গোপীবল্লভপুরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: দেবরাজ ঘোষ
কেশপুর মানে শাসকের পক্ষে বিরাট জয়ের ব্যবধান। কেশপুর মানেই শাসকের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগে সরব বিরোধীরা। সেই কেশপুরে নির্বাচনী সভা থেকে আবাস প্রকল্পে কেন্দ্রীয় অর্থ বরাদ্দ প্রসঙ্গে বিরোধীদের গাছে বেঁধে রাখার নিদান দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। দলীয় কর্মী, সমর্থকদের প্রতি ভরসা জানিয়ে দিয়ে গেলেন লাখ ভোটের ব্যবধানের লক্ষ্যমাত্রাও।
এমনটা নয় অভিষেক এটা প্রথম বললেন। রবিবার ঝাড়গ্রামের সভাতেও একই কথা বলেছেন তিনি। তবে স্থান মাহাত্ম্যে অভিষেকের মন্তব্যে উস্কানির ইঙ্গিত খুঁজে পাচ্ছেন বিরোধীরা। কারণ, তাদের বক্তব্য, দিনকয়েক আগে তৃণমূল প্রার্থী দেব কেশপুরে এসে জানিয়েছিলেন, কয়েকদিনের মধ্যে কেশপুরে খুন হবে। সেখানে জড়ানো হবে তৃণমূলকে। ১০ থেকে ২০ মে-র মধ্যে সেই ঘটনা ঘটবে বলে জানান দেব। ১৫ মে বিজেপির স্থানীয় মণ্ডল সভাপতি শুভেন্দু সামন্তকে কেশপুরের ঝেঁতলার কুশপাতায় রাস্তায় ফেলে মারধরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের লোকেদের বিরুদ্ধে। দেব সময় দিয়েছিলেন ২০ তারিখের মধ্যে কিছুটা একটা ঘটবে। তার ঠিক একদিন আগে এ দিন কেশপুরের আনন্দপুরে এসেছিলেন অভিষেক। দলীয় প্রার্থী দেবের সমর্থনে জনসভায় অভিষেককে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘বিজেপি প্রচার করতে গিয়ে আপনাদের বলছে, মোদীজি না কি বাড়ির টাকা পাঠিয়েছে, আর তৃণমূল না কি টাকা দেয়নি। আমি বলব যদি বিজেপির কোনও নেতা আপনার কাছে এসে বলে, মোদীজি টাকা পাঠিয়েছে, তাকে গাছে বেঁধে রেখে আমাকে ফোন করবেন। গ্রামে বেঁধে রাখবেন। আমাদের প্রতিনিধিদের জানাবেন। গায়ে হাত দেবেন না। চুপচাপ বেঁধে রাখবেন।’’
কেন তিনি এ কথা বলছেন, তার ব্যাখ্যায় গিয়ে অভিষেককে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘তার কারণ, ২০২১- এ বাংলায় বিজেপি হারার পর ২০১৭- ’১৮ থেকে আবাসের যে তালিকা তৈরি হয়েছে, বিজেপি যদি প্রমাণ করতে পারে, ১০ পয়সা কেন্দ্র সরকার রাজ্যকে দিয়েছে মানুষের ছাদে বা আবাস যোজনায়, আমি তৃণমূলের হয়ে কোনও সভা, সমিতিতে ভোট চাইতে যাব না। রাজনীতিতে পা রাখব না। এত বড় কথা বলে দিয়ে যাচ্ছি। মিথ্যাবাদীর দল এরা।’’ কেশপুরের সভায় অভিষেক গাছে বেঁধে রাখার নিদান দিয়েছেন শুনে বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য তুষার মুখোপাধ্যায়ের খোঁচা, ‘‘সন্ত্রাসের প্ররোচনা দিয়ে গেলেন উনি। আসলে সন্ত্রাস ছাড়া তো ওরা ভোটে জিততে পারবে না।’’
কেশপুর থেকে কত মার্জিনে দেবকে জেতাতে হবে, সেই টার্গেটও বেঁধে দিয়েছেন অভিষেক। তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘২০১৯ সালে আপনারা প্রায় ৯০ হাজারের বেশি ব্যবধানে দেবকে জিতিয়েছিলেন। এ বারে ব্যবধানটা এক লক্ষ করতে হবে।’’ বিজেপি নেতাকর্মীদের কার্যত হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘কেশপুরে সিপিএমের কিছু হার্মাদ বিজেপির জার্সিটা পরে আবার সেই সন্ত্রাসের দিন, কালো দিন ফিরিয়ে আনতে চায়। আপনাদের তালিকা আমার কাছে তৈরি রয়েছে। সাহস ভাল, দু:সাহস ভাল নয়। যে ভাষায় বোঝেন আপনারা, সেই ভাষায় জবাব দেব আমি। এলাকার শান্তি, সম্প্রীতি আমি নষ্ট করতে দেব না। ৪ তারিখের পরে কোন বাবা আপনাদের বাঁচায় দেখব।’’
নাম না করে ঘাটালের বিজেপি প্রার্থী হিরণ চট্টোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করে অভিষেককে বলতে শোনা যায়, ‘‘একদিকে দীপক অধিকারী, আরেকদিকে ওই দু’নম্বরি প্রার্থী। দীপক অধিকারী বছরে তিনটে করে সিনেমা করে। রাজনীতি না করলে তার যায় আসে না। যে বিজেপির প্রার্থী হয়েছে, চার বছরে একটাও সিনেমা পায়নি। কাজ নেই হাতে। পয়সা কামাতে এসেছে।’’ অভিষেক মনে করিয়েছেন, ‘‘আমি যোগাযোগে রয়েছি (কেশপুরে)। সকলের উপর অদৃশ্য চোখ ঘুরে বেড়াচ্ছে।’’
বিজেপির বক্তব্য, কেশপুরে ভোট কেমন হবে তা বোঝাই যাচ্ছে। কারণ, শাসকদলের শীর্ষ নেতা বলছেন, গাছে বাঁধুন, এক লাখের মার্জিন দিন, সকলের উপর অদৃশ্য চোখ ঘুরে বেড়াচ্ছে।