। দেখবেন বীরভূমের নির্বাচন হয়ে যাবে, ওকে ছেড়ে দেবে।’’
এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর সভায় প্রার্থী তথা বিদায়ী সাংসদ অসিত ছাড়াও হাজির ছিলেন রামপুরহাটের বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, জেলা কোর কমিটির আহ্বায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী, বিধায়ক অভিজিৎ সিংহ, সভাধিপতি কাজল শেখ, কেতুগ্রামের বিধায়ক শেখ শাহনেওয়াজ প্রমুখ। আগের দিনের মতোই এ দিনও মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহের বাড়িতে কেন্দ্রীয় সংস্থার হানার প্রসঙ্গ তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘চাঁদুর বাড়িতেও কেন্দ্রীয় সংস্থা পাঠানো হয়েছিল। তার কাছে এক বিজেপি নেতার ফোন আসে, তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি করলে কেন্দ্রীয় সংস্থা আয়কর দফতর পিছনে লাগবে না।’’
তৃণমূল সূত্রে দাবি, অনুব্রত জেলবন্দি থাকলেও জেলায় নেতাকর্মীদের বড় অংশের মধ্যে তাঁর প্রভাব এখনও অটুট। নির্বাচনের আগে সেই নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতেই মমতা একাধিকবার কেষ্টর পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়েছেন বলে দল সূত্রে দাবি। জেল থেকে ছাড়া পেলে অনুব্রতকে ‘উপযুক্ত সম্মান’ দেওয়ার কথাও এর আগে বলেছেন মমতা।
ভোটের আগে এ দিন অমর্ত্য সেনকে অপমানের অভিযোগ তুলেও জেলার আবেগকে ছুঁতে চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। নাম না করে বিশ্বভারতীর প্রাক্তন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকে নিশানা করেছেন ‘মোদীর ভাইস চ্যান্সেলর’ বলে। বিজেপিকে আক্রমণ করে মমতা বলেন, ‘‘অমর্ত্য সেনকে জমিহারা করতে চেয়েছিল! আমরা রুখে দাঁড়িয়েছিলাম।’’ কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বভারতীর প্রাক্তন উপাচার্যের নাম না করে মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, ‘‘মোদীর ভাইস চ্যান্সেলর কী করেছিল ভুলে গেছেন? বীরভূমের বদনাম করে দিয়েছিল।’’
এ দিনের সভা থেকে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের প্রতি বঞ্চনার অভিযোগ তুলেও সরব হন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা দর্শকদের প্রশ্ন করেন, ‘‘মোদী বলেছে বিনা পয়সায় বিদ্যুৎ, গ্যাস দেয়? সত্যি?’’ দর্শকরা চিৎকার করে বলেন, ‘‘না!’’ মমতার তোপ, ‘‘রেশনের একটি টাকাও দেয় না। অথচ চুরির কথা বলতে আসে! ওরা ১০০ দিনের টাকা দেয়নি। আমরা দিয়েছি। আবাস যোজনার টাকা দেয়নি।’’
এ দিনের সভায় হাজার পঁচিশেক লোক হয়েছিল বলে পুলিশ সূত্রে দাবি। এলাকার বিধায়ক অভিজিৎ সিংহ অবশ্য দাবি করেছেন, ৫০ হাজারেও বেশি লোক হয়েছিল। বিজেপির সাংগঠনিক জেলা সভাপতি (বোলপুর) সন্ন্যাসীচরণ মণ্ডলের কটাক্ষ, ‘‘এত লোক হয়েছিল যে প্যান্ডেলই ভরেনি! ওই সংখ্যক লোক প্রধানমন্ত্রীর হেলিপ্যাডের আশেপাশে দাঁড়িয়েছিলেন।’’