কোচবিহারের মঞ্চে নরেন্দ্র মোদী। ছবি: ভিডিয়ো থেকে।
কোচবিহারের সভা থেকে জনগণকে মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে সমর্থন জানাতে বলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। নিশীথ প্রামাণিক এবং মনোজ টিগ্গার জন্য ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
‘‘বাংলায় আমরা অনেক টাকা পাঠিয়েছি। এখানকার সরকারের বাধায় অনেক কাজ আটকে গিয়েছে।’’ কোচবিহারের সভা থেকে এমনটাই জানালেন মোদী। উল্লেখ্য, বিভিন্ন প্রকল্পে কেন্দ্রের বঞ্চনাকে এ বারের ভোটে বিজেপির বিরুদ্ধে অন্যতম ইস্যু করেছে তৃণমূল। কোচবিহারে সেই অভিযোগের বিরোধিতা করলেন মোদী।
মোদী বলেন, ‘‘বাংলার জন্য যা উন্নয়নমূলক প্রকল্প নিয়ে আসি, তৃণমূল সরকার চালু করতে দেয় না। ‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্প এখানে চালু করতে দেয়নি মমতার সরকার। এখান থেকে কেউ কোনও কাজে বাইরের রাজ্যে গেলে চিকিৎসার খাতে ওই প্রকল্পে টাকা পেতেন মানুষ। তৃণমূল সরকার এটা করতে দেয়নি।’’
বিরোধী জোটকে খোঁচা দিয়ে মোদী বলেন, ‘‘বিরোধীদের রাজনীতি শুধু অপপ্রচারের উপরেই টিকে আছে। ‘ইন্ডিয়া’ মিথ্যাচার। তৃণমূল, বাম, কংগ্রেস এখানে নিজেদের মধ্যে লড়ছে। দিল্লিতে এক থালিতে খায়।’’ তৃণমূল নেতাদের দুর্নীতি প্রসঙ্গেও আক্রমণ করেন মোদী। বাংলার মানুষের টাকা নিয়ে তাঁরা দুর্নীতি করেছেন বলে অভিযোগ। তাঁর কথায়, ‘‘আমি বলি, ভ্রষ্টাচার হাটাও, ওরা বলে ভ্রষ্টাচার বাঁচাও। কিন্তু মোদী দুর্নীতিগ্রস্তদের সাজা দেবেই।’’
সিএএ নিয়ে বাংলার মানুষকে আশ্বস্ত করে মোদী বলেন, ‘‘বিজেপি সরকার সিএএ নিয়ে এসেছে। প্রতি পরিবারকে নাগরিকত্ব দেওয়া মোদীর গ্যারান্টি। বাংলার প্রতি পরিবারকে বলব, তৃণমূল, বামেরা আপনাদের ভয় দেখাতে পারে। কিন্তু আপনারা ১০ বছর আমার কাজ দেখেছেন। মোদীর গ্যারান্টির উপর ভরসা রাখুন।’’
বাংলার ৩ কোটি মহিলাকে ‘লাখপতি দিদি’ বানাবে মোদীর সরকার। এমনটাই জানালেন মোদী। তিনি বলেন, ‘‘আমরা লাখপতি বানাব তিন কোটি মহিলাকে। ওঁদের ড্রোন পাইলট বানাব। এতে ‘আত্মনির্ভর ভারত’ প্রকল্পে গতি আসবে। কোচবিহার, আলিপুরদুয়ারে অন্তত সম্ভাবনা রয়েছে। বিজেপি এখানে তাই বিকাশের জন্য নিরন্তর কাজ করে চলেছে।’’
সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে বাংলার সরকারকে আক্রমণ করলেন মোদী। তাঁর হুঁশিয়ারি, সন্দেশখালির ঘটনার জন্য দায়ী একমাত্র তৃণমূল। এর জন্য তৃণমূলকে ভুগতে হবে।
গত ১০ বছরে দেশে যে উন্নয়ন হয়েছে, তা শুধু ‘ট্রেলার’, আরও কাজ বাকি আছে বলে জানালেন মোদী। তাঁর কথায়, ‘‘বাংলার ৪০ লক্ষ পরিবার বাড়ি পেয়েছে। কোটি কোটি মানুষ প্রথম বার শৌচালয়, বিদ্যুৎ, জলের সংযোগ পেয়েছেন। কৃষকদের অ্যাকাউন্টে সরাসরি আমরা টাকা পাঠিয়েছি। কারণ এটা মোদীর গ্যারান্টি ছিল। ১০ বছরে যে বিকাশ হয়েছে, তা দেশের সর্বত্র হয়েছে। ১০ বছরে যা হয়েছে, তা শুধু ‘ট্রেলার’। আরও অনেক কাজ বাকি। লোকে বলে আমার কোনও পরিবার নেই। আমার কাছে দেশই পরিবার।’’
