সাঁইথিয়ার জনসভায় ধামসা বাজালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধয্যায়। আদিবাসী ও লোকশিল্পীদের সঙ্গে নাচে পা মেলালেন প্রার্থী শতাব্দী রায়। সোমবার। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়
মহম্মদবাজার ব্লকে প্রস্তাবিত ডেউচা-পাঁচামি কয়লা খনি প্রকল্প নিয়ে প্রথম থেকেই ইতিবাচক মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই প্রকল্পের কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে। সোমবার সাঁইথিয়া শহরের মেলার মাঠে নির্বাচনী সভা থেকেও সেই ডেউচা-পাঁচামি নিয়ে স্বপ্ন ফেরি করলেন মুখ্যমন্ত্রী।
এ দিন বেলা আড়াইটে নাগাদ মঞ্চে বক্তব্য রাখতে উঠে প্রথমের দিকেই ডেউচা-পাঁচামি প্রসঙ্গ তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘‘বীরভূম জেলার ভবিষ্যৎ খুব উজ্জ্বল। কারণ, ডেউচা-পাঁচামি পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম কয়লা খনি হবে। ৩৫ হাজার কোটি টাকা লগ্নি হচ্ছে। কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। আর একটি সাব স্টেশনও ৩৫ কোটি টাকা খরচ করে আমরা করছি।’’ ওই প্রকল্পে ঠিক কতটা কাজ এগিয়েছে, এ দিন তা-ও জানান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের নিজেদের অনেকটা জমি ছিল। এ ছাড়াও ১৪২২ জন জমিদাতাকে জুনিয়র কনস্টেবল ও গ্রুপ ডি পদে চাকরি দেওয়া হয়েছে।’’ তাঁর দাবি, বাংলায় ১০০ বছর বিদ্যুতের অভাব হবে না। রাজ্যে বিদ্যুতের দাম কমিয়ে বাইরেও বিদ্যুৎ বিক্রি করতে পারবে।
বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের দলীয় পার্থী অসিত মালের সমর্থেনে রবিবার লাভপুরে সভা ছিল মমতার। সোমবার সভা করলেন বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী শতাব্দী রায়ের সমর্থনে। ঘোষিত সূচি মেনে মুখ্যমন্ত্রীর কপ্টার ২টো ২০ নাগাদ মঞ্চের পাশে হেলিপ্যাডে নামে। ততক্ষণে জাময়েত হয়েছে। মঞ্চে উপস্থিত হয়েছে জেলার ও ব্লকের নেতা ও মন্ত্রীরা। ছিলেন শতাব্দী রায়। অন্য দিনের তুলনায় তাপমাত্রা কম থাকলেও বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকায় গুমোট পরিবেশ ছিল। গরমে নাজেহাল হয়েছে জনতা।
ডেউচা-পাঁচামির প্রসঙ্গের কিছু পরেই কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে আক্রমণ করেন মুখ্যমন্ত্রী। কী ভাবে এ রাজ্যের মানুষকে বঞ্চিত করা হচ্ছে, রাজ্য সরকার ও বাংলার মানুষকে আসম্মান করা হচ্ছে, রাজ্যেকে বদনাম করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন মমতা। মমতা বলেন, ‘‘তিন বছর ধরে ১০০ দিনের কাজ করতে দেয় না বাংলাকে। তা সত্ত্বেও আমরা নিজেদের ক্ষমতার জোরে একটা কর্মশ্রী প্রকল্প করছি। যেখানে বছরে ৫০ দিনের কাজ জবকার্ড হোল্ডাররা পাবেন। টাকা দিল্লি নয়, আমরা দেব।’’ এর পরে আবাস যোজনার প্রসঙ্গ তুলেও বিজেপি-কে বিঁধে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আবাসেও টাকা বন্ধ। ৪৩ লক্ষ বাড়ি করে দিয়েছিলাম। তাতে আমাদের ভাগ আছে, ওদেরও ভাগ আছে। কিন্তু ওরা আমাদের কথা বলে না। নিজের ছবি লাগায়। প্রচার করছে, সব নাকি মোদীজি করছে।’’ প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করে মমতার মন্তব্য, ‘‘এত মিথ্যাবাদী, এত হিংসুটে, এত অত্যাচারী, এত স্বৈরাচারী, এত পাপাচারী দেখিনি। যাঁদের জীবন শুরু হয়েছে দাঙ্গার মধ্যে দিয়ে।’’
মমতা তোলেন সন্দেশখালির প্রসঙ্গও। জনতার উদ্দেশে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘আমার সন্দেশখালির মা-বোনেদের কী ভাবে পরিকল্পনা করে অসম্মান করেছে, দেখেছেন। ওরা জানে না মেয়েদের কাছে টাকাটা বড় কথা নয়, মেয়েদের আত্মসম্মান মেয়েদের গরিমার সম্মান অনেক বেশি।’’ মমতার অভিযোগ, ‘‘ভোটে জেতার জন্য নীল নকশা তৈরি করে বিজেপি। তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘বেশি বাড় বেড়ো না, ঝড়ে পড়ে যাবে। আর বেশি চক্রান্ত কোরো না, এক দিন চক্রান্ত ফাঁস হবেই।’’
এ দিনের সভা থেকে ফের মমতা এসএসসি-র চাকরিহারাদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন। বলেছেন, ‘‘মনে রাখবেন মোদীরা দু’কোটি ছেলেমেয়ের চাকরি দেবে বলেছিল। চাকরি তো দেয়নি বেকারের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে। উপরন্তু আমাদের ২৬ হাজার শিক্ষক- শিক্ষিকার চাকরি ওরা খেয়ে নিয়েছে কোর্টে মামলা করে। যাঁরা ভুল করেননি, অন্যায় করেননি, সকলকে বাদ দিয়ে দিল! আমরা ওঁদের পাশে আছি।’’
জেলা বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, যে প্রধানমন্ত্রীকে এত আক্রমণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী, সেই প্রধানমন্ত্রীর তিন দিন আগে সাঁইথিয়া ব্লকের আমোদপুরের নির্বাচনী জনসভায় যে উদ্দীপনা ও ভিড় দেখা গিয়েছে, এ দিন মমতার জনসভায় ভিড় তার ধারেকাছেও ছিল না। আড়ালে সে কথা মানছেন জেলা তৃণমূলের একাংশও। প্রকাশ্যে হাজার পঞ্চাশেক লোক হয়েছিল দাবি করলেও একান্তে জানাচ্ছেন, জমায়ত ১০-১৫ হাজারের বেশি হবে না। জেলা তৃণমূলের এক নেতা বলেন, ‘‘গত তিন মাসে মোট চারটি সভা (একটি সরকারি সভা) করছেন মুখ্যমন্ত্রী। শেষ ১৫ দিনে তিনটি নির্বাচনী সভা। যে এলাকায় হচ্ছে, সেই এলাকার লোকজনকেই ডাকা হচ্ছে। মোদীর সভার মতো গোটা জেলা বা জেলার বাইরে থেকে লোক ডাকা হয়নি।’’