—প্রতীকী চিত্র।
ইদ কাটিয়ে ভিন্ রাজ্যে কাজে ফিরতে ট্রেনগুলিতে লাইন পড়েছে পরিযায়ী শ্রমিকদের। তাই কপালে চিন্তার ভাঁজ বেড়েছে সব রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের মধ্যেই। বিশেষ করে তৃণমূল, কংগ্রেস ও সিপিএমের। কারণ শ্রমিকদের মধ্যে এই তিন দলেরই সমর্থকই বেশি।
মুর্শিদাবাদ জেলা জুড়ে পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা ঠিক কত, তার কোনও নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান নেই জেলা প্রশাসনের কাছে। বিভিন্ন দলের প্রাথমিক হিসেব মত, ৭ থেকে ৮ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক দেশের বিভিন্ন রাজ্যে কাজে যান। এর প্রায় ৭৫ শতাংশই নির্মাণ শ্রমিক। বাকিদের মধ্যে কেউ জরি, কেউ সোনার কাজ করেন, কেউ কাশ্মীরের বাগানে কাজ করেন।
সম্প্রতি রাজ্য সরকার জেলা ভিত্তিক যে পরিসংখ্যান দিয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, এ জেলায় নির্মাণ শিল্পে কর্মরত শ্রমিকের সংখ্যা ৫ লক্ষ ৮২ হাজার ৫৬২ জন। পরিবহণ শিল্পে কর্মরত শ্রমিকের সংখ্যা ৪২,৫০২ জন। অন্যান্য পেশায় জড়িত শ্রমিকের সংখ্যা ১০ লক্ষ ৬১ হাজার ৩১ জন। রাজ্য সরকারের পোর্টালে এঁদের সকলের পরিচয় লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে সকলেই ভিন্ রাজ্যে কাজে যান, তা কিন্তু নয়।
৭ মে মুর্শিদাবাদের লোকসভার নির্বাচন রয়েছে দু’টি লোকসভা জঙ্গিপুর ও মুর্শিদাবাদের। ১৪টি বিধানসভা পড়ে এই দুই লোকসভায়। সেই ১৪টির মধ্যেই পড়ে ভগবানগোলা বিধানসভাটিও, যেখানে ৭ মে’তেই রয়েছে উপনির্বাচন। বহরমপুরের নির্বাচন রয়েছে ১৩ মে। এ বারে রোজা শেষে ইদ পড়েছিল ১২ এপ্রিল। ১৭ জুন রয়েছে ইদুজ্জোহা। জেলার মধ্যে ৭ মে যে ১৬টি বিধানসভায় ভোট রয়েছে (ফরাক্কা ও শমসেরগঞ্জ ধরে) পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা সব চেয়ে বেশি সেগুলিতেই। তুলনায় বহরমপুর কেন্দ্রে বাইরে যাওয়া শ্রমিকের সংখ্যা কম।
সাগরদিঘির নেজামুদ্দিন শেখের দুই ছেলেই প্রায় ৪ মাস আগে গিয়েছেন নাগাল্যান্ডের গ্রামে রাজমিস্ত্রির কাজে। নেজামুদ্দিন বলছেন, “এ বারের ইদে এক ছেলে বাড়ি এলেও দিন চারেক থেকেই ফের ফিরে গিয়েছে। ভোট দিতে হলে তিন সপ্তাহ থাকতে হবে। ৮ থেকে ৯ শো টাকা মজুরি সেখানে। সেটা ছেড়ে ভোট দেওয়ার জন্য বাড়িতে থাকার কোনও মানে নেই। তাই চলে গিয়েছে। আবার আসবে ইদুজ্জোহার দিন দুই আগে। গ্রামের পার্টির লোকেরা এসে বলে গিয়েছে ছেলেদের খবর পাঠাতে, যাতে ভোটের আগে গ্রামে এসে যেন ভোটটা দিয়ে যায়। ছেলেরা বলেছে নাগাল্যান্ড থেকে আসতে যেতে ৪ দিন। দেড় হাজার টাকা করে খরচ। আয় বন্ধ রাখা মানে ইদের আগে বিরাট আর্থিক ক্ষতি। তাই আসতে পারবে না।”
সিটুর জেলা সভাপতি জ্যোতিরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এই মুহূর্তে অন্তত জেলার ৪ লক্ষ শ্রমিক বিভিন্ন রাজ্যে। প্রতিদিনই শিয়ালদহ ও হাওড়া দুই রেলপথেই চরম ভিড় হচ্ছে ট্রেনগুলিতে। কাজ বন্ধ করে কী করে চাপ দিই এখানে ভোট দেওয়ার জন্য থেকে যেতে।”
তৃণমূলের জঙ্গিপুরের প্রার্থী খলিলুর রহমানের নির্বাচনী এজেন্ট বিকাশ নন্দ বলছেন, “জঙ্গিপুরেই প্রায় আড়াই থেকে ৩ লক্ষ শ্রমিক বাইরে চলে গিয়েছেন। তাই এ বারে ভোট কম পড়বে। তাতে সব দলেরই কমবেশি ক্ষতি হবে। প্রতিবছর ৮৬-৮৭ শতাংশ ভোট পড়ে। এ বারে ভোটার বেড়ে জঙ্গিপুরে হয়েছে ১৮ লক্ষ। কিন্তু পোলিং ১৪ লক্ষ ছাড়াবে এমনটা মনে হয় না।”
ভগবানগোলা ১ ব্লকের কংগ্রেস সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক বলছেন, “মুর্শিদাবাদ লোকসভাতেই ২ লক্ষের উপর পরিযায়ী শ্রমিক বাড়ি নেই।”