—প্রতীকী চিত্র।
কংগ্রেসের সঙ্গে আসন ভাগ নিয়ে দলীয় কর্মীদের মন বুঝতে সোমবার কাঁথিতে লোকসভা নির্বাচন কমিটির গোপন বৈঠক ডেকেছিল সিপিএম। সেখানে নেতা-কর্মীদের একাংশের ক্ষোভের মুখে পড়তে হল সিপিএম নেতৃত্বকে।
বৈঠকে হাজির ছিলেন কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী উর্বশী ভট্টাচার্য। সিপিএম নেতৃত্বের অস্বস্তি বাড়িয়ে সেখানেই সিপিএমের নেতা-কর্মীদের একাংশ প্রশ্ন তুললেন, কংগ্রেসকেই যদি আসন ছাড়তেই হবে তা হলে প্রার্থী ঘোষণায় এত দেরি হল কেন? এতে প্রচারের ও সংগঠনের অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। পরিস্থিতি জটিল হতে শুরু করলে লোকসভা নির্বাচন কমিটির দলীয় নেতাদের কার্যত জোর করেই থামিয়ে দেন সিপিএমের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা কমিটির সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি।
পরে নিরঞ্জন অবশ্য দাবি করেন, সমস্যা মিটে গিয়েছে। তাঁর কথায়,"কংগ্রেসের সঙ্গে জোট নিয়ে আমাদের দলের স্থানীয় নেতাদের উষ্মা ছিল। তার জন্যই সোমবার সূর্যকান্ত মিশ্র এসেছিলেন। কী কারণে জোট, তা তিনি বোঝানোর পরে আমাদের দলের নেতারা ঠিক করেছেন, আগামী বুধবার থেকে প্রতি ব্লকে প্রচারে নামবেন।’’
সোমবার কাঁথি শহরে পুরনো দিঘা বাস স্ট্যান্ড এলাকায় একটি লজে সিপিএমের কাঁথি লোকসভা নির্বাচন কমিটির বৈঠক ডাকা হয়। সেখানে পার্টির তরফে ৪৮ জন প্রতিনিধি অংশ নেন। সিপিএমের পলিটব্যুরো নেতা সূর্যকান্ত মিশ্র এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অনাদি সাহু উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শুরু হওয়ার পর ভগবানপুরের এক যুব নেতা ও খেজুরির সিপিএম নেতা কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের সমালোচনায় সরব হন। তথ্য- পরিসংখ্যান দিয়ে তাঁরা প্রশ্ন তোলেন, ২০১১ সালে তৃণমূলের সঙ্গে যারা জোট করে বামেদের রাজ্যের ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিয়েছিল কেন তাদের সঙ্গে ২০১৬ সালে জোট করতে হল? যে পার্টি জেলায় একেবারে ক্ষয়িষ্ণু, তাদের কেন কাঁথি লোকসভা আসন ছেড়ে দেওয়া হল?'
বৈঠকে পরের দিকে হাজির হন কংগ্রেস প্রার্থী ঊর্বশী ভট্টাচার্য। সঙ্গে ছিলেন জেলা কংগ্রেস সভাপতি মানস কর মহাপাত্র এবং জেলা কংগ্রেস নেতা শিউ মাইতি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিপিএমের একাধিক নেতা বলেন, ‘‘কাঁথিতে দেরি করে প্রার্থী ঘোষণার ফলে দলের বেশ কিছু কর্মী নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছেন। অনেক দেওয়াল তৃণমূল এবং বিজেপি দখল করে নিয়েছে। ফলে আমাদের সংগঠন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ বিষয়ে রাজ্য এবং জেলা নেতৃত্বের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল। তাঁরা জানিয়েছেন, লোকসভা ভোট মিটে যাওয়ার পর এ বিষয়ে আলোচনা করা হবে।"
গত শনিবার রাতে ঊর্বশীর নাম ঘোষণার পর এলাকার প্রাক্তন বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী চক্রধর মেইকাপ সমাজ মাধ্যমে এ ব্যাপারে ক্ষোভ উগরে দেন। তিনি লেখেন, ‘‘এক জনকে বাঁচাতে গিয়ে নিজের সংগঠনের ক্ষতি করা হচ্ছে।’’ এ দিনের বৈঠকে সেই চক্রধরকে কিন্তু ডাকা হয়নি। তবে, সিপিএমের রাজ্য নেতারা বোঝানোর চেষ্টা করেন, কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী যদি গলায় লাল উত্তরীয় ঝুলিয়ে প্রচার করতে পারেন তা হলে এখানে আপত্তি কোথায়! উর্বশী কংগ্রেসের প্রার্থী নন। বাম- কংগ্রেস জোটের প্রার্থী।
এ দিন সিপিএম কর্মীদের অসন্তোষ নিয়ে উর্বশী বলেন, ‘‘সিপিএমের গোপন বৈঠক হলেও আমাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তাই গিয়েছিলাম। সেখানে প্রার্থী হিসেবে পরিচয় করানো হয়েছে।’’