বোমা উদ্ধার সাগরপাড়ায়। নিজস্ব চিত্র।
ভোট মিটলেও মিটছে না বোমার কারবার। গণনার মাত্র কয়েক দিন আগে বুধবার রাতে ডোমকল থানার অম্বরপুর এলাকায় একটি বাগানে এবং বৃহস্পতিবার ভোরবেলা সাগরপাড়ার পোল্লাগাড়ি গ্রামে একটি বাড়ির আঙিনা থেকে উদ্ধার হল বোমা। আর এই বোমা উদ্ধারের ঘটনাকে কেন্দ্র করেই আবারও ঘরপোড়া গরুর মতোই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন ডোমকলের সাধারণ মানুষ। প্রশ্ন উঠছে তা হলে কী নির্বাচনের সময় ব্যবহার করতে না পারা বোমাই ফেলে রাখা হচ্ছে? অন্য দিকে আশঙ্কার মেঘ দেখা দিচ্ছে ফলাফল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে। কারণ গত গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচনে দেখা গিয়েছিল ফলাফল ঘোষণার পরেই বোমাবাজি শুরু হয়েছিল বিভিন্ন এলাকায়। যদিও পুলিশের দাবি, কড়া নজরদারি চলার ফলেই এ ভাবে বোমা রেখে আসছে দুষ্কৃতীরা।
মুর্শিদাবাদের ভোট পর্ব নির্বিঘ্নে মিটেছে। রক্তপাতহীন ভোট করার ফলে পুলিশকে বাহবা দিয়েছেন সাধারণ মানুষ। ডোমকলে এমন ভোট করতে পেরে যেমন নিজেদের সাফল্যে খুশি পুলিশ। কিন্তু ভোট পর্ব মিটতেই বিভিন্ন এলাকা থেকে বোমা উদ্ধার হওয়ায় নতুন করে আশঙ্কার মেঘ ঘনীভূত হচ্ছে ডোমকল মহকুমা জুড়ে। দিন দশেক আগে ইসলামপুরের রওশাননগর এলাকায় চারটি বোমা উদ্ধার করে পুলিশ। পরে সেগুলি বম্ব স্কোয়াডের কর্মীরা এসে নিষ্ক্রিয় করেন। বুধবার রাতে ডোমকলের অম্বরপুর এলাকার একটি কাঁঠাল বাগান থেকে গোপনে খবর পেয়ে তিনটে তাজা সকেট বোমা উদ্ধার করে ডোমকল থানার পুলিশ। বৃহস্পতিবার বোম স্কয়াডের কর্মীরা নিষ্ক্রিয় করেন সেই বোমা।
তবে এখানেই শেষ নয়, বৃহস্পতিবার সকালে সীমান্তের সাগরপাড়া থানা এলাকার পোল্লা গাড়ি গ্রামে স্বপন মণ্ডল নামের এক ব্যক্তির উঠোনে পড়ে থাকতে দেখা যায় একটি সকেট বোমা। পরিবারের লোকজন সেই বোমা দেখে আতঙ্কে ঘর ছাড়েন। পরে পুলিশ খবর পেয়ে সেটিকে উদ্ধার করে নিষ্ক্রিয় করে। অমরপুরে বোমা উদ্ধারের ঘটনায় রাজনৈতিক দলগুলি একে অপরের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেও পোল্লা গাড়িতে নির্বিবাদী স্বপনের বাড়িতে কেন বোমা রাখা হল তা বুঝে উঠতে পারছেন না ওই পরিবারের পাশাপাশি প্রতিবেশীরাও। এ ক্ষেত্রেও পুলিশের দাবি, কেউ ওই বাড়ির উঠোনে গোপনে বোমা রেখে চলে গিয়েছে বলেই প্রাথমিক তদন্তে অনুমান। তবে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ডোমকল ও সাগরপাড়া থানার পুলিশ দুটো ঘটনা নিয়েই তদন্ত শুরু করেছে।
রাজনৈতিক মহলের জল্পনা, তা হলে কি কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রায় ফিরে যাওয়ার পরেই দুষ্কৃতীরা আবার মাথা ছাড়া দিচ্ছে? না কি, পুলিশের চাপে পড়েই বিভিন্ন জায়গায় বোমা রেখে আসছে দুষ্কৃতীরা। ডোমকল মহাকুমার সাধারণ মানুষের দাবি, ফল প্রকাশের পরে একটা যে বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে পারে এমন আশঙ্কা তাঁরা করছেন। সেই আশঙ্কায় উভয় রাজনৈতিক দলের নেতারাও।
ডোমকল ব্লক তৃণমূলের সভাপতি হাজিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘বোমার কারবার আমাদের দলের কর্মীরা কখনওই করেন না। সিপিএম-কংগ্রেস জোট এই সব বোমা-গুলির কারবারে জড়িয়ে। পুলিশ তদন্ত করলে সত্য সামনে আসবে।’’ অন্যদিকে ডোমকলের মহকুমা কংগ্রেসের সভাপতি আব্দুর রহমানের বক্তব্য, ‘‘অম্বরপুর এলাকায় তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল চরমে, আর এ সব সেই গোষ্ঠীকোন্দলেরই ফসল।’’
তবে রাজনৈতিক দলের নেতারা যাই বলুক না কেন সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত বোমা উদ্ধারের ঘটনাকে ঘিরে। ডোমকলের বিধায়ক তৃণমূলের জাফিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘কোনও রকম রং-দল না দেখে পুলিশের কাছে অনুরোধ রাখব, দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এবং যেমন নির্বিঘ্নে নির্বাচন হয়েছে, পরে যেন সেই ভাবে মানুষ নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন তার ব্যবস্থা করার জন্য।’’