শহর মেদিনীপুরে দেখা গিয়েছে এমনই পোস্টার। নিজস্ব চিত্র।
সামনেই লোকসভা ভোট। ভোটের মুখে শহর, শহরতলির ইতিউতি বেশ কিছু পোস্টারে লেখা, ‘ছাত্র যুব বলছে, বিজেপি এ বার হারছে।’
মেদিনীপুরে এমন পোস্টার দিয়েছে ‘অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস্ অ্যাসোসিয়েশন’ (আইসা)। সিপিআই (এমএল) লিবারেশনের ছাত্র সংগঠন এটি। গেরুয়া শিবিরের অনুযোগ, ওই সংগঠনকে পিছন থেকে মদত দিচ্ছে তৃণমূল। তৃণমূল অবশ্য অভিযোগ উড়িয়ে শোনাচ্ছে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সব দল, সংগঠনেরই রয়েছে।
‘বিজেপিকে একটিও ভোট নয়’— মেদিনীপুরে এমন প্রচার করেছে আম আদমি পার্টিও (আপ)। তবে আইসা-র তেমন সংগঠনই নেই মেদিনীপুরে। তাও ভোটপ্রচারে তারা সক্রিয়! সিপিআই (এমএল) লিবারেশনের জেলা সম্পাদক শৈলেন মাইতির অবশ্য দাবি, ‘‘মেদিনীপুরে আইসা-র ইউনিট রয়েছে।’’ তিনি এ-ও মানছেন, ‘‘আইসা-র ছেলেমেয়েরাই ওই পোস্টারিং করেছে। প্রচারে আমরা মানুষকে বলছি, বিজেপিকে ভোট নয়। বিজেপিকে বাদ দিয়ে যাকে খুশি ভোট দিন।’’ শৈলেন আরও জানান, ‘‘আমরা ইন্ডিয়া জোটের শরিক। শুরুতে থাকলেও পরে কেউ কেউ জোট থেকে বেরিয়ে গিয়েছে ঠিকই, তবে আমরা জোটে আছি।’’ উল্লেখ্য, রাজ্যে পালাবদলের আগে, জঙ্গলমহলে আন্দোলনের সময়ে এই ছাত্র সংগঠন মাঠে ছিল।
আগামী ২৫ মে ভোট মেদিনীপুরে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলির প্রচারে নেমেছে তাদের ছাত্র-যুব সংগঠনও। তৃণমূল প্রার্থী জুন মালিয়ার সমর্থনে প্রচার করছে যুব তৃণমূল, তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পালের সমর্থনে প্রচার করছে বিজেপির যুবমোর্চা, এবিভিপি অর্থাৎ অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ। বাম প্রার্থী বিপ্লব ভট্টের সমর্থনে প্রচার করছে সিপিএম, সিপিআই-সহ বাম দলগুলির ছাত্র-যুব সংগঠনগুলিও। ভোটে তরুণ প্রজন্মকে কাছে টানতে চায় সব রাজনৈতিক দলগুলিই। পশ্চিম মেদিনীপুরের মতো জেলায় তরুণ ভোটারের সংখ্যা কম নয়। ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সি ভোটার রয়েছে প্রায় ৯ লক্ষ ৯৩ হাজার। ২০ থেকে ২১ বছর বয়সি ভোটারের সংখ্যাই প্রায় ৭২ হাজার ৬০০। তাই দলগুলি নিজ নিজ ছাত্র-যুব সংগঠনকেও প্রচারে নামিয়েছে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, দেশে-রাজ্যে নানা ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে। এরমধ্যে অনেক ঘটনাই ঘটে, যা ছাত্র-যুব সমাজকে আলোড়িত করে। ঠিকঠাক প্রচার করতে পারলে সহজেই এই অংশের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করা যায়। আইসা-র দাবি, কেন্দ্রীয় শিক্ষানীতি-সহ শিক্ষায় গৈরিকীকরণের যে আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে নরেন্দ্র মোদী সরকার চলেছে, এ বার ভোটে তার বিরুদ্ধেই রায় দেবে ছাত্রসমাজ। জেলা বিজেপির মুখপাত্র অরূপ দাসের পাল্টা খোঁচা, ‘‘যে সংগঠনের কথা বলছেন, মেদিনীপুরে তাদের কোনও জনভিত্তি নেই। অস্তিত্বও নেই! ফলে, ওরা কী বলল, কী করল, তাতে কিছু এসে যায় না। ওদের আসলে মদত দিচ্ছে তৃণমূলের লোকেরাই।’’
তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক প্রদ্যোত ঘোষ যদিও বলেন, ‘‘ভিত্তিহীন অভিযোগ। তবে এটা সবাই বুঝছেন, বিজেপি ফের ক্ষমতায় আসার অর্থ দেশে স্বৈরতন্ত্র স্থাপন হওয়া। এ বার ভোটে বিজেপির পরাজয় নিশ্চিত।’’