নিকুঞ্জপুরের সভায় দুই প্রার্থীর সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র ।
বাঁকুড়া কেন্দ্রে দলীয় প্রার্থীর জয় নিয়ে আত্মবিশ্বাসের সুর গলায়। তবে বিষ্ণুপুর প্রসঙ্গে খানিক থমকালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, “বিষ্ণুপুর সিটটাও জিতবে, যদি ওন্দার মানুষ ভোট দেন। আর যদি ভোটটা না দেন, তা হলে আমি দুঃখ পাব।”
রবিবার ওন্দার নিকুঞ্জপুরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভা ছিল। সেই সভাস্থলেই সোমবার সভা করেন মমতা। তিনি বলেন, “আমি শুনেছি বাঁকুড়ার সিটটা অরূপ (অরূপ চক্রবর্তী, বাঁকুড়া কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী) জিতবে।” তাঁর সংযোজন, “ওন্দায় আগে কিছু ছিল না। আজ ওন্দা, ওন্দা হয়েছে। কারণ, অনেক কাজ আমরা করেছি।”
গত শনিবার বিষ্ণুপুরের জনসভা থেকেও মুখ্যমন্ত্রী বিষ্ণুপুর কেন্দ্রের আওতায় থাকা ওন্দা ও কোতুলপুরে দলকে বিশেষ নজর দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। দলের একাংশের সূত্রে জানা যায়, ওই দুই এলাকায় তৃণমূলের পুরনো কর্মীদের একাংশ বসে গিয়েছেন। স্থানীয় স্তরে নেতাদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের ক্ষোভও কম নয়। বিশেষ করে গত পঞ্চায়েত ভোটে কোতুলপুরে পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি স্তরে ভোট দিতে না পারাকে ভাল ভাবে নেননি সাধারণ মানুষ। এ নিয়ে দলের একাংশও ক্ষোভ জানিয়েছে। এর পাশাপাশি, ওন্দায় স্থানীয় স্তরের সম্ভাবনাময় তৃণমূল কর্মীদের সরিয়ে রেখে বাঁকুড়ার লোকজনকে দিয়ে কাজ করানোর অভিযোগ রাজ্যে রাজনৈতিক পালা বদলের পর থেকে উঠছে। সে ছবি এখনও বদলায়নি বলে দাবি। নিচুতলায় নেতৃত্বে থাকা দলের কর্মীদের অনেকে জনবিচ্ছিন্ন বলেও অভিযোগ তোলেন দলেরই একাংশ। অভিযোগ মানতে নারাজ বিষ্ণুপুর কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সুজাতা মণ্ডল বলেন, “দলে কোনও সমস্যা নেই। বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রের আওতায় থাকা সব ক’টি কেন্দ্রেই আমরা অনেক এগিয়ে। তবে মুখ্যমন্ত্রী যে নির্দেশ দিয়েছেন, তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হবে।”
ওন্দার উন্নয়ন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী দাবিকে কটাক্ষ করেছেন ওন্দার বিধায়ক তথা বিজেপির বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অমরনাথ শাখা। তাঁর দাবি, “উন্নয়ন হয়ে থাকলে আজ মুখ্যমন্ত্রীকে এ কথা বলতেই হত না। পঞ্চায়েতগুলিতে বিনা বাধায় জয় পেয়ে লুটতরাজ চালিয়েছে তৃণমূল। কেবল দুর্নীতি আর দুর্নীতি! ওরা সংখ্যালঘুদের হয়ে বড় বড় কথা বলে, অথচ ওন্দার সংখ্যালঘু প্রধান এলাকাগুলিতে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সব চেয়ে বেশি ক্ষোভ শোনা যায়।”
এ দিনও নাম না করে বিষ্ণুপুরের বিজেপি প্রার্থী সৌমিত্র খাঁকে আক্রমণ করেন মমতা। তিনি বলেন, “এখানে যে দাঁড়িয়েছে, তাঁকে নাকি বিয়ে করেছিল আমাদের সুজাতা। তাঁর যে কত বন্ধু, তার ঠিক নেই। তিনি আবার সারদা মায়ের ছবি তুলে দিচ্ছে, আমার লজ্জা হচ্ছে।” প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশেও তাঁর তোপ, “জয়রামবাটীতে সারদা মায়ের জন্মস্থান। আমি হাজার বার গিয়েছি, আপনি (মোদী) ক’বার গিয়েছেন?” পাল্টা সৌমিত্র বলেন, “রাজনৈতিক ভাবে আমাকে আক্রমণ করার মতো কিছু পাচ্ছেন না বলেই এ সব ভিত্তিহীন কথা বলছেন। এক জন মুখ্যমন্ত্রীর মুখে এমন মন্তব্য মানায় না। সাধারণ মানুষও ওঁর কথায় ক্ষুব্ধ। প্রধানমন্ত্রী কাজ করেন, মুখ্যমন্ত্রীর মতো দেখনদারিতে বিশ্বাসী নন।”