ডেবরায় অমিত শাহ। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।
৬৫ বছর আগের পরিকল্পনা। তবে আজও জল-যন্ত্রণা থেকে ঘাটালবাসীকে মুক্তি দিতে হয়নি ‘ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান’। লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে এ বারেও পক্ষ-প্রতিপক্ষের হাতিয়ার সেই প্রকল্প। তৃণমূল প্রার্থী দেব আর বিজেপি প্রার্থী হিরণের বাগযুদ্ধও চলছে তা নিয়ে। ঘাটালে প্রচারে এসে ‘শর্ত’ বেঁধে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম ও ঘাটাল আসন জিতলে হবে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান। তবে ঘাটালে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের প্রচারে উহ্যই রইল মাস্টার প্ল্যান। দেবকে নিয়েও খরচ করলেন না একটি শব্দও।
বুধবার ঘাটাল লোকসভার অধীন ডেবরা হরিমতি হাইস্কুলের ময়দানে হয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সভা। এক দিনের আয়োজনে হওয়া এই সভায় ছাউনিতে ভিড় থাকলেও মাঠ ভরেনি। কয়েক হাজার মানুষের সামনে বক্তৃতা করেন শাহ। তাঁর বক্তৃতা চলাকালীন মঞ্চে ওঠেন হিরণ। পরে হিরণের সঙ্গে ভোটারদের পরিচয় করিয়ে দেন শাহ। ১৯ মিনিটের সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় ঘাটালবাসীর মন ছুঁতে ঘাটালের বহু মন্দিরের নাম নিয়েছেন। সঙ্গে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, ক্ষুদিরাম বসুর নাম নিয়েছেন। কিন্তু এ দিন ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান নিয়ে কোনও কথা বলেননি। তৃণমূলের প্রার্থী তথা বিদায়ী সাংসদ দেবকে নিয়েও করেননি কোনও মন্তব্য। ঘাটালে বিজেপি সরকার বহু কাজ করেছে দাবি করে অন্য এলাকার খতিয়ান তুলে ধরেন শাহ। বলেন, “বিজেপি ঘাটালে অনেক কাজ করেছে। বারাণসী-রাঁচি-কলকাতা ছয় লেনের এক্সপ্রেসওয়ে ২০২৭-এর মধ্যে চালু হয়ে যাবে। ৪১০ কোটি টাকায় রানিগঞ্জ বাইপাস নির্মান হচ্ছে। রানিগঞ্জ থেকে ডালখোলা অংশের উদ্বোধন হয়ে গিয়েছে। রামনগরে মীরগোড়া নদীর পুল নির্মাণ হয়ে গিয়েছে। কলাইকুণ্ডা ও ঝাড়গ্রামের মধ্যে ৪৩টি ছোট ব্রিজ তৈরির কাজ বিজেপি করেছে।”
১৯৫৯ সালে গঠিত মানসিংহ কমিটির পরিকল্পনায় প্রথম উঠে এসেছিল ‘ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান’। তবে সেই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন আজও অধরা। কেন্দ্র না রাজ্য কার টাকায় ঘাটাল মাস্টাল প্ল্যান হবে, তা নিয়েই চলছে তরজা। গড়ে উঠেছে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান রূপায়ণ সংগ্রাম কমিটি। তবে গত দশ বছর ধরে এলাকার সাংসদ দেব সংসদে বাংলায় ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের কথা তুলে ধরেছেন। তবে সুরাহা হয়নি তাতে। প্রতিদ্বন্দ্বী হিরণ তাই বিঁধছেন। দেব যদিও বলেছেন, “আমি জিতি বা হারি ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান হবে।” এই আবহে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান নিয়ে শাহের মন্তব্য শোনার অপেক্ষায় ছিল ঘাটাল। কিন্তু তিনি হতাশই করেছেন। এ দিন সভায় উপস্থিত বিজেপির ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার এক নেতা বলেন, “আমরাও তো ভেবেছিলাম ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান নিয়ে কিছু বলবেন অমিত শাহজি। বুঝলাম না কেন তিনি বললেন না। হয়তো মনে ছিল না। তবে বিজেপি এখানে জিতলে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান হবে।”
ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান রূপায়ণ সংগ্রাম কমিটির যুগ্ম সম্পাদক নারায়ণ নায়েক বলেন, “হিরণ যেখানে বলছেন তিনি সাংসদ হলে বিজেপি সরকার ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান করবেন, সেখানে বিজেপির সেকেন্ড ইন কমান্ড একটি শব্দ উচ্চারণ করলেন না! তাহলে হিরণের কথায় বিশ্বাস করব কোন ভরসায়।” যদিও এ দিন শাহ দেশের নানা উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরে আগামী দিনে ক্ষমতায় এসে তাঁরা এই বাংলাকে ‘সোনার বাংলা’ করবেন বলে দাবি করেছেন। আর বারবার জানতে চেয়েছেন, “ঘাটালবাসী নরেন্দ্র মোদীকে জেতাবেন তো?”
রাজ্যের মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া পাল্টা বলেন, “বিজেপির প্রার্থী, ওদের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলছেন, ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান হবে। অথচ বিজেপির সেকেন্ড ইন কমান্ড এসে এ নিয়ে কিছু বললেন না। এতেই বোঝা যায় বিজেপির আসল চরিত্র। এদের মনে ঘাটালের মানুষের জন্য কোনও ভালবাসাই নেই।”