রামনবমীতে পুজো দিচ্ছেন দেব। ঘাটালের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের রাম মন্দিরে। ছবি: কৌশিক সাঁতরা।
পাশাপাশি দুই লোকসভা কেন্দ্র। মেদিনীপুর ও ঘাটাল। দুই তারকা তৃণমূল প্রার্থীই রামনবমীতে সারলেন জনসংযোগ। তবে স্লোগানে ভিন্ন তাঁরা। মেদিনীপুরের প্রার্থী জুন মালিয়া বললেন, জয় সীতা-রাম’। দেব রইলেন, ‘জয় শ্রীরামে’ই। ঘাটালে দেবের প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির হিরণ চট্টোপাধ্যায়ও মোটরবাইকে শোভাযাত্রায় অংশ নিয়ে রামপুজো করে প্রচারে মেতেছেন।
কয়েক বছর আগের কথা। জয় শ্রীরাম স্লোগান নিয়ে কম রঙ্গ দেখেনি বঙ্গ রাজনীতি। সে সময় মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জয় শ্রীরাম স্লোগানকে একটু পাল্টে জয় সীতা-রাম হিসেবে ব্যবহার করতেন। এখন সময় বদলেছে। রাম নবমীর দিন রামকে নিয়ে যুযুধানদের লড়াই চলে বটে তবে জয় শ্রীরাম এখন আর রাজনৈতিক শোয়ের ‘শো স্টপার’ নয়। ওই স্লোগান গেরুয়া শিবিরের ‘পেটেন্ট’ নয় বলে দাবি করে তা ব্যবহার করেন তৃণমূল নেতানেত্রীরা। বুধবার রামনবমীর দিন জুন অবশ্য রইলেন দিদির ব্যবহৃত পুরনো স্লোগানে। তবে দেব চলতি হাওয়ার পন্থী। তাঁর পছন্দ জয় শ্রীরামই।
এ দিন সকালে ঘাটাল শহরে কুশপাতায় রাম মন্দিরে যান দেব। সেখানে গিয়ে জয় শ্রী রাম বলতে বলতে সোজা মন্দিরে ঢুকে পড়েন তৃণমূলের তারকা প্রার্থী। ধূপ জ্বালিয়ে রামপুজো করে কপাল তিলক পরে মন্দিরের বাইরে জনসংযোগ সারেন দেব। উপস্থিত মহিলাদের সঙ্গে খোশ মেজাজে কথা বলতেও দেখা যায় তাঁকে। সকাল এগারোটার চড়া রোদে রাম মন্দির থেকে শুরু হয় রামনবমীর মিছিল। সেই মিছিলে তৃণমূল সমর্থক, নেতৃত্বরা থাকলেও দলীয় স্লোগান ছিল না । কুশপাতার একাধিক পল্লিতে হেঁটে দেব যান ঘাটাল শহরের পাঁশকুড়া বাসস্ট্যান্ডে অনুষ্ঠিত রাম নবমী পুজোয়। তার কিছুক্ষণ আগেই পদ্ম প্রার্থী হিরণও পাঁশকুড়ার বাসস্ট্যান্ডের রামমবমী অনুষ্ঠান থেকেই বাইক শোভাযাত্রায় অংশ নেন। দেবও সেখানে গিয়ে প্রণাম করেন। শরবত খান।তারপর ফের জয় শ্রী রাম,জয় শ্রী রাম বলতে বলতে গাড়িতে উঠে যান।
রামনবমী উপলক্ষে ঘাটালে ভিড় ছিল ভালই। ফলে দুই তারকা প্রার্থী রাম পুজোর ফাঁকে জনসংযোগে মেতে ওঠেন। এ দিন ঘাটালের পদ্ম প্রার্থীর অন্যত্র (ঘাটালের বাইরে) প্রচার সূচি ছিল। দেব রামনবমীতে ঘাটালে অংশ নেওয়ার কথা শাসক দলের পক্ষ থেকে আগেভাগেই প্রচার করেছিল। রামনবমীর অনুষ্ঠান তাই হিরণও হাতছাড়া করতে রাজি হননি। তাই এ দিন সাত সকালেই ঘাটালে চলে আসেন হিরণ। পাঁশকুড়া বাসস্ট্যান্ডে ঘাটাল রাম নবমী কমিটির আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দেন।সেখান থেকেই শুরু হয় হিরণের বাইক শোভাযাত্রা। প্রথমে ঘাটাল শহরের বিবেকানন্দ মোড় লাগোয়া হুনুমানজির মন্দিরে যান হিরণ। সেখানে পুজো দিয়ে গাড়িতে করে যান বরদা চৌকানে। এ দিন হিরণের সঙ্গে ছিলেন ঘাটালের বিজেপি বিধায়ক শীতল কপাট। বরদা চৌকান থেকে হিরণ যান স্থানীয় নবগ্রামে আরও একটি রামনবমী অনুষ্ঠানে। নবগ্রাম থেকে ভোট প্রচারে বেরিয়ে যান।
ঘাটালে দেবের রামনবমী অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া প্রসঙ্গে দেবকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি পদ্ম প্রার্থী। হিরণ বলেন, “আরে তিনি(দেব) তো ফাটা জিন্স পরে ইদ পালন করতে গিয়েছিলেন। হাঁটু দেখা যাচ্ছিল। আমি তো মুসলিম মা বোনদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম,আপনারা কী ফাটা জামা কাপড় পরে ইদ পালন করেন।” হিরণকে বলতে শোনা যায়, “আজ কী পরে যাবেন জানি না।আজ তো শুনছি, সকাল থেকেই মাথায় তিলক টিলক পরে রামনবমী পালন করছেন।আসলে এরা কোনও ধর্মের নয়। ভোটের জন্য রাজনীতি করে। ভোটের জন্য ধর্মকে বদলে দেয়।” দেব অবশ্য বলেন, “এবার আমি ঘাটালেই ছিলাম। আমাকে কমিটির পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। আমি গিয়েছিলাম।”
ঘাটালের রামনবমী অনুষ্ঠান সেরে দেব ঘাটাল কুঠিবাজারে যান। সেখানে মায়ের জন্য শাড়ি এবং নিজের জন্য পাঞ্জাবী কেনেন। বিকালে যান বীরসিংহ। বিদ্যাসগরের জন্মভিটেয় গিয়ে মালা পরিয়ে বীরসিংহ মোড়ে পথসভা করেন। বীরসিংহ থেকে দেব যান মনোহরপুরে। রোড শো করেন।পরে শ্যামসুন্দরপুরে পথসভা করেন।