মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ফেসবুক থেকে।
মমতা দুর্গার মন্ত্র বলেন। এর পর ইদে কী বলেন, তা-ও বললেন। বড়দিন, সাঁওতাল, লোধা, শবর, মুন্ডাদের কাছে গেলে কী বলেন, তা-ও বললেন। তাঁর কথায়, ‘‘ আকাশের অবস্থা খুব খারাপ। বলি খেলা হবে! সভা শেষে অনুষ্ঠান করে যাই। কিন্তু আজ করছি না। যদি বজ্রপাত হয়। দেব জিতলে কথা দিচ্ছি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করব। কপ্টার দেখার জন্য দাঁড়াবেন না।’’
মমতা বলেন, ‘‘মোদীবাবুদের কোনও গ্যারান্টি নেই। এক বার বলল ১৫ লক্ষ টাকা দেবে। এক পয়সারও গ্যারান্টি নেই। নো গ্যারান্টি, ফোর টোয়েন্টি। এখন বলছে জল দিচ্ছি বিনা পয়সায়। আমরা দিচ্ছি। ওরা না। বিদ্যুৎ, রেশন, গ্যাস সব বলছে দিচ্ছি। কিছু দিচ্ছে না। আমরা দিচ্ছি। গ্যাস বেলুনের থেকেও বড় গ্যাস। মিথ্যাচারী, দুরাচারী। সন্দেশখালির মেয়েদের নিয়ে চক্রান্ত করল। পরের লক্ষ্য দাঙ্গা করার। বলে যাই, মনে রাখবেন, আমরা সবাই মানুষ। মানবিকতার ধর্ম, একসঙ্গে চলা। একসঙ্গে দুর্গাপুজো করব। কালীপুজো, লক্ষ্মীপুজো করব। একসঙ্গে ইদ করব। মাজের থানে যাব। একসঙ্গে সব কাজ করব।’’
মমতা বলেন, ‘‘এটা দিল্লির ভোট। আমরা চাই, আপনাদের একটা ভোটে আমাদের একটা সাংসদ জিতুক। তা হলে একটা একটা যদি সব সাংসদকে জেতাতে পারি, তা হলে দিল্লিতে ইন্ডিয়া জোট যে সরকার গড়বে, আমরা তাদের সাহায্য করব।’’
মমতা জানালেন, ঝড় উঠলে তাঁর কথা বসে শুনতে হবে না। সকলে নিরাপদে চলে যাবেন। তার আগে ক’টা কথা তিনি বলতে চান। গাছের তলায় দাঁড়াতে বারণ করেন।
মমতা বলেন, ‘‘বাঁকুড়ার সেই ঘটনা বলি। একটি পরিবার ছিল। দুই ছিল। কর্নেল। আর্মিতে ছিল। বাড়িতে বেড়াতে এসেছে। সন্ধ্যা ঘনিয়েছে। দেখে বাড়ি অন্ধকার। মা দেখছে একটা ছেলে কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়েছে। মা বুঝতে পারেন, মুন্ডুর অনেকটা কেটে দিয়েছে। ছেলে জল চান। নিয়ে এসে দেখেন, দু’টি ছেলের মুন্ডু আধকাটা।’’
মমতা বলেন, ‘‘যাঁরা বড় বড় কথা বলেন, জানেন, আমরা কী লড়াই করেছি? গড়বেতায় একজন মা কাঁদছেন। দু’টি ছেলে খুন হয়ে গিয়েছেন। বিধবা মা বলছে, দু’টি অস্ত্র চাই। এক হাতে বন্দুক, অন্য হাতে তৃণমূলের পতাকা। যে সিপিএম ছেলেদের খুন করেছে, বদলা নিতে চাই। চমকাইতলায় গাড়ি ভেঙে দেওয়া হয়। সঙ্গে ছিলেন অজিত পাঁজা। তিনি মন্ত্রী। বললাম অজিতদা চলে যান। আমায় গুলি করুন, যত আছে।’’