মোদী বলেন, ‘‘১০ বছরে ২৫ কোটি মানুষকে দারিদ্র্য থেকে বার করেছে বিজেপি সরকার। আমাদের উদ্দেশ্য সফল হয়েছে কারণ আমাদের উদ্দেশ্য সৎ। তাই আমরা দেশের উন্নতি করতে পেরেছি। যেখানে বাকি সকলের আশা শেষ হয়, সেখান থেকে ‘মোদী কি গ্যারান্টি’ শুরু হয়।’’
কোচবিহার থেকে মোদী বলেন, ‘‘দেশকে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম আর্থিক শক্তি হিসাবে গড়ে তুলতে হবে। তার জন্য কেন্দ্রে শক্তিশালী সরকার প্রয়োজন। দুর্বল সরকারে কাজ হবে না। শক্তিশালী সরকার দেয় একমাত্র মোদী। মোদী ভারতের জনগণের সামান্য সেবক। ১৪০ কোটি জনগণের স্বপ্ন পূরণ করতে হবে মোদীকে। তাই ‘মোদী কা গ্যারান্টি’-র উপর ভরসা রাখুন।’’
ভাষণের শুরুতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান মোদী। বলেন, ‘‘আগের বার আমি এখানে যখন সভা করতে এসেছিলেন, মাঠের মাঝে মঞ্চ বানিয়ে উনি ময়দান ছোট করে দিয়েছিলেন। এ বার তেমন কিছু করেননি।’’
কোচবিহারের মঞ্চে মোদীকে দোতারা উপহার দেওয়া হয়েছে। মঞ্চে সেই বাদ্যযন্ত্র হাতে নিয়ে তিনি বাজিয়েওছেন।
মোদীর হাতে দোতারা। ছবি: ভিডিয়ো থেকে।
কোচবিহার বিমানবন্দর থেকে রাসমেলা ময়দানে পৌঁছেছেন মোদী। দলীয় কর্মী-সমর্থকদের জয়ধ্বনির মাঝে মঞ্চে উঠে পড়েছেন তিনি। কিছু ক্ষণ পর ভাষণ দেবেন।
কোচবিহারের বিদায়ী সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিককেই এ বারও ওই কেন্দ্রের প্রার্থী করেছে বিজেপি। বৃহস্পতিবার তাঁর সমর্থনে সভা করছেন মোদী। ২০১৯ সালে তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দিয়েই টিকিট পেয়েছিলেন নিশীথ। ৫৪ হাজার ভোটে তিনি পরাজিত করেন তৃণমূল প্রার্থী পরেশচন্দ্র অধিকারীকে। ২০২১ সালে রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের পর নিশীথকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় জায়গা দেয় বিজেপি।
একই দিনে উত্তরবঙ্গে আরও একটি সভা রয়েছে মমতার। জলপাইগুড়ির মাল আদর্শ বিদ্যাভবনের মাঠে দ্বিতীয় সভাটি করেন তিনি। সেখান থেকেও প্রধানমন্ত্রী এবং কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দলকে আক্রমণ করেছেন।
মোদীর সভার কয়েক ঘণ্টা আগে কোচবিহারে সভা করে গিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একাধিক ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী আক্রমণ করেছেন তিনি। বাংলার বিভিন্ন প্রচারে কেন্দ্রীয় বঞ্চনা থেকে শুরু করে ইডি, সিবিআই দিয়ে বিরোধী নেতাদের হেনস্থা, বাংলা ভাষার স্বল্প ব্যবহার ইত্যাদি প্রসঙ্গ মমতার ভাষণে উঠে এসেছিল।
কোচবিহারে সভার আগে বাংলার জন্য বার্তা দিয়েছেন মোদী। এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, ‘‘আমি কোচবিহারের জনসাধারণের মাঝে আসার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে আছি। কোচবিহারের মানুষ আমাদের উন্নয়ন এবং কর্মসূচিকে বিরাট ভাবে সমর্থন করছেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ওঁরা আবার বিজেপির প্রতি আস্থা বজায় রাখবেন।’’