Sandeshkhali farm Lands

জমি ফেরত পেয়েও হতাশা, সিঙ্গুরের সুর সন্দেশখালিতে

লবণাক্ত হয়ে যাওয়া মাটিতে কবে আবার ফলন হবে, চিন্তা তা নিয়েই। জমি হাতে পেয়েও চাষিরা অসহায়। তাঁরা চাইছেন, জমি চাষযোগ্য করে দিক সরকার।

Advertisement

নবেন্দু ঘোষ 

সন্দেশখালি শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০২৪ ০৯:৪৫
Share:

বেড়মজুরে চাষের জমি কেটে মাটি বিক্রি করা হয়েছে। ফলে জমি এখন গভীর পুকরে পরিণত হয়েছে। নিজস্ব চিত্র ।

সিঙ্গুরের সুর সন্দেশখালিতে!

Advertisement

কয়েক মাস আগে পর্যন্ত শেখ শাহজাহান-সহ সন্দেশখালির তৃণমূল নেতাদের একাংশের বিরুদ্ধে কৃষিজমি দখল করে ভেড়ি বানিয়ে নদীর নোনা জল ঢুকিয়ে মাছ চাষের প্রচুর অভিযোগ ছিল। সাম্প্রতিক আন্দোলনের জেরে এ নিয়ে প্রশাসনের টনক নড়ে। প্রশাসনের হস্তক্ষেপে সন্দেশখালি, বেড়মজুর ১ ও ২ পঞ্চায়েতের অনেকেই দখল হওয়া জমি ফিরে পেয়েছেন। জমি থেকে জল বের করা হয়েছে। কিন্তু লবণাক্ত হয়ে যাওয়া মাটিতে কবে আবার ফলন হবে, চিন্তা তা নিয়েই। জমি হাতে পেয়েও চাষিরা অসহায়। তাঁরা চাইছেন, জমি চাষযোগ্য করে দিক সরকার।

সন্দেশখালির চাষিদের এই দাবির সঙ্গে যেন মিলে যাচ্ছে সিঙ্গুরের চাষিদের দাবি! সিঙ্গুরে না-হওয়া গাড়ি কারখানার জমি চাষিরা হাতে পাওয়ার পরে বেশ কয়েক বছর গড়িয়ে গেলেও তার সবটা চাষযোগ্য হয়নি। তা নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে। জমি চাষযোগ্য করে দেওয়ার দাবি রয়েছে এখানেও।

Advertisement

সন্দেশখালির চাষিদের দাবি নিয়ে বসিরহাট মহকুমা (সন্দেশখালি এই মহকুমাতেই) কৃষি অধিকারিক পূর্ণেন্দু সরকার বলেন, ‘‘বৃষ্টি হলে জমির লবণাক্ত ভাব কমে যাবে। আর কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হবে কি না, শীর্ষকর্তারা জানেন।’’

সন্দেশখালি ২ ব্লক প্রশাসন সূত্রে খবর, এখানে ইতিমধ্যে প্রায় ১০০ একর জমি অন্তত ১২০ জন কৃষককে ফেরানো হয়েছে। জেলিয়াখালির এক জায়গায় বহু বছর ধরে প্রায় ৪০০ বিঘা জমিতে মাছ চাষ হচ্ছে। মালিকদের আর্জিতে জমি ফেরানোর কাজ চলছে।

সন্দেশখালি পঞ্চায়েতের মাঝেরপাড়ার সুদৃষ্ণা দাস বলেন, ‘‘আমাদের এক বিঘা জমি দখল করে মাছ চাষ করা হচ্ছিল। সেই জমি সরকার ফিরিয়ে দিলেও যে ভাবে নোনা জল ঢোকানো হয়েছিল, তাতে জমির উর্বরতা নষ্ট হয়েছে। আগে দু’বার ধান হত। এখন কোনও চাষই হবে না।’’ জমির জল নিকাশি ব্যবস্থাও দফারফা। সুদৃষ্ণারা এখন চাল কিনে খান।

বেড়মজুর ২ পঞ্চায়েতের কাটপোল বাজার এলাকায় কল্পনা সর্দার ও রণজিৎ সর্দারের প্রায় সাড়ে সাত বিঘা জমি আছে। তাতে প্রায় ৬০-৭০ ফুট গর্ত। অভিযোগ, ৫-৬ বছর আগে এই জমি বেদখল করে মাটি কেটে বিক্রি করা হয়। কল্পনা বলেন, ‘‘জমি ফিরে পেলাম। কিন্তু আগের মতো চাষ করতে গেলে অন্তত দু’-তিন লক্ষ টাকা খরচ করে মাটি ফেলে সমান করতে হবে। আমাদের পক্ষে অসম্ভব। এই গভীর পুকুর মাছ চাষেরও অনুপযুক্ত।’’

অর্চনা ভুঁইয়ার প্রায় সাড়ে পাঁচ বিঘা জমি বেদখল করে একই কায়দায় নোনা জল ঢুকিয়ে মাছ চাষ করা হচ্ছিল বলে অভিযোগ। অর্চনা বলেন, ‘‘জমি ফেরত পেলাম। কিন্তু তা ঝিলে পরিণত হয়েছে। মাটি ফেলে সমান করতে লাখ টাকা খরচ। পাব কোথায়! মাছ চাষের সামর্থ্যও নেই। জমি আগের অবস্থায় করে সরকার ফিরিয়ে দিলে ভাল হত।’’

এই অবস্থায় কী করবেন চাষিরা?

নরেন্দ্রপুরের রামকৃষ্ণ মিশন বিবেকানন্দ এডুকেশনাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিবেশ ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুদীপ্ত ত্রিপাঠী বলেন, ‘‘এই জমি যদি দু’বছর বৃষ্টি পায় এবং সেই জল নিকাশি নালার মাধ্যমে বেরিয়ে যায়, তবে লবণাক্ত ভাব অনেকটা কমে যাবে। তারপরে আবার চাষ হবে। এখন ধৈঞ্চা চাষ করলে নোনা কাটবে, জমি উর্বর হবে। জমি পরীক্ষা করে সেই মতো চাষ করা উচিত।’’

সিঙ্গুরে টাটাদের গাড়ি কারখানার জন্য বাম আমলে ৯৯৭ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। ২০১৬ সালে শীর্ষ আদালতের নির্দেশে তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকার ওই জমি চাষিদের ফিরিয়ে দেওয়ার সময় ‘চাষযোগ্য’ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। সেইমতো কিছু কাজও হয়। কিন্তু জমির অনেকাংশেই এখনও চাষ হচ্ছে না। নিকাশি সমস্যাও চাষিদের ভোগাচ্ছে।

সন্দেশখালির জমিতে ফসল ফিরবে কি না, সময় বলবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement