—প্রতীকী চিত্র।
ভোট পরিচালনায় সহায়ক ছিল সঙ্ঘ। বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের গণনাতেও সঙ্ঘের নজরদারির মধ্যেই থাকবেন বিজেপির কাউন্টিং এজেন্টরা। দলের এজেন্টদের তাঁরা একটাই কথা বার বার বলছেন, ২০২১ সালে বর্ধমান দক্ষিণ-সহ বেশ কয়েকটি বিধানসভায় গণনা কেন্দ্রে শেষ পর্যন্ত না থাকার ফলে তৃণমূল বাড়তি সুবিধা পেয়েছিল। এ বার গণনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত মাটি কামড়ে পড়ে থাকতে হবে। অতিরিক্ত রিটার্নিং অফিসাররে (এআরও) টেবিল ছেড়েও কর্মীরা উঠতে পারবেন না।
সঙ্ঘ থেকে সম্প্রতি বিজেপিতে আসা এক নেতার কথায়, “বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের প্রার্থী দিলীপ ঘোষ সঙ্ঘে সক্রিয় ছিলেন। সঙ্ঘের রিপোর্টে বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনটি ‘এ+’। সেই কারণে এই আসনে বাড়তি নজরদারি থাকছে। গণনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রার্থী ইউআইটি-তে থাকবেন।” শুক্রবার এআরও টেবিলে থাকবেন, এমন কর্মীদের নিয়ে বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভার নির্বাচনী কার্যালয়ে প্রশিক্ষণ শিবিরে হাজির হন বিজেপি প্রার্থী। পরে তিনি গণনা কেন্দ্রের প্রস্তুতি খুঁটিয়ে দেখে সন্তুষ্ট বলে জানান।
ওই লোকসভার সাংগঠনিক জেলার সভাপতি অভিজিৎ তা বলেন, “দু’টি পর্যায়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। একটা ভার্চুয়ালি, আর একটা হাতে কলমে। জ়োনের নেতাদের সঙ্গে সাংগঠনিক জেলার নেতারাও প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন।” বিজেপি সূত্রে জানা যায়, সরাসরি ভোট প্রক্রিয়ার মধ্যে না থেকেও ভোট পরিচালনায় সঙ্ঘ যে ভাবে সাহায্য করে, সে ভাবেই গণনাতেও করছে। কী ভাবে কাউন্টিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে, তা জানাচ্ছে সঙ্ঘ। প্রতিটি লোকসভায় ১৮০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভায় সঙ্ঘের কর্মীদের গণনা কেন্দ্রে রাখার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। তাঁদের সঙ্গে পোড় খাওয়া বিজেপির কর্মীরাও থাকছেন।
মঙ্গলবার ভোট গণনা। রবিবারের মধ্যে সব ধরনের প্রশিক্ষণ শেষ করে দিতে চাইছে বিজেপি। দলের এক নেতার দাবি, “সঙ্ঘ থেকে আসা, নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা নেতাদের এআরও টেবিল সামলানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। একটি ঘরে একজন করে এআরও থাকবেন, তাঁরাই ওই ঘরে ১০টি টেবিলের উপরে নজর রাখবেন। ওই গণনা কেন্দ্রের ঘরে যুবকেরাই থাকবেন।” সঙ্ঘ অবশ্য সরাসরি গণনায় তাদের যোগ স্বীকার করেনি। তারা জানিয়েছে, সঙ্ঘ সামাজিক সংগঠন, রাজনৈতিক কার্যকলাপে তারা যুক্ত থাকে না।
কী পাঠ দেওয়া হচ্ছে এই প্রশিক্ষণে? বিজেপি সূত্রের খবর, গণনা কেন্দ্রের ভিতর ইভিএম, ভিভিপ্যাটের উপরে চোখ রাখতে হবে। কী ভাবে ভোট-অঙ্ক কষতে হবে তার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ভোট গণনার সময় দায়িত্ব এবং কর্তব্য সম্পর্কেও অবগত করা হচ্ছে এজেন্টদের। যতগুলি টেবিলে ইভিএম এবং পোস্টাল ব্যালট গোনা হবে, সেই মতো ভাগ করে খুঁটিনাটি বোঝানো হচ্ছে। আর বার বার সতর্ক করা হচ্ছে, পুরো গণনা প্রক্রিয়া না মেটা পর্যন্ত কোনও ভাবেই গণনাকেন্দ্র ছেড়ে যাওয়া যাবে না।
বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল। দলের নির্বাচনী কমিটির সদস্য দেবু টুডু বলেন, “সঙ্ঘকে সামনে রেখেই তো বিজেপি ভোট করে। বিজেপির সংগঠন দুর্বল। তারা নিশ্চিত হার জেনেই সঙ্ঘকে কাজে লাগাতে চাইছে।” তৃণমূলও এজেন্টদের দু’টি পর্যায়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছে।
দুই শিবিরই মনে করছে, গত বারের মতো এ বারও বর্ধমান-দুর্গাপুরে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। সে জন্য এক-একটি ভোট গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে সবাই। কোনও ভাবেই যাতে একটি ভোটও নষ্ট না হয়, সে দিকে এজেন্টদের নজর রাখতে বলা হয়েছে। কোনও বিষয়ে সন্দেহ হলে ‘চ্যালেঞ্জ’ করতে বলা হয়েছে।