সিহারসোলের সভায়। নিজস্ব চিত্র
‘জিতলেই পালাবেন’, আসানসোলের বিজেপি প্রার্থী সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার রানিগঞ্জের সিহারসোলে আসানসোলে কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী শত্রুঘ্ন সিন্হার সমর্থনে এক জনসভায় এক ধাপ এগিয়ে সুরেন্দ্রকে বিজেপির ‘ঘাড় ধাক্কা’ খাওয়া প্রার্থী আখ্যা দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
২০১৪ লোকসভা ভোটে সুরেন্দ্র দার্জিলিং কেন্দ্র থেকে বিজেপির সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। গত লোকসভা ভোটে বিজেপি তাঁকে বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনে প্রার্থী করেছিল। সেই প্রসঙ্গ তুলে অভিষেকের কটাক্ষ, ‘‘কাকে প্রার্থী করেছে দেখেছেন! দেখুন, প্রথমে ছিল দার্জিলিঙে, তার পরে, পাঁচ মিনিটও দার্জিলিঙে সময় দেয়নি। তাকে বিজেপি ঘাড় ধাক্কা দিয়ে দার্জিলিং থেকে সরিয়ে দিয়েছিল বর্ধমান-দুর্গাপুরে। আড়াই হাজার ভোটের ব্যবধানে জিতেছিলেন। তার পরে, পাঁচ মিনিট সময় কোনও বিধানসভা কেন্দ্রে, বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভার বিস্তীর্ণ কোনও কেন্দ্রে দেননি। আবার ধাক্কা দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে আসানসোলে।’’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘আসানসোল তো বাংলার সীমানা। এ বার ঝেঁটিয়ে বাংলা থেকে বিরোধীদের বিদায় করতে হবে। উচিত শিক্ষা দিতে হবে।’’
সুরেন্দ্রর বক্তব্য, ‘‘বিজেপি সর্বভারতীয় দল। যাঁকে যেখানে দল যোগ্য মনে করে, তাঁকে সেখানে পাঠায়। আমাকে বিজেপি যখন যেখানে দাঁড় করিয়েছে সেখানেই জিতেছি।’’ বিজেপি প্রার্থীর উদ্দেশে অভিষেককে বলতে শোনা যায়, ‘‘আপনি পাঁচ বছর বর্ধমান-দুর্গাপুরের সাংসদ ছিলেন। যদি দেখাতে পারেন, বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের ২০০০টি বুথে পাঁচ বছরে কেন্দ্রের সঙ্গে বৈঠক করে দশটা মানুষের জন্য বাড়তি দশ পয়সা এনেছেন, তৃণমূলের হয়ে ভোট চাইতে যাব না।’’ সুরেন্দ্রর খোঁচা, ‘‘চুরি করবে তোমরা, আর কেন্দ্রকে চিঠি লিখব আমি? সাংসদ হিসেবে আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি।’’
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘গ্যারান্টির’ ফারাক বোঝাতে গিয়ে আসানসোলের প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়র (এখন রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্য) দলবদলের প্রসঙ্গ টানেন অভিষেক। বলেন, ‘‘২০১৪-২২, এই আসানসোল লোকসভায় বিজেপির প্রতিনিধি ছিলেন বাবুল সুপ্রিয়। মোদীজি ২০১৪ সালে আসানসোলের মানুষের কাছে এসে সভা করে বলেছিল, ‘মুঝে বাবুল চাহিয়ে।’ যে বাবলু সুপ্রিয়কে জেতানোর জন্য মোদীজি অনুরোধ করেছিল, ২০২২ সালে সেই বাবুল সুপ্রিয় মোদীর গ্যারান্টিতে বিশ্বাস না করে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্যারান্টিতে বিশ্বাস করে মা-মাটি-মানুষের সরকারে, আমাদের দলে নাম লিখিয়েছেন। এখন তিনি আমাদের রাজ্যের মন্ত্রী।’’
আট বছর আসানসোলে কেন্দ্র বিজেপির দখলে ছিল মনে করিয়ে অভিষেকের অভিযোগ, ‘‘দশ পয়সার বাড়তি উন্নয়ন তারা আসানসোলের জন্য করেনি। ২০২২-এর এপ্রিলে শত্রুঘ্ন সিন্হা জেতার পরে আসানসোলে নতুন করে উন্নয়নের জোয়ার চালু হয়েছে।’’
বিজেপির বিরুদ্ধে বাঙালি আবেগ উস্কে দেওয়ার চেষ্টায় অভিষেক বলেন, ‘‘প্রথমে বাংলা বিদ্বেষীকে প্রার্থী করেছিল। এক জন ভোজপুরী প্রার্থী ছিল। তার পরে তিনি নিজেই বললেন, ‘না আমি বাংলায় যাব না’। যা প্রতিরোধ মানুষ গড়ে তুলেছিল ৪৮ ঘণ্টায়, এমনিতেই লেজ তুলে পাঠিয়েছে।’’ অভিষেকের দাবি, পশ্চিম বর্ধমানে একশো দিনের কাজ প্রকল্পের শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি মেটানোর জন্য ১৮ কোটি টাকা দিয়েছে রাজ্য সরকার। সাড়ে পাঁচ লক্ষের বেশি মহিলাকে লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পে দিয়েছে ৮৩৬ কোটি টাকা। সুরেন্দ্রকে উন্নয়নের পাল্টা খতিয়ান পেশ করতে বলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।
কয়েক দিন আগে আসানসোলে এক সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘কোন ওষুধে’ সুরেন্দ্র গত লোকসভা ভোটে জিতেছিলেন তা তিনি জানেন। তাঁর মন্তব্য ছিল, ‘‘যিনি প্রার্থী হয়েছেন, তিনি যদি এসে একটি প্যাকেট দিয়ে বলেন, ‘আমাকে ভোট দাও’, তা হলে দেবেন না। জিতলেই পালাবে। আর আসবে না।’ সেই সূত্র ধরে অভিষেক বলেন, ‘‘আমি হাতজোড় করে বলব, টাকা নেবেন। এই টাকা আপনাদের। যদি ২০০০ দিতে আসে, ৫০০০ চাইবেন, যদি ৫০০ টাকা দিতে আসে, ২০০০ চাইবেন।’’
অভিষেককে বিজেপির অন্যতম রাজ্য মুখপাত্র লক্ষ্মণ ঘোড়ুইয়ের পাল্টা কটাক্ষ, ‘‘রাজ্যে দুর্নীতি, সন্ত্রাস, তোলাবাজির সরকার চলছে। একাধিক নেতা জেলে আছেন। যিনি এ সব বলছেন, তিনিও অভিযুক্ত। তাঁরও একই অবস্থা হবে। তাই তাঁর বক্তব্যের কী জবাব দেব?’’