মমতা বলেন, ‘‘কত কান কেটেছ, চোখ উড়িয়ে নিয়েছ? দেবের এলাকা দাসপুরে গেছিলাম। আামাদের হয়ে দেওয়াল লিখেছিল বলে চোখ উপড়ে নিয়েছিল। কেশপুর? আমি গিয়েছিলাম জলপাইগুড়িতে। একটা স্টেশন উদ্বোধন করতে। কেশপুরে সাত জনকে একসঙ্গে মারল। আমাকে ফোন করল। আপনি না এলে দেহ কবর দেব না। আমি উত্তরবঙ্গ থেকে হাওড়া হয়ে কেশপুরে এলাম। সব জানি।’’
মমতা বলেন, ‘‘আজকের রাজ্যপালের কথা বলব না, রাজ্য আছে, পালের গোদাটা হারিয়ে গিয়েছে।’’ এই প্রসঙ্গে আবার গোপালকৃষ্ণের কথা তোলেন। বলেন, ‘‘ আমি বলব সে দিনের কথা। গোপালকৃষ্ণ গান্ধী এক জন বিরোধী দলনেতাকে দিয়ে আমাকে বার্তা দেন। বললেন, রাতটা সরে যাও। নয়তো যে কোনও সময় তোমাকে পেট্রল বোমা মেরে ওরা মেরে ফেলবে। কারণ, পুলিশ কিছু করতে পারবে না। সিপিএম যা বলে, পুলিশ তা-ই করে। এখন অনেক ভাল আছ তোমরা। পুলিশকে গাল দাও। পুলিশই রক্ষা করে।’’
মমতা বলেন, ‘‘নন্দীগ্রামের সময় বার বার আটকে দেওয়া হয়েছিল রাস্তায়। কোলাঘাটে রাত ২টো পর্যন্ত দাঁড়িয়ে। সিপিএমের হার্মাদ এখন বিজেপির ওস্তাদ। আরও টাকা চায়। প্রোটেকশন চায়। এরা মদ খেয়ে পেট্রল বোমা নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল আমার গাড়ি ঘিরে, যাতে আমি নন্দীগ্রামে যেতে না পারি, আমার উপর অত্যাচার করা হয়। আমি চির দিন কৃতজ্ঞ থাকব একটি মানুষের কাছে। মানুষটি হলেন গোপালকৃষ্ণ গান্ধী। তিনি এক জন বিশিষ্ট মানুষ।’’
মমতা বলেন, ‘‘আগে কেন বার বার পাশকুঁড়া আসতাম জানেন? আপনাদের মসজিদ, যেটা রাস্তার উপর ছিল, রাস্তা চওড়া ছিল না, দু’পাশে অনেক দোকান ছিল, বাড়ি ছিল। আসলে এক বার দাঁড়াতেই হত। মেদিনীপুর ঢুকলেই দাঁড়াতে হত।’’ তুলে ধরলেন অনেক স্মৃতি। এক জনের মা তাঁকে কাজুবাদাম ভেজে খাওয়াতেন। অসিত, নন্দ সাহায্য করেছেন। তেলেভাজা খেতে ভালবাসতেন। এখন খাওয়া হয় না, আক্ষেপ মমতার।
মমতা বলেন, ‘‘নন্দ, অসিত, ভাবছেন আজকের লোক ওঁরা? আমি যবে থেকে ছাত্র রাজনীতি করছি, তবে থেকে আছেন ওঁরা। অজিত মাইতি, জায়দুল ভাই, রেগে আছি তবু ক্ষমা করে দিলাম সোমেন কুমার মহাপাত্রকে। ওঁরা সকলে রয়েছেন।’’
মমতা বলেন, ‘‘আমাদের বিধায়ক ফিরোজা বিবি বয়স্ক। কিন্তু নন্দীগ্রামের শহিদের মা। তাই শহিদের মা হিসাবে শহিদ সম্মান দেওয়ার জন্য পাশকুড়ার মানুষ ওঁর নাম প্রস্তাব করেছে। তাই তিনি জিতেছেন। তিনি হয়তো সব সময় আসতে পারেন না। বয়সের ভারে। কিন্তু আমরা ওঁকে শহিদের মা হিসাবে সম্মান করি। দেবকে বলব, যেমন ঘাটালে খুব যায়, জেবরা, কেশপুরে যায়, এ বার থেকে দেবকে বলব, ফিরোজাকে সাহায্য করার জন্য এখানে একটু বেশি সময় দিতে।’